দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : রাজধানীর সায়েন্সল্যাবের বায়তুল মামুর মসজিদ মার্কেট এলাকার একটি দোকান থেকে আটটি পাঞ্জাবি নিয়ে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না করলেও সিসিটিভির ফুটেজে তার প্রমাণ মিলেছে। দোকান মালিকও সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুদিনের সংঘর্ষ শেষে গত ২০ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা এমন ঘটনা ঘটান। দোকানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, আট শিক্ষার্থী দোকানে ঢোকেন। তারা কোনো টাকা না দিয়ে আটটি পাঞ্জাবি নিয়ে যান। টাকা না দেওয়ার কারণ জানতে চান দোকানের কর্মচারীরা। জবাবে তারা ‘আসছি’ বলে চলে যান। আর আসেননি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের একজন মোহাম্মদ আলী। তিনি ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র। থাকেন আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস হলে। মোহাম্মদ আলী দাবি করেন, আগে নেওয়া পাঞ্জাবি তিনি পরিবর্তন করতে গিয়েছিলেন। তবে স্বীকার করেছেন তার সঙ্গে থাকা একজন একটি পাঞ্জাবি নিয়ে এলেও পরে তা ফেরত দেন এবং দোকানদারকে সরি বলেন।
ফুটেজে আরও দেখা যায়, লাল টি-শার্ট পরা যুবকের নাম শাহরিয়ার হাসনাত জিওন। থাকেন ঢাকা কলেজের নর্থ হলে। তার পাশে থাকা যুবকের নাম হৃদয়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমরা ভুলে পাঞ্জাবি নিয়ে আসছি। ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যার মধ্যে দোকানে গিয়ে পাঞ্জাবি ফেরত দিয়ে আসবো। মোহাম্মদ আলীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আটজনের মধ্যে একজনের নাম রফিকুল ইসলাম, দুজনের নাম হৃদয়। একজন প্রীতম হৃদয়, অন্যজন মোহসীন উদ্দিন হৃদয়। তারা সবাই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, তাদের পদ্ধতিগুলো সুন্দর। দোকানে এসে জিনিস নিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে যান, বাকিটা পরে দিয়ে যাবেন বলে চলে যান। থানায় গেলেই যে প্রতিকার পাওয়া যায় বিষয়টি সেরকম নয়। ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুস কুদ্দুস সিক্কার বলেন, এ ধরনের ঢালাও অভিযোগ আমরা চাই না। কিন্তু যদি কেউ জড়িত থাকে এবং যদি প্রমাণ থাকে তাহলে আইনগতভাবে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এতে আমরা কোনো আপত্তি করবো না। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দোকান মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ করা না হলেও তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। গত ১৮ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধ শতাধিক আহত হন। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের একজন ডেলিভারিম্যান, অন্যজন দোকান কর্মচারী।
সংঘর্ষের সূত্রপাত নিউমার্কেটের ভেতরে থাকা ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের দুই দোকান কর্মচারীর দ্বন্দ্ব থেকে। সেই দোকান দুটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ রয়েছে। তবে কোনো দোকানই নিজে চালাতেন না মকবুল। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়েছেন দোকান দুটি। রফিকুল ও শহিদুল আবার পরস্পর আত্মীয়। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। একটি মামলা বিস্ফোরক আইনে এবং অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা হয়। দুই মামলাতে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামাদের। এই তিন মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ জনকে। তবে তিনটি মামলার মধ্যে শুধু একটিতেই বিএনপি নেতা মকবুলসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই মামলার বাদী পুলিশ। মকবুল হোসেন ছাড়া মামলায় আর যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল।
দেশকন্ঠ/অআ