দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম হাত ঘুরানোর সুযোগ পেলেন মাহমুদুল হাসান জয়। ঠিকঠাক প্রথম বলটা করলেন অফস্পিনার। দেখেশুনে খেলেছেন নিরোশান ডিকবেলা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার বোলিংয়ে এসে এক বলেই শেষ তার স্পেল! দ্বিতীয় বলের আগে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রত্যাশিত ফল ড্র মেনে নেন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। ডিকবেলার দেওয়া ড্রয়ের প্রস্তাবে মাঠে থাকা মুমিনুল সাড়া দেওয়ায় ৪৯ মিনিট আগে শেষ চট্টগ্রাম টেস্ট। তখন মিড অনে ফিল্ডিংয়ে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তামিম ইকবাল কভারে। আম্পায়ার স্টাম্প নিচে ফেলার পর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরেন কিছুক্ষণের জন্য। কয়েক সেকেন্ডের আলাপও হয়ে যায়। এই টেস্টের আগে দুজন ৫ হাজার রানের লড়াইয়ে ছিলেন। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা তামিম ১৩৩ রান তুলে ১৯ রানে জন্য এই ল্যান্ডমার্কে পৌঁছাতে পারেননি। মুশফিক ১০৫ রানের ইনিংস খেলার পথে ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে নিজের নাম লিখে ফেলেন। পিঠ চাপড়ে তামিম হয়তো মুশফিককে আরেকবার অভিনন্দন জানিয়েছেন। মুশফিক হয়তো ফিরতি ভালোবাসা দিয়েছেন। দেশের হয়ে প্রথম এমন কীর্তি করায় স্মারক হিসেবে ম্যাচ স্টাম্প সংগ্রহ করেছেন এ ব্যাটসম্যান। ডিকবেলাও ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে তুলে নেন একটি স্টাম্প। সেটা অবশ্য নিজের জন্য নয়। সতীর্থ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ১৯৯ রান করেছিলেন প্রথম ইনিংসে। ১ রানের জন্য ডাবল মিস করলেও তার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে চট্টগ্রামের এ ম্যাচ। আগের দিনের ২ উইকেটে ৩৯ রানের সঙ্গে আজ ২২১ রান যোগ করতে আরো ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে তাদের রান ৬ উইকেটে ২৬০। তাইজুল আগের দিনের একটির সঙ্গে আজ আরো ৩ উইকেট পেয়েছেন। তার স্পিন ছোবলে লঙ্কানরা কিছুটা পথ ভুললেও দিনেশ চান্দিমাল ও ডিকবেলার ৯৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি ভাঙার কোনো উপায় জানা ছিল না কারও। তাইতো চা-বিরতির এক ঘণ্টা আগে-পরে তাদের দৃঢ়তায় স্কোরবোর্ড ছিল সচল।
চট্টগ্রামে শেষ দুই টেস্টেই হেরেছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর পাকিস্তানের সঙ্গেও পেরে উঠেনি। দেশের মাটিতে শেষ চার টেস্টেই আবার হার। দুটি করে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের কাছে। সেখানে শ্রীলঙ্কা সবশেষ দুই টেস্টে ভারতে মাটিতে হারলেও ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নাস্তানাবুদ করে। চট্টগ্রামে মাঠে নামার আগে দলগতভাবে বেশ শক্তিশালী অবস্থানেই ছিল তারা। আর দেশে ও দেশের বাইরে টানা খারাপ সময় কাটানো বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ছিল তলানিতে। সেখান থেকে পাঁচদিন লড়াই করে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট ভাগাভাগি করা নিশ্চিতভাবেই বড় কিছু। তাইতো মাথা উচুঁ করেই মাঠ ছেড়েছেন মুমিনুলরা। এ টেস্টে ব্যাটসম্যান ও বোলারদের ধারাবাহিকতা নিয়ে গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে তামিমের ১৩৩, মুশফিকের ১০৫ বাংলাদেশের আশার প্রদ্বীপ জ্বালিয়েছে। সঙ্গে লিটন ও জয়ের ফিফটিতে বেড়েছে বড় কিছুর আশা। মিরাজের জায়গায় নাঈম এসে পেয়েছেন ‘ওয়ালটন মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’-এর পুরস্কার। প্রথম ইনিংসে তার ৬ উইকেটে অতিথিদের বড় স্কোর করতে দেয়নি বাংলাদেশ। সঙ্গে সাইডবেঞ্চের শক্তি পরীক্ষাতেও সফল টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে চোখে আঙুল দিয়ে পেসাররা আরেকবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, দেশের মাটিতে সাফল্যের জন্য তাদের আরো উন্নতি করতে হবে। ইবাদতকে ডিঙিয়ে দলে সুযোগ পাওয়া খালেদের বোলিংয়ে ছিল না কোনো ধার। অহরহ লাইন ও লেন্থ হারিয়েছেন। শরিফুলের বোলিংও ছিল গড়পড়তা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের চক্রে এটি বাংলাদেশের প্রথম ড্র। তাতে মিলেছে ৪ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট ১৬। নিউ জিল্যান্ডে জেতায় মিলেছিল ১২ পয়েন্ট। ৫ ম্যাচে ২টি করে জয় ও পরাজয়ে এবং এই ড্রয়ে শ্রীলঙ্কা পয়েন্ট ২৮। চট্টগ্রামে পয়েন্ট ভাগাভাগিতে লড়াই শেষ হলেও ঢাকায় ম্যাচের ফল বের হতে পারে। হোম অব ক্রিকেটে সবশেষ ড্র হয়েছিল ৭ বছর আগে। আর এই সময়ে ৮ টেস্টে ৫টিতে জেতা বাংলাদেশ কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে। ২৩ মে থেকে শুরু হওয়া ম্যাচটা জিতলে সিরিজটাও হয়ে যাবে মুমিনুলদের। সেই অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে কয়েকটি দিন।
দেশকন্ঠ/অআ