• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৮:২১

অনিয়মই যখন প্রসিডিউর

 অনিরুদ্ধ ব্রতচারী
 
জীব হিসেবে আমাদের জিবায়ু বেড়েছে। ১৯৭১ সালে আগে এবং পরবর্তীতে গড় গড় আয়ু ২৭-৪০ বছর ছিল, এরপর এখন ৭২ বছর হয়েছে। মানে খাদ্য পুষ্টিমান বৃদ্ধি করতে এবং চিকিৎসাসেবা দিতে পারছি। এভাবে জীবনকে শক্ত করেছি; কিন্তু বুদ্ধি এখনও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারিনি। দেহ থেকে যেমন রোগ ব্যাধি দূর করতে পেরেছি (নইলে জীবায়ু বৃদ্ধি পেত না)। কিন্তু বুদ্ধির ভিতরে তথা মগজ ও মননে যে রোগ ব্যাধি আছে সেগুলো দূর করতে পারছি না। এমন কী বিলেত থেকে বিদ্যাশিক্ষা করে এনেও পারছি না। ধর্মীয় ওয়াজ নসীহত দিয়েও হচ্ছে না। এটা না করতে পারলে দুঃখ যাবে না। এটা দূর করার উপায় সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিকঠাক কাজে লাগানো (সামাজিক প্রতিষ্ঠান হলো শিক্ষালয়, ক্লাব, সমিতি এবং পরিবার)। 
 
আমাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য আমরা জানি পারস্পরিক অবিশ্বাস প্রবল। অবিশ্বাসের কারণ পরস্পরকে ঠকানো এবং প্রতারণা করা। পিতা পুত্র, ভাই বোনকে, আত্মীয় শরিক, আত্মীয়, অনাত্মীয় - সবাই যেন কে কাকে ঠকাবে সে প্রতিযোগিতা করে। এই প্রতিযোগিতা এখন স্বাভাবিক হয়েছে, কারণ আমরা সামাজিকভাবেও মেনে নিয়েছি। ওদিকে এসবের বিরুদ্ধে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে অদ্যাবধি নানান আইন আদালত থাকলেও কাজে লাগার মত কাজে লাগেনি সেটা প্রমাণিত। কেননা এসব শাস্তি দিয়েও দূর করতে পারে নি এই বাংলায়। থাকার কারণ হলো পোষক হিসেবে আমরা অতি উত্তম, আমরা শিক্ষিত-অশিক্ষিত ধার্মিক-অধার্মিক; সবাই এসবকে লালন করি স্রেফ পাবার আশায়। পেয়েও যাই মানে অপরাধ করলেও শাস্তি নেই। সমাজ তো মহাসমারোহে গ্রহণ করে। 
 
যে সমাজ অপরাধকে বা অপরাধের ফলকে সানন্দে গ্রহণ করে সেখান থেকে সে অপরাধ দূর করা যায় না। একইভাবে সে সমাজ যদি কোন দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সমাজ হয় এবং সেখানে অনিয়ম, মিথ্যাচার, প্রতারণা, শঠতা, দালালি, দুর্নীতি ইত্যাদি খারাপ কর্মগুলো লালন করে তাহলে সে দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের সেগুলো কালচার হয়ে যায় বা গেছে এবং সেগুলো সেবা প্রত্যাশীরা অনিচ্ছা সত্বেও মেনে নিতে বাধ্য হয়। ফলে সমাজে বিধে যাওয়া অনিয়ম আর দূর করা যায় না। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের আগেও এই দপ্তর ছিল, এই দপ্তর ছাড়াও বিশেষ করে প্রায় সব আইন বিধি বিধান নিয়ম কানুনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিধান ও শাস্তি লেখা আছে। তবু কি দুর্নীতি হয়নি? দুদক নতুন ফরমেটে অধিক ক্ষমতাবান হয়ে কাজ করলেও কি দুর্নীতি রোধ হয়েছে, এমনকি খোদ দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তার দুর্নীতির বিচার হচ্ছে।  পি কে হালদার এর মত দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এরকম আনাচে কানাচে ঘটছে, সমাজে , প্রতিষ্ঠানে ঘটছে। ব্যবসায়ীরা আমদানি রপ্তানি করতে বন্দরের কাহিনী কুকীর্তি ইত্যাদি সকলেই অবগত- দুদক থেকেও পারছে না। কারণ দুদক বন্দরে উপস্থিত থাকে না, দেখেনা স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিউর অনুযায়ী কাজ করছে কি না। বন্দর দিয়ে জীবন বাঁচার , ধারণ করবার সকল কিছুই আমদানি রপ্তানি হয় এর প্রভাব আমাদের জীবনে পরে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে। বন্দর কেন যে কোন ক্ষেত্রে  দুদক কেবল টাকার অনিয়মের গন্ধ পেলে সেখানে যায় ব্যাপারটা এমন হয়েছে। তারও আগে প্রতিষ্ঠানের স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্রসিডিউর, সেবা দেবার প্রসিডিউর ফলো করছে কি না সেটা দেখলেই ভালো করত, কেননা প্রসিডিউর তো নীতি, সেটার অপপ্রয়োগ দুর্নীতি। যেমন পাসপোর্টকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। পাসপোর্ট এর কাজ যেখানে আছে সেখানেই দুর্নীতি নমুনা খুঁজে পাওয়া যাবে। পাসপোর্টের আবেদন থেকে সার্ভিস প্রসিডেউরের কাঠিন্য, নানা ধরনের প্যাঁচ, ফাঁক-ফোকর দূর না করলে এর কাজ দুনিয়ার যেখানেই করা হোক বা হচ্ছে সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে! যেমন পাসপোর্ট আবেদন ফরম অত্যন্ত জটিল ও বিরক্তিকর যে শিক্ষিত লোকেরও ভুল হয়ে যেতে পারে। বাধ্য হয়েই দালাল ধরে পূরণ করতে হয়। দাবী উঠেছে এ ফরমটি সহজ করার। পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে নানান কিচ্ছা-কাহিনী অনেকেরই জানা। অনেক দেশে আবেদন করার দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট প্রিন্ট করে নাগরিকের হাতে দিয়ে দেয়! আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো কোন কিছুতে আবেদন করলে কাগজ ছবি সত্যায়িত করে দেবার নির্দেশনা থাকে। এমনও দেখা গেছে খোদ আবেদনকারী নিজেই সামনে উপস্থিত থেকে প্রমাণ করছে যে এই ছবি তারই তবু বলা হয়, আপনার ছবি সত্যায়িত নেই। তাই বাতিল! এ ধরনের অনেক তথাকথিত পদ্ধতি রয়েছে যা এমনই অপ্রাসঙ্গিক ও বিরক্তিকর যে অনিয়মের জন্ম দেয়। এসব দূর করতে হবে। এগুলো দূর করতে কোনো প্রতিষ্ঠান লাগে না। 
 
