অনিরুদ্ধ ব্রতচারী : বাংলাদেশের বাজারগুলো দেখা যায় যান চলাচলের রাস্তার উপরে , যেন মানুষকে আটকিয়ে পণ্য বিক্রি করতে হবে। রাস্তা বা সড়ক দিয়ে যাচ্ছেন হঠাৎ দেখবেন গতি ধীর হয়ে যাবে, হর্ন, বেল, টুং টাং শব্দ করেও ক্রেতা মানুষটিকে সরাতে পারবেন না, অবশেষে চিৎকার করে বলতে হয়, ভাই একটু সরেন। এরপর শুরু হয় ঝগড়া, রাস্তা কি তোর বাপের ইত্যাদি। সব যেন জট পাকিয়ে যায়। যাই হোক দোকান বা দোকানদার সরবে না। ক্রেতাকে ধাক্কা খেয়েই পণ্য কিনতে হয়।
শহরের রাস্তায় গড়ে তোলা দোকানের অবস্থা আরো কাহিল , সে দোকানের জায়গার মালিক পারলে রাস্তা আরেকটু দখল করে দোকান নির্মাণ করে! ক্রেতা কোথায় দাড়িয়ে পণ্য কিনবে ? পণ্য কেনা মানে তো একটু দেখে বুঝে কেনা এ জন্য ক্রেতাকে দাড়াতে হয়, পণ্য দেখতে হয়, অনেকের বাহন থাকে সেটাকেও দাড় করিয়ে রাখতে হয় , সেগুলোর কোন ব্যবস্থা নেই। এরপর দোকানের ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় এমনভাবে পণ্য সাজিয়ে রাখে যে কোন রকমে এক থেকে দুজন মানুষ দাড়াতে পারে, কেউ কাউকে ক্রস করতে পারে না! একজনকে আরেক জনের শরীরের উপর ভর দিয়েই যেতে হয়! এসব অসভ্যতা!
ইদানিং মার্কেট ভবন তৈরি হয়েছে সেগুলোর দোকানের সারির মাঝখানে ক্রেতা যাবার যে জায়গা সেটা এমনই সরু এবং দোকানের পণ্য দিয়ে দখল করা হয় যে ক্রেতা চলাচল করতে হয় খুব কষ্ট করে নইলে কারো না কারো সাথে ধাক্কা লাগে! নারী ক্রেতারা বিরক্ত হয়!
যে ক্রেতাদের আশ্রয় করেই ব্যাবসা করে যারা তাদের আচরণ কেমন যেন পাল্টে যায় , নিজেকে সম্পদশালী ভাবে ভাবটা এমন যে, পারলে নে, না হলে যা! আবার পণ্য কিনতে উদ্বুদ্ধ করে সেই ক্রেতাকে ডাকে, নানান লোভনীয় কথা বলে ডাকে, ডেকে এনে করে অপমান! এই দোকানদার এবং বিক্রেতাদের নিকট মানুষ না ক্রেতা আসল ক্রেতাকে একজন টাকাওয়ালা ভাবে , ধরতে পারলে বা মাল গুছিয়ে দিতে পারলেই টাকা! টাকার দিকে নজর ফলে ক্রেতার সুবিধা অসুবিধা দেখা বা সু আচরণের কোন প্রসঙ্গ নেই! অথচ ব্যাবসা একধরনের সেবা এবং এই সবাই হলো ব্যবসার মূল পুঁজি। সেবা ভালো বলেই সুসজ্জিত , আরামদায়ক দোকান, মল বা মার্কেটে ক্রেতা যায় মুল্য একটু বেশি হলেও পণ্য কিনে নেয়।
ব্যাবসা রেগুলেট করার মন্ত্রণালয়, দপ্তর, সিটি করপোরেশন, পৌর সভা, ইউনিয়ন, ব্যাবসা ও ব্যবসায়ী সংগঠন, সমিতি ইত্যাদি আছে। ক্ষুদ্র থেকে বিশাল ব্যাবসা যেটাই হোক এইসব মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িত বিপরীতে কোটি কোটি ক্রেতা। লক্ষ লক্ষ মানুষ যে মানুষগুলোর নিকট পণ্য বিক্রি করে আয় রোজগার করে সংসার চালায় তাদের প্রতি অর্থাৎ ক্রেতার সুবিধা ও অসুবিধার প্রতি আন্তরিক নয়। চরম বিরক্ত হলেও যেহেতু প্রয়োজন সেহেতু ক্রেতা ক্রয় করতে সেসব বাজে অবস্থানেও যায়, যেতে হয়। আর এই সুযোগ নেয় বিক্রেতারা । এটার একটু উন্নয়ন করতে পারে সে সব মন্ত্রণালয়, দপ্তর, ব্যাবসা সংগঠন ইত্যাদি। মার্কেট ভবন করার ক্ষেত্রেও দোকানের মাঝখানে ( করিডোর) আন্দাজে জায়গা ফাঁকা না রেখে যৌক্তিক প্রশস্ত করিডোর করা যায়। পাড়ার মোড়ে বা রাস্তার পাশে দোকান হোক একটু ( ১/২ ফুট) স্বস্তির জায়গা রেখে করুক।
