• সালাহউদ্দীন আহমেদ আজাদ
আমরা সব সময়ই শুনে আসছি যে অতিরিক্ত চিনি এবং লবন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তাই যখন আমরা শুনি যে চিনি লবনের চেয়ে বেশী ক্ষতিকর তখন আমাদের কোনটা বিশ্বাস করা উচিৎ?
মার্কিন গবেষকদের দ্বারা অনলাইন জার্নাল ওপেন হার্টে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে আমাদের ব্লাড প্রেশার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে চিনি লবণের চেয়েও খারাপ। আমাদের লবণের তুলনায় চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে বেশি মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি গবেষকরা দাবি করেছেন যে লবণের মাত্রা হ্রাস করা, কিছু পরিস্থিতিতে প্রকৃতপক্ষে ভাল হওয়ার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। তাদের গবেষণা অন্য বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে যারা মনে করেন যে হার্টের স্বাস্থ্য বাড়ানোর জন্য, লবণ এবং চিনি উভয়ের মাত্রাই নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
চিনি এবং লবণ কেন হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ?
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ আপনার হৃদরোগ থেকে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে (এমনকি আপনার ওজন অতিরিক্ত না হলেও) যেমন জ্যা্মার ইন্টারনাল মেডিসিন - এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। এখানে দেখা গেছে অতিরিক্ত চিনি ধমনীর দেয়ালে প্রদাহ সৃষ্টি করে। রক্তনালীগুলির এই ধারাবাহিক দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। এদিকে, সঠিক মাত্রায় লবণ গ্রহণ আপনার শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য তবে খুব বেশি পরিমাণে লবণ আপনার শরীরে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলস্বরূপ এটি আপনার রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে যা স্ট্রোক বা হৃদরোগের মত গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে।
লবণ খাওয়া কিভাবে কমাবেন?
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এন এইচ এস)-এর গাইডলাইন অনুযায়ী প্রতিদি ৬ গ্রাম (এক চা চামচ) এর বেশী লবণ খাওয়া উচিৎ নয়। এখানে দেয়া হল লবণ খাওয়া কমানোর কিছু সহজ উপায়-
বাসায় রান্না করা খাবারে অতিরিক্ত লবণ না মিশিয়ে হার্টের জন্য ভাল কিছু ভেষজ বা মশলা ব্যবহার করে খাবারের ফ্লেভার বৃদ্ধি করুন। মাংস কেনার সময় ফ্রেশ মাংস কিনুন। প্রক্রিয়াজাত মাংসে লবণ বেশী থাকে এবং এটা ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।
চিনি খাওয়া কিভাবে কমাবেন?
সাম্প্রতিক গাইডলাইন অনুযায়ী প্রতিদিন নারীদের ৫০ গ্রামের বেশী এবং পুরুষদের ৭০ গ্রামের বেশী চিনি খাওয়া উচিৎ নয়। এক গ্লাস ফলের জুসে ৭ চা চামচ পর্যন্ত চিনি থাকতে পারে। জুসের পরিবর্তে পানি পান করুন কিংবা লাইকোপিনে ভরপুর টমেটোর জুস পান করুন। চা বা কফি পানের সময় সাধারণতঃ যে পরিমাণ চিনি ব্যবহার করতেন তার অর্ধেক ব্যবহার করুন এবং পারলে লো ক্যালরি চিনি ব্যবহার করুন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি চিনি ছাড়া পান করতে পারেন। মিষ্টি কিছু খাওয়ার ক্রেভিং হলে কেক, চকোলেট ইত্যাদির পরিবর্তে একটি মিষ্টি ফল খান। ফলে চিনি থাকলেও এর সাথে আছে অনেক ফাইবার, ফলে এই চিনি খুব ধীরে হজম হবে। এছাড়া ফলমূলে আছে অনেক ভিটামিন এবং মিনারেল, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য চিনি লবণের তুলনায় বেশী ক্ষতিকর হোক বা না হোক, আসল কথা হচ্ছে, এই দু’টোই বেশী পরিমাণে খেলে হার্টের জন্য খারাপ। আমরা সবাই চেষ্টা করলেই এসব খাওয়া কমাতে পারি এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি।
লেখক : খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক
দেশকন্ঠ/রাসু