আরেকটি প্রবণতা রয়েছে যে যারা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নিয়ম কানুন মেনে নেয় তারা প্রতারিত হয়। আর যারা নিয়মের বাইরে থাকে তারা লাভবান হয়। লাভবান হবার বিকল্প পদ্ধতি প্রতিষ্ঠান নিজেই তৈরি করে সেখানে নিয়ম মানা নাগরিক প্রতারিত হয়। সেখানে যাবার আগে ধরেই নিতে হয় কাজ হবে না। আমরা একটা প্রবাদকে আদর্শ করেছি আমাদের জীবনে যে - সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠে না, তাই অনিয়ম, তদবির, উচ্চতর প্রেসার, মামা-দুলাভাই ইত্যাদির ক্ষমতা প্রয়োগ প্রসিডিউর স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে মেনে নিয়েছি। আসলে আমাদের কোন কাজ বা সেবার কোন স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিউর তৈরি করা হয় না। কোথাও প্রচার করা হয় না ফলে সে কাজ বা সেবা কর্তায় যেভাবে চায় সেভাবেই হয়, ঝামেলা হয় ইত্যাদি তারপর কিছু একটা হয়। তারপর লক্কর ঝক্কর ভাবে চলে তো চলে নাগরিক বিরক্ত হলেও চলে। 
 
২০০৮/ ২০০৯ সালের দিকে সিটিজেন চার্টার প্রদর্শন তথা কোন কাজ কে করে কতদিন কোন সেবা পেতে লাগে এসব বিশাল সাইনবোর্ড করে প্রদর্শন করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। পরে শুদ্ধাচার হিসেবে যোগ হয়েছে। কিন্তু আচার যেমন বয়ামে থাকে আর সে বয়াম দেখা যায় না তো আচার কোথায় অবস্থা হয়েছে। প্রথম দিকে নানান শব্দমালার বিশাল সাইন বোর্ডে লেখা সিটিজেন চার্টার দেখতে সামনে দাঁড়ালে কিছুই দেখা যায় না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে হয় এবং পড়তে অনেক সময় লাগে তো সেটা পড়ার জন্য সেবাপ্রত্যাশীরা কি মিনিটের পর মিনিট পার করবে, নাকী সেবা নিবে। ধরুন একজন দুজন পড়ছে এভাবে জমতে থাকলে সেখানে জটলা হবে। তারপরও দপ্তর যদি কড়া গলায় বলে যান দেখেন সিটিজেন চার্টার এ সব লেখা আছে। পড়েন; বোঝেন। তাহলে তো সেখানেই জটলা লেগে যায়। ভালো করে সেবাপ্রত্যাশীকে বললে নিশ্চিত শোনে। এই সংখ্যা বেশি । কিন্তু কিছু লোক আছে যারা নিয়মকে ভাঙার জন্য প্ররোচিত করে এবং ভেঙে ফেলে। এই নিয়ম ভাংগতে প্ররোচিত করা যাবে না; করলে অপরাধ হবে এর কোন বিধান সরকারি কর্মচারী আইনে নেই (যদিও এর জন্ম এই ডিজিটাল সময়ে) থাকলে দপ্তরের ভালো কর্মচারীরা শক্তি পেত। কিন্তু সরকারি কর্মচারী আইন যেন করা হয়েছে সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করে লাভ বা শক্তি বলে প্রভাবিত করা যাবে এবং প্রভাবিত না হলে সে শাস্তি পেতে পারে । যারা প্ররোচিত করে লোভ দেখায়, বল প্রয়োগ করে তারা তখন নানান রকম ফন্দি ফিকির করে সে ভালো কর্মচারীকে অপরাধী প্রমাণ করতে পারবে সেটা আইনে আছে। ভালো কর্মচারীদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনটি সংশোধন করা যায় কানাডায় সে রকম আইন আছে।
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।