এবার ক্রেতার আরেক দুঃখের দিকে নজর দিই,।সেটা হলো প্রস্রাব পায়খানা করবার জায়গা বা টয়লেট। খোলা বাজারের পাশে চটের বস্তা/কাপড়/টিনের ঘেরা কোথাও কোথাও আধাপাকা টয়লেট দেখা যায় এর কোনোটিই ব্যাবহার করা যায় না ফলে খোলা বাজারের চতুর্দিকে টয়লেট হয়ে যায়! শহরের রাস্তায় যে দোকান আছে সেগুলোর আশেপাশে কোন টয়লেট ( স্থায়ী বা ভ্রাম্যমাণ) নেই, বিক্রেতা নিজেই দেয়ালের গায়ে প্রস্রাব করে যা গড়িয়ে গড়িয়ে রাস্তা বা ফুটপাতে চলে আসে, দুর্গন্ধ ছড়ায়! সেখানে আগত ক্রেতার কি হবে? যে ক্রেতা না হলে পণ্য বিক্রি হবে না, পণ্য বিক্রি না হলে আয় রোজগার হবে না, আয় রোজগার না হলে শুধু বিক্রেতা না আরো অনেকেরই টাকা আয় হবে না! একইভাবে বিপণি বিতান বা মার্কেটের টয়লেট পরিমাণে কম দেখা যায়। অনেক মার্কেট আছে এক ফ্লোরে ২/৩ শ দোকান থাকলে সে ফ্লোরে কোন টয়লেট নেই, আবার এক ফ্লোর পরে অন্য ফ্লোরে টয়লেট রেখেছে! এসব মার্কেট ডিজাইন কোন স্থপতি ( আর্কিটেক্ট) করে না কি কোন মিস্ত্রি করে যে ভবনে বা মার্কেটে থাকা বিক্রেতা এবং আগত ক্রেতার সুবিধা বুঝলো না! এসব ডিজাইনারদের আক্কেল আরো আশ্চর্যের যে টয়লেটে ১/২ টা পায়খানা আর প্রস্রাবের জন্য ১/২ টা ব্যবস্থা রাখে! কিভাবে ভাবলো যে ক্রেতাদের টয়লেট ব্যাবহার করতে হয় না! বা ভেবেছে ক্রেতা কে, তারা কেন টয়লেট ব্যাবহার করবে? এমন অহমিকা দেখানো অস্বাভাবিক নয়! যদিও বা টয়লেট আছে সেটা পরিষ্কার থাকে না, দুর্গন্ধ এবং অবস্থা এমন যে সুন্দর বিপণি বিতানে একটা ময়লার ভাগাড় করে রেখেছে। এসব নিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলে অন্য কারো দোহাই দেয়।
খাবার দোকান বা রেস্তোরাঁ তো যাচ্ছে তাই অবস্থা বসা, পরিবেশন, খাবার তৈরি বা রান্না করা , খাবার রাখা এবং খাবার পরিবেশকের স্বাস্থ্যকর অবস্থা যেমন নেই তেমনি টয়লেটে ব্যবস্থা থাকে না। খাবারের হোটেল ছোট হোক কিন্তু ন্যূনতম হাইজেনিক হবে এমন প্রত্যাশা করা কি ক্রেতাদের অন্যায়! এটা কি অসম্ভব!
ক্রেতার জন্য ওয়ার্কিং তো আকাশ কুসুম অবস্থা , মার্কেট বা দোকান করতে এক ইঞ্চি জায়গা যারা ছাড়ে না , যারা একজন ক্রেতা মানুষ দাড়ানোর জায়গা চিন্তা করে না, তারা গাড়ি পার্কিং এর চিন্তা করবে কি করে! ইদানিং ক্রেতা গাড়ি করেই আসে হোক নিজের বা ভাড়া করা সে গাড়ি বা বাহন কিছুক্ষণ রেখে পণ্য কিনবে এমন ব্যবস্থা নেই। কিছ কিছু ভবনে পার্কিং স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করে সেখানে কোন রকমে ২/১ টা গাড়ি রাখা যায় তাও ভবন মালিকের আশীর্বাদ লাগে। অর্থাৎ ক্রেতা গাড়ি রাস্তায় রেখে যান জট সৃষ্টি করলে করুক, ক্রেতার গাড়ির এটা সেটা চুরি হলে হোক বিক্রেতা ও দোকান মালিক বা মার্কেট মালিকের কি যায় আসে!