মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : নেতৃত্ব দিয়েও চট্টগ্রাম টেস্ট জেতা হয়নি বাংলাদেশের। স্বাগতিক দলের কাছ থেকে রীতিমতো ম্যাচটা ছিনিয়ে নিয়েছেন দুই লংকান ব্যাটসম্যান চান্দিমাল ও ডিকওয়েলা। চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনের সকালটাকে তাই ভুলে যেতে চান বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। আজ ২৩ মে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা। ম্যাচটি মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম টেস্ট থেকে দুজনকে আজ পাচ্ছেনা বাংলাদেশ। বাহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। তারা ইনজুরির কারণে একাদশ থেকে ছিটকে গেছেন। তাদের জায়গায় একজন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত যে খেলছেন এটা একরকম নিশ্চিত। অন্যজন টসের পর ঠিক হবে। তবে জয়ে চোঁখ রেখেই খেলতে নামবে মমিনুল হক সৌরভের দল। দারুণ খেললেও চট্টগ্রাম টেস্টটি নিয়ে দুঃখ রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের আধিপত্য ছিল তৃতীয় দিন থেকেই। চট্টগ্রামে বাংলাদেশের স্পিনাররাই দাপট দেখিয়েছে। শ্রীলঙ্কার ১৬টি উইকেট নিয়েছে তারা। টাইগার অধিনায়কের আক্ষেপটা হচ্ছে পেসাররা কোনো উইকেট নিতে পারেননি। এটা এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন অপেক্ষা ঢাকা টেস্টে কেমন করে তারা সেটাই দেখার বিষয়।
ঢাকার উইকেট সবসময়ই ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে টাইগাররা ঠিকভাবে হোম গ্রাউন্ডের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারবে কি না; সেটা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। মিরপুর স্টেডিয়ামের উইকেটের চরিত্র নিয়ে বহুদিনের বিতর্ক রয়েছে। কিউরেটর বাংলাদেশের ব্যাটিং উপযোগী উইকেটই দিতে পারছে না। ফলে মিরপুরে হারতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে মিরপুরের উইকেট কেমন আচরণ করে, তা দেখা যাবে আজ থেকে। অবশ্য বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে রেখেছে সফরকারীরা। চট্টগ্রাম টেস্টের পরই সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলংকান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্বে জানিয়েছে তারা স্পিন দিয়ে বাংলাদেশকে কাবু করবে। চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হওয়ায় সিরিজে ভাগ্য নির্ধারিত হবে ঢাকার দ্বিতীয় ও টেস্টে থেকে। চট্টগ্রামে লঙ্কানরা আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে জমা করে ৩৯৭ রান। বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে করে ৪৬৫ রান। এতে ৬৮ রানের লিড জমা হয়। পরে শ্রীলংকা দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান করলে পরিস্থিতি বিবেচনায় ড্র মেনে নেন দুই দলের অধিনায়ক। সব ঠিক থাকলে ২৭ মে শেষ হবে দুই টেস্টের এ সিরিজ। এরপর ২৮ মে বাংলাদেশ ছেড়ে নিজ দেশের উদ্দেশে উড়াল দেবেন লংকান দেশটির ক্রিকেটাররা।
ঢাকা টেস্টে অফস্পিনার পাচ্ছে না বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন না আগেই। চট্টগ্রাম টেস্ট খেলে ছিটকে গেছেন নাঈম হাসান। বিশেষজ্ঞ অফস্পিনার হিসেবে স্কোয়াডে নতুন করে কাউকে যোগও করা হয়নি। নাঈম-মিরাজের অভাব পূরণ করতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ওপর ভরসা রাখতে পারে দল। অফস্পিন অলরাউন্ডার হলেও জাতীয় দলে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মূল ভূমিকা ব্যাটারের। তিন টেস্টে ১৫ ওভার বল করেছেন তিনি। উইকেট পাননি একটিও। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে মোসাদ্দেকের ৪২ ম্যাচে ২৯ উইকেট রয়েছে। তাকে দিয়েই মিরপুরে শুরু হতে যাওয়া সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্টে কাজ চালিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ। বিসিবি’র ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ঢাকা টেস্টে নাঈম হাসানের কোনো বিকল্প নেই, তবে মোসাদ্দেক হোসেন আছে স্কোয়াডে। দল আগেই দেয়া হয়েছে। নতুন কোনো স্পিনার যুক্ত করা হচ্ছে না স্কোয়াডে। নাঈম নেই। মিরাজ ইনজুরিতে। স্পিনার সংকট। এখন আর কিছু করার নেই। দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াড থেকেই স্পিনারের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।’
চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেন অফস্পিনার নাঈম। ঢাকার উইকেটে তিনি হতে পারতেন ট্রাম্পকার্ড। চোট পেয়ে খেলতে পারছেন না। প্রথম পছন্দ মিরাজও নেই। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি জাতীয় দলে খেলার মতো অফস্পিনার শুধু দু’জনই? নাঈমের বিকল্প হতে পারতেন ঘরোয়া লিগে ভালো খেলা শুভাগত হোম চৌধুরী। লিগের শেষ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে ঢাকা বিভাগকে শিরোপা জেতান শুভাগত। বিসিএলের ফাইনালে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি নিয়েছেন ৩ উইকেট। চলতি মৌসুমে প্রথম শ্রেণিতে প্রায় ৬০ গড়ে রান করেছেন শুভাগত। বল হাতে শিকার ২৬ উইকেট। তবুও কেন তাকে নেয়া হলো না? জালাল ইউনুস জবাবে বলেন, ‘শুভাগত হোমকে নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে সে এখন কলকাতায়। হুট করে ঢাকায় ফেরা কঠিন। তাছাড়া সে অনেকদিন আমাদের সিস্টেমের বাইরে। তাই আলোচনা বেশিদূর আগায়নি। আশা করি মোসাদ্দেক ভালো করবে। সাকিব যখন কোভিডের কারণে ছিটকে গেলো তখন মোসাদ্দেকই আমাদের ভরসা ছিল। অভিজ্ঞতা আছে অনেক। আশা করি পারবে।’ এদিকে নিজের ব্যাটিং নিয়ে এখনো কোন চিন্তাই করছেন না অধিনায়ক মমিনুল হক। অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ব্যর্থতার জবাবটা ঠিকঠাক দিতে পারছেন না এই বাহাতি। সংভাদ মাধ্যমের সামনে অনেক এলোমেলো উত্তর দিতে দেখা যায় তাকে।
এদিকে চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট রীতিমতো ছিল ব্যাটিং স্বর্গ। বাংলাদেশে পক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছেন দুই ব্যাটার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম, লঙ্কানদের হয়ে ১৯৯ রান করেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যর্থ হয়েছেন শুধু নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। রান খরা কেটেছে মুশফিকুর রহিমের। শ্রীলংকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারে অষ্টম সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। ২ বছর পরে পাওয়া সেঞ্চুরির ইনিংসের পথে স্পর্শ করেছেন টেস্টে ৫ হাজার রানের মাইলফলক। বাংলাদেশের একমাত্র ইনিংসে দুজনের কেউই ২ অঙ্কের কোটা ছুঁতে পারেননি ব্যক্তিগত সংগ্রহে। এ নিয়ে ম্যাচশেষে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মুমিনুল হক। জবাবে তিনি জানালেন, ক্রিকেট খেলার ধরনই হচ্ছে কেউ সফল হবে কেউ ব্যর্থ। মুমিনুল বলেছেন, ‘সত্যি বলতে একটা দলে সবাই পারফর্ম করা তো কঠিন। তাই না? ১১ জনই যদি ১০০ করে তাহলে রান হবে ১১০০। আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেট খেলাটাই এরকম, হয়তো দুজন বা তিনজন পারফর্ম করবে। যারা করবে তারা বড় করবে’। সর্বশেষ ৫ ইনিংসেই নিজের সংগ্রহ ব্যক্তিগত সংগ্রহ দুই অঙ্কের ঘরে নিতে পারেননি। চট্টগ্রামেও ১৯ বল খেলে মাত্র দুই রান করে আউট হয়েছেন মুমিনুল।
এত কিছুর পরও বাংলাদেশ অধিনায়ক আরও একবার জোর গলায় বলেছেন, নিজের ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে চিন্তিত নন তিনি। দল হিসেবে আমরা খেলতে পেরেছি কি না।’ শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট ড্র হলেও খুশি মুমিনুল হক। দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ হারের পর ভালো খেলেছে তার দল। ব্যাটিং-বোলিংয়ে দল হিসেবে খেলতে পেরেছে। টেস্টে ভালো করতে হলে দলীয় পারফরম্যান্স দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি, ‘আমাদের জন্য দল হয়ে খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি আগেও বলেছি, দল হয়ে খেলতে না পারলে আমরা ভালো করতে পারব না।’ বল হাতে নাঈম প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছেন, সাকিব নিয়েছেন ৩ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল নিয়েছেন ৪ উইকেট। ব্যাট হাতে তামিম ও মুশফিক সেঞ্চুরি পেয়েছেন। লিটন দাস সেঞ্চুরি ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন। তবে প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেওয়া পেসাররা উইকেট নিতে পারেননি। এখন দেখা যাক দ্বিতীয় টেস্টে কি করেন তারা?
দেশকণ্ঠ/আসো