দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : করোনার ভয়াবহতায় গত দুই বছর ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ ছিল কম। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় নাড়ির টানে বাড়ি ফিরবে সাধারণ মানুষ। এতে সড়কে পড়বে দ্বিগুণ চাপ। এ অবস্থায় দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও বাড়বে যানবাহনের চাপ। সংস্কার কাজ, হাইওয়ে পুলিশের লোকবল সংকট, এক লেনে যানচলাচল এবং সর্বোপরি সড়কে গণপরিবহনের চাপে ঈদযাত্রায় যানজট ও ভোগান্তি হবে সঙ্গী। এমন শঙ্কাই করছেন যাত্রী, চালক ও মালিকরা। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারোপাড়া ও হাসানপুর এলাকায় ঢাকামুখী লেনের সংস্কারকাজ চলছে। এই সংস্কার কাজের কারণে চার লেনের মহাসড়কটি এক পাশের প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার জুড়ে বন্ধ। দুই লেনেই চলছে চার লেনের গাড়ি। যেকারণে যানজটের আশঙ্কা করছেন চালক ও যাত্রীরা। এছাড়া এবার যানজট সৃষ্টি হওয়ার রয়েছে আরও বিভিন্ন কারণ। যাত্রী সাধারণের প্রত্যাশা প্রশাসন মাঠে পুরোদমে কাজ করলে যানজটের ভোান্তি অনেকটাই লাঘব হবে। সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার মাধাইয়া থেকে দাউদকান্দির শহিদনগর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার জুড়ে সবচেয়ে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও মাঝে মধ্যে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্তও এই যানজট চলে আসে।
যেসব কারণে যানজটের শঙ্কা
তিশা পরিবহনের বাসচালক আজিজ হোসেন বলেন, আমরা স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চালাই। যখন উল্টো দিক থেকে ভিআইপি গাড়ি বা কোনও মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুল্যান্স আসে তখন জট লাগে। এছাড়া সড়কে থ্রি-হুইলারের কারণেও ধীরে চালাতে হয়। আবার কোনও দুর্ঘটনা হলে যানজট হয়। দুর্ঘটনা হওয়ার ঘণ্টা খানেক পার হলেও অনেকসময় পুলিশকে দেখা যায় না। যে কারণে যানজট দীর্ঘ হয়, সমস্যা ও ভোগান্তি বাড়ে। চান্দিনা এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন ব্যবসার কাজে সপ্তাহে অন্তত দুইবার ঢাকায় যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, সড়কের সংস্কার কাজ করার সময় একপাশ দিয়ে গাড়ি চলে অন্যপাশ বন্ধ থাকে। তখন কিছুক্ষণ ঢাকামুখী গাড়ি পার হয়। কিছুক্ষণ কুমিল্লামুখী গাড়ি পার হয়। যে কারণে লম্বা জট সৃষ্টি হয়। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি জহিরুল হক বলেন, দাউদকান্দি পুরো এলাকা যানজটপ্রবণ। এদিকে হুট করে উল্টো দিক থেকে একটা গাড়ি ঢুকে গেলেই জট লেগে যায়। পুরো এলাকায় তাই আমাদের নজর রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের সেরকম জনবল নেই। তাই পুরো এলাকায় আমাদের ছোটাছুটি করতে হয়। একদিকে গেলে অন্যদিকে জট লেগে যায়। তিনি আরও বলেন, যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তখনই বড় যানজট হয়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ করতে করতে সময় বেশি লেগে যায়। এরই মধ্যে ভয়াবহ জটলার সৃষ্টি হয়। তাই জনবল বেশি থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক রেসপন্স করতে পারতাম। আর জটলা লাগার আগেই উদ্ধার কাজ শেষ করে ফেলতাম। এছাড়াও সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সংস্কার কাজের জন্য রাস্তার এক পাশের এক কিলোমিটার বন্ধ থাকে। এ কারণে একপাশ একপাশ করে ছাড়তে হয়। তখনই বেশি জটলা হয়ে যায়।
সমাধানের উদ্যোগ
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি জহিরুল হক বলেন, করোনার কারণে গত দু'বছর তেমন যানজট ছিল না। কিন্তু এ বছর যানবাহনের চাপ একটু বেশি থাকবে। এ কারণে আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে তাই হাইওয়ে পুলিশ সুপারকে বলেছি যেন আমাদের আরও জনবল বাড়িয়ে দেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও আমাদের তিনটি টহল টিম দিন রাত মাঠে থাকবে। ঈদ উপলক্ষে আমরা দুটি কন্ট্রোলরুম বাড়িয়েছি। একটি গৌরিপুর এলাকায় আরেকটি বলদাখাল এলাকায়। গৌরিপুরের কন্ট্রোলরুম ইতোমধ্যে কাজ করছে। আর বলদাখালেরটি ২০ রমজানের পর কাজ শুরু করবে। ওসি আরও বলেন, আমরা টোল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুই বার আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি তাদের আটটি বুথের সবগুলোতে যেন টোল সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও সার্ভার সার্বক্ষণিক সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি টোল প্লাজায় জট না লাগে, তাহলে আশা করছি একটু চাপ থাকলেও যানজট হবে না। তিনি বলেন, যানজট নিরসনে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমরা বলেছি ২৫ রমজানেই যেন সংস্কার কাজ ক্লোজ করে দেওয়া হয়। এই সময়টাতে যেন একটি লেন পুরোপুরি বন্ধ না করে অন্তত একটি গাড়ি করে যাওয়ার জায়গা ছেড়ে দেয়। এতে কোনও সমস্যা হলে হাইওয়ে পুলিশ সাহায্য করবে। বাস মালিক সমিতির কুমিল্লা জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, এখনও যাত্রীর চাপ বাড়েনি। স্কুল-কলেজ ও সরকারি অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করলেই যাত্রীর চাপ বাড়বে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের কোনও এলাকা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা নেই। শুধু দাউদকান্দির শহীদনগর, ইলিয়টগঞ্জ, টোলপ্লাজা, গৌরিপুর এলাকা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা। এখানটায় এখন সংস্কার কাজ না করতে আমরা অনুরোধ করেছি। আমরা আশা করছি কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলে এবং হাইওয়ে পুলিশ সম্পূর্ণভাবে মাঠে কাজ করলে যানজটের ভোগান্তি থাকবে না। সড়ক ও জনপদ (সওজ) এর কুমিল্লা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। যখনই দেখবো মানুষ ভোগান্তিতে আছে, আমরা কাজ বন্ধ করে দেবো। আমাদেরও কাজ তাড়াহুড়ো করে করতে হচ্ছে, কেননা সামনে বর্ষা মৌসুম। ওই সময় বৃষ্টিতে কাজের মান ভালো হবে না। আমাদের সংস্কার কাজের জন্য আশাকরি কোথাও জট লাগবে না।
দেশকন্ঠ/অআ