মৃণাল কুমার বন্দ্য
শ্রীলংকার রিজার্ভ পতনের সাথে সাথে সরকারের পতনও দেখেছে বিশ্ব। আর এর পরেই নড়ে চড়ে বসেছে এশিয়ার দেশগুলো। মুখে যে যাই বলুক, উদ্বিগ্ন প্রত্যেকেই। আমদানি-রপ্তানী নিয়ে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। শ্রীলংকার অর্থনীতি কিন্তু হঠাথ করেই ধস নামেনি। করোনাকালীন সময়ে বুঝতে পেরেছিলো তারা, যখন পর্যটন খাতে আয় শূন্যের কোটায় নেমে আসে, পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে প্রবাসী আয়। এক্ষেত্রে হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেনও নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
মন্দেরও ভালো দিকও আছে। ইতোমধ্যে ডলার সংকটে পড়া পাকিস্তান গাড়িসহ বিলাসী পণ্য আমদানী নিষিদ্ধ করেছে। ইতিমধ্যে গাড়ি, মুঠোফোন, সিগারেটসহ ৩৮ পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। দেশটিতে ডলারের বিনিময় মূল্য এরই মধ্যে ২০০ রুপি ছাড়িয়েছে। দাবী উঠেছে আমাদের দেশেও। আমাদের দেশেও বিনিময় মূল্য ছাড়িয়েছে ১০০ টাকার কোটা। ডলার সংকট ইতোমধ্যে বেশ ভালোভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ডলারের সংকটের এই সময়ে বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধকরণ অথবা উচ্চশুল্ক বসানোর পক্ষে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে কতটুকু সাশ্রয় হচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। তাই সংকট থেকে উত্তরণ না হওয়া পর্যন্ত বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা করে তা আমদানি নিষিদ্ধ করা অথবা উচ্চ শুল্ক বসানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা সহযোগী তাহরিন তাহরীমা চৌধুরী এক বক্তব্যে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও ডলারের দাম বৃদ্ধিতে দেশের অভ্যন্তরে যে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে, সেটি যেন গাড়ির ওপর পড়ে। সেটি যেন পেঁয়াজের ওপর না পড়ে। তাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ে গরিব মানুষের দুশ্চিন্তার বদলে ধনীদের দুশ্চিন্তা হয়তো বাড়বে। সাধারণ মানুষের কাছে সাধুবাদ পেতে পারে এই বক্তব্য।
যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে বিলাসবহুল গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ নগদ জমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফর বন্ধ করেছে সরকার। এসব উদ্যোগে ডলারের খুব বেশি সাশ্রয় হবে কি?
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার হিসাবে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে গাড়ি আমদানি হয়নি। এরপর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২৩ হাজার ২১৮টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। পুরোনো গাড়ির পাশাপাশি দামি নতুন গাড়িও এসেছে এ সময়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে গাড়ি আমদানিতে খরচ হয়েছিল ৯ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে যা বেড়ে হয় ১১ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। চাইলেই রাতারাতি রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ানো সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি খরচে লাগাম টানতে হবে। পাশাপাশি প্রবাসী আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য প্রবাসী আয়ে সাময়িক সময়ের জন্য প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০২০ সালে ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন হয়েছিল ১২ হাজার ৪০৩টি, ২০২১ সালে ১৬ হাজার ৪৯টি। আর চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) নিবন্ধন হয়েছে ৬ হাজার ৫৭৭টি। আর ২০২০ সালে মাইক্রোবাস নিবন্ধন হয়েছে ২ হাজার ৭৭৯টি, ২০২১ সালে ৪ হাজার ৯৪১টি ও চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ২ হাজার ৮২৮টি। ২০২০ সালে বিলাসবহুল জিপ নিবন্ধন হয়েছে ৪ হাজার ৯১১টি, ২০২১ সালে যা বেড়ে হয় ৭ হাজার ৬০২টি; আর চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৩ হাজার ৭২৪টি।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার। বর্তমানে ডলারের সংকট চলছে, তা চলতে থাকলে বছর শেষে রিজার্ভ তিন হাজার কোটি ডলারে নেমে আসবে বলে আশংকা। এ পরিস্থিতিতে অতি সাবধানতার বিকল্প নেই। সামনের বাজেটে হয়তো তার প্রতিফলন আসতে যাচ্ছে।
দেশকণ্ঠ/আসো