দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় পাঁচ বছর এবং তার চেয়ে কম বয়সী শিশুদের জন্য ফাইজার ও মডার্নার কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় ১৮ জুন মার্কিন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই অনুমোদন দেয়। এদিকে পাঁচ বছর ও এর চেয়ে কমবয়সী শিশুদের জন্য করোনার টিকার অনুমোদনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘বিরাট পদক্ষেপ’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি। ১৯ জুন এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। বার্তাসংস্থাটি বলছে, শনিবারের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ছয় মাস বয়সী শিশুদের জন্য করোনা প্রতিরোধী তথা এমআরএনএ (mRNA) ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদনকারী প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে উত্তর আমেরিকার এই দেশটি পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদন দিয়েছিল। এএফপি বলছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শুক্রবার ছোট বাচ্চাদের শরীরে জরুরি ব্যবহারের জন্য টিকার অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ বিষয়ক প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। আগে এই টিকা নিতে হলে শিশুদের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হতো।
তবে এফডিএ’র এই অনুমোদনের পর ছোট শিশুদের শরীরে এই টিকার ব্যবহার শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিষয়ক প্রধান সরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ছাড়পত্রের প্রয়োজন ছিল। অবশ্য শনিবারই সিডিসি’র সেই ছাড়পত্র পেয়ে যায় তারা। সিডিসি’র ডিরেক্টর রচেল ওয়ালেনস্কি শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা জানি লাখ লাখ অভিভাবক এবং শিশুদের প্রতি যত্নশীলরা তাদের ছোট বাচ্চাদের টিকা দিতে আগ্রহী এবং আজকের সিদ্ধান্তের পর এখন থেকে তারা সেই টিকা দিতে পারবেন।’ এএফপি বলছে, অনুমোদনের পর এখন এফডিএ থেকে সবুজ সংকেত পেলে মার্কিন সরকার সারা দেশে লাখ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণ শুরু করবে। অবশ্য আগামী সপ্তাহ থেকেই এই টিকা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি। অবশ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, অভিভাবকরা তাদের ছোট বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার জন্য আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মেসি এবং ডাক্তারের অফিসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন।
শনিবার এক বিবৃতিতে মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিনকে ‘নিরাপদ (এবং) অত্যন্ত কার্যকর’ বলে উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘সারা দেশের অভিভাবকদের জন্য এটি একটি স্বস্তি ও (মুক্তি) উদযাপনের দিন।’ তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে বেশি পরিমাণ ডোজ পাঠানো হবে এবং এর ফলে শিশুদের টিকা দিতে ইচ্ছুক অভিভাবকরা ভ্যাকসিনের একটি করে ডোজ পেতে সক্ষম হবেন। এএফপি বলছে, এক মাসের ব্যাবধানে ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী প্রতি শিশুকে মডার্নার টিকা দেওয়া হবে। প্রতি ডোজে এসব শিশুকে ২৫ মাইক্রোগ্রাম টিকা দেওয়া হবে। এটি ছয় থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের দেওয়া টিকার অর্ধেক পরিমাণ এবং ১২ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য নির্ধারিত ডোজের এক-চতুর্থাংশ। অন্যদিকে ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা এখন থেকে ছয় মাস থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের জন্য অনুমোদিত। এই বয়সী শিশুদের প্রতি ইনজেকশনে তিন মাইক্রোগ্রাম ডোজ টিকা দেওয়া হবে। যা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্ধারিত ডোজের দশ ভাগের এক ভাগ। তবে মডার্নার টিকার তুলনায় ফাইজারের টিকার পার্থক্য হচ্ছে- এটি তিন ডোজ সম্বলিত টিকা। অর্থাৎ মডার্নার টিকা এক মাসের ব্যাবধানে দুই ডোজ দেওয়ার নিয়ম হলেও ফাইজারের টিকার ক্ষেত্রে পার্থক্য হচ্ছে- শিশুরা তিন সপ্তাহের ব্যবধানে এই টিকার দু’টি ডোজ পাবে এবং তৃতীয় ডোজটি পাবে আট সপ্তাহ পরে। সুতরাং এটি গ্রহণকারী শিশুরা প্রথম কয়েক মাস সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাবে না। তবে মডার্নার ভ্যাকসিনের তুলনায় ফাইজারের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম গুরুতর বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে।
দেশকন্ঠ/অআ