• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
    ১০ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৯:১৭
১৯৭৯ সালে স্বৈরাচার জিয়ার বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ

৪৩ বছরের পুরনো ছবির গল্প

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

১৯৭৯ সালের ২২ জুন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় কোনো ঘটনা না ঘটলেও একজনের জন্য দিনটি একেবারেই আলাদা। দিনটি তার মনের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছে। তার নাম মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খান। ১৬ বছর বয়সে টগবগে কিশোর রফিক খানের এখন ৬০ বছর। সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেছেন সিনিয়র নাগরিক হওয়ার দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খান।
 
১৯৭৯ সালের ২২ স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংসদ ভবন ঘেরাও ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। সেখানে রফিক খানের অংশ নেওয়াটা ছিলো স্বপ্নের মতো। মিছিলে অংশগ্রহণ করার জন্য মহাঝুঁকি নিয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এখনকার মতো যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা ভাল ছিল না সে সময়। ঢাকায় আসার একমাত্র উপায় ছিল ট্রেন। তাও আবার কালীগঞ্জের আড়িখোলা স্টেশনে সব ট্রেন যাত্রাবিরতি করতো না। জানালেন, ‘প্রথম মেইল ট্রেন দিয়ে নরসিংদী জংশনে চলে যাই। তারপর সেখান থেকে বাসে করে ঢাকার গুলিস্তানে যাই আরও কয়েকজনের সাথে।’  
 
রাজধানী ঢাকাতে গিয়ে যেন শরীরে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে। গুলিস্তানে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে বায়তুল মোকারমের সামনে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন রফিক খান। যেটা ছিল তার মতো কৈশোরের জন্য বিশাল স্বপ্ন হাতের মুঠোয় পাওয়ার সামিল। চারিদিক স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল একটা অবস্থা বিরাজ করছিল। ’স্বৈরাচারী জিয়ার গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে, পাকিস্তানের জিয়া পাকিস্তানে চলে যা নানা শ্লোগান আর মিছিলে রাজপথ দখলে নেয় আওয়ামীলীগ। সে কি গগণবিদারী আওয়াজ রফিক বললেন, ‘যেন রক্তে আগুন স্ফূলঙ্গি জ্বলে উঠল, হাজারো যুবকের সঙ্গে আমিও সেদিন মিছিলে ঝাপিয়ে পড়তে দ্বিধা করিনি।’ 
 
তৎকালীন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মালেক উকিল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মিছিলের সামনের কাতারে ছিলেন রফিক খান। শুরুতে বাঁধার মুখে না পড়লেও বাংলা মোটরে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। সে সময়ের কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রফিক খান বলেন, ’বাংলা মোটরে প্রথমে আমরা ব্যারিকেড ভাঙ্গি, আমরা যখন মিছিল নিয়ে সেখানে পৌঁছাই; তখন শুরু হয় আমাদের উপর বৃষ্টির মত গুলি, কাঁদানী গ্যাস নিক্ষেপ ও বেপড়োয়া লাঠিচার্জ করা’। তিনি আরও বলেন, ’এরপর আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। ওই সময় আমাদের সভাপতি মরহুম আব্দুল মালেক উকিল সাহেবের শাহাদাত আঙ্গুলটি ভেঙ্গে যায়। সেই দিনের কথা মনে হলে আজো চোখের কোনে পানি চলে আসে। তবে একটা কথা ভাবলে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে, আমি সেদিনের মিছিলে একজন ছিলাম।’ তিনি আরো যোগ করেনÑ ‘সেদিনের রাজপথের মিছিল-মিটিং-সমাবেশের স্বচিত্র প্রতিবেদন পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছে। যা আজও আমার সংগ্রহে আছে।’
 
 
১৯৬২ সালের জানুয়ারিতে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ফুলদিতে বাবা মহসনি খান ও মা সৈয়দা আছিয়া বেগমের সম্ভ্রান্ত মুসলিম ঘরে জন্ম রফিক খানের। নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার হাতেখড়ি তার। এরপর একই গ্রামের জনতা উচ্চ বিদ্যালয় ফুলদী থেকে এসএসসি পাশ করার পর সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন তিনি। জনতা হাই স্কুলে পড়ার সময়ই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নাম লেখান। ছাত্রলীগের স্কুল কমিটির সভাপতি হওয়ার পর কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হন তিনি। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বাসুদেব গোপ, যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন শাহাবুদ্দিন আহমেদ, গাজী সারোয়ার হোসেন, কবির হায়দার, আজাদ আনোয়ার। সেই কমিটি ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রয়াত আবু জাফর শামসুদ্দিন (প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক)। পরবর্তীতে সম্মেলনের মাধ্যমে কালীগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেন রফিক খান। সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগ হতে একমাত্র নির্বাচিত সদস্য হন তিনি। পরবর্তীতে স্বৈরাচার জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে নিজেকে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রাখেন। ২০০৩ সালে কালীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ কৃষকলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৫ সালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন রফিক খান। এরপর কৃষকলীগের জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পর কালীগঞ্জের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকির নির্দেশনায় তাকে বক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর থেকে এলাকার সার্বক্ষণিক সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময় তিনি ব্যক্তিগত তহবিল হতে বক্তারপুর ইউনিয়নে  সাহায্য সহযোগিতা করেন। যা সারা ইউনিয়নব্যাপী সমাদৃত।
 
 
রফিক খানের বাবা মরহুম মোহাম্মদ মহসিন খান বক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে পদত্যাগ করে নিজেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে সামিল করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রফিক খানদের বাড়ি পাক হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দেয়। রফিক খানের বাবা এর আগে ১৯৬৮ সালে নিজ গ্রামে জনতা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে রফিক খান বলেন, ’এখন আমি আমৃত্যু এলাকাকে সুদ, মাদক ও জুয়ামুক্ত সুন্দর সুশৃঙ্খল আদর্শ সমাজ গঠনে মেহের আফরোজ চুমকি আপার নির্দেশে কাজ করে যেতে চাই।’ 
 
৫ ভাই ৩ বোনের মধ্যে তৃতীয় রফিক খান। তিনি ২ মেয়ে ১ ছেলে, স্ত্রী সৈয়দা তামান্না বেগমকে নিয়ে সংসার জীবন কাটাচ্ছেন। স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বড় মেয়ে রাঈসা মুনজেরিন চিকিৎসক হিসেবে (জেনারেল সার্জন বিসিএস) এবং ছোট মেয়ে তানজীম তানিসা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে বেলজিয়ামে অধ্যায়নরত রয়েছেন। একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ শাফায়াত খান স্কলাসটিকা স্কুল হতে এ লেভেল সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছেন। ভ্রমণপিপাসী রফিক সময় পেলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। এ পর্যন্ত ২২টিরও অধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন।
 
বঙ্গবন্ধু ও শহীদ ময়েজউদ্দিনের আদর্শকে মনে প্রাণে ধারণ করা রফিক খান একজন ধার্মিক, নির্লোভ, বিনয়ী, সদালাপী ও দানবীর হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
দেশকণ্ঠ/আসো
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।