দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : একে তো রান পাচ্ছেন না, ভাগ্যও তার পাশে নেই। কাইল মায়ার্সের বলে এলবিডব্লিউয়ের ধরণটাই দেখুন। বলের জায়গায় ব্যাট নিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু ব্যাট প্যাডে আঘাত করায় বলের নাগালই পাননি মুমিনুল। সেখানেই শেষ নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আবেদনে আম্পায়ার জোয়েল উইলসন সাড়া দেন। মুমিনুল সতীর্থ জয়ের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন। এখানেও ভাগ্য তার পাশে নেই। বল ঠিকঠাক মতো পিচ করলেও বাক খেয়ে উইকেট থেকে সরে যাচ্ছিল। বলের অর্ধেক অংশ স্টাম্পে আঘাত করেছিল। আম্পায়ার নট আউট দিলে মুমিনুল বেঁচে যেতেন। কিন্তু অনফিল্ড আম্পায়ার আউট দেওয়ায় মুমিনুলকে সাজঘরে ফিরতে হয়।
রান খরা থাকায় বাংলাদেশের টেস্ট স্পেশালিস্টের আরেকটি ব্যর্থ ইনিংস। প্রথম ইনিংসের শূন্যর পর এবার মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসল ৪ রান। তার আউটের ধরণ, অফ ফর্ম, ব্যাটিং মানসিকতা দেখে মনে হচ্ছে রান করাই যেন ভুলে গেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পায়ের উপরের বল তার শক্তির অন্যতম জায়গা। অথচ সেই বলগুলোতেই আউট হচ্ছেন মুমিনুল। রাউন্ড দ্য উইকেটে তার দূর্বলতা ছিল না। অনায়েসে সেগুলো ড্রাইভ করতে পারতেন। কিন্তু ২০১৯ থেকে মুমিনুল ২২ ইনিংসে সাতবার আউট হয়েছেন রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে। মায়ার্স সেই ফাঁদ পেতেই তাকে আউট করেছেন। আউট হওয়া বলের আগে অ্যাওয়ে সুইংয়ে বল বাইরে নিয়েছেন। হঠাৎ একটা-দুটা বল ভেতরে এনেছেন। সেটাতেই সাফল্য। এটাকে শুধুমাত্র দূর্বলতা বললেও ভুল হবে। মনোযোগে যে ঘাটতি রয়েছে তা স্বীকার করে নিতে হবে। মুমিনুলের বছর শুরু হয়েছিল নিউ জিল্যান্ডে ৮৮ রানের ইনিংস খেলে। এর আগের বছরও ভালো না কাটায় মনে হচ্ছিল চলতি বছর তার ভালো কাটবে। অন্তত শুরুটা যখন ভালো করেছেন তখন ভরসা তো রাখাই যায়। কিন্তু কিসের কি! ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় যাচ্ছে তার। মুমিনুলের রানের গাড়ি চলছে ব্যাক গিয়ারে। মাউন্ট মঙ্গানুইতে ৮৮ রানের ইনিংসের পর ১২ ইনিংসে তার মোট রান ৭৮! এ সময়ে চার ইনিংসেই রানের খাতা খুলতে পারেননি। দশ ইনিংসে যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে। সবশেষ টানা নয় ইনিংসে একই দুর্দাশা। সর্বোচ্চ রান ৩৭, যেখানে ইনিংসের শুরুতেই পেয়েছিলেন জীবন।
সাদা পোশাকে বাংলাদেশের গর্বের অন্যতম জায়গা ছিলেন মুমিনুল। তাকে আচমকা অধিনায়ক করার পর ব্যাটিংয়ে বড় প্রভাব রেখেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সিরিজের আগে নিজ থেকে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু রানে ফেরা হলো না তার। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজে কখনোই রান পাননি মুমিনুল। ক্যারিয়ারের ৫৪ টেস্টের ৫টি খেলেছেন ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জে। যখোনে তার রান সর্বমোট ১৪২। সর্বোচ্চ রান ৫৬। অন্তত ৫ টেস্ট খেলা দেশগুলোতে মুমিনুল ওয়েস্ট ইন্ডিজেই সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন। সেখানে তার গড় রান কেবল ১৪.২০। নিউ জিল্যান্ডে ৩০.০, শ্রীলঙ্কায় ৪৯.৮৭ গড়ে রান তুলেছেন। আগে মুমিুনলের ব্যাটিংয়ে নামা মানেই রানের ফুলঝুরি ছোটানো। একটা সময়ে টানা ১২ টেস্টে ফিফটির বিশ্বরেকর্ড ডাক দিচ্ছিল তাকে। একটুর জন্য পারেননি। তবে সেই ধারাবাহ্তিা মুমিনুল দেখিয়েছেন পরবর্তীতেও। তাইতো একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে তার সেঞ্চুরির সংখ্যা দুই অঙ্ক পেরিয়েছে। ব্যাট হাতে ২২ হজে দোর্দন্ড প্রতাপ দেখানো সেই ব্যাটসম্যানই এখন রীতিমত ভুগছেন। এই ভোগার শেষ কোথায়?
দেশকন্ঠ/অআ