মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিনিয়ত পারফরম্যান্স খারাপ হচ্ছে জাতীয় দলের। তাতে করে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি করছেন জাতীয় দলের বিদেশি কোচরা। রাসেল ডোমিঙ্গো থেকে শুরু করে যারা এখন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসানদের নিয়ে কাজ করছেন সেখানে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই যেমন, টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার দিনেই এমন কথা বললেন বাংলাদেশ কোচ, সেটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২২ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২৬ জুন। ২০০০ সালের এই দিনে আইসিসির স্থায়ী সদস্য দেশের স্বীকৃতি পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে প্রায় দুই যুগের পথচলায় খুঁড়িয়ে অথবা হোঁচট খেয়ে চলছে দল। গৌরবের মুহূর্ত এসেছে কমই। বাংলাদেশের ‘জন্মগত’ সমস্যা বা ঘাটতির জায়গা নিয়ে যেকোনো আলোচনার টেবিলে প্রাধান্য পেয়েছে টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারার বিষয়টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও আশা জাগিয়ে বারবার নিরাশার গল্প লেখা থামছে না। কারণ খুঁজতে গিয়ে রাসেল ডমিঙ্গোও দেখছেন শেকড়ের দুর্বলতা। এ দেশের টেস্ট সংস্কৃতি এখনো প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি বলেই মনে করেন বাংলাদেশ কোচ। সেন্ট লুসিয়া টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও যেমন প্রথম সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রবলভাবে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরে ঠিকই চাপ সরিয়ে দিনটি নিজেদের করে নিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা।
এখন হাজার হাজার ডলারের কোচদের কাজটা আসলে কি, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে? ক্রিকেটাররা অফ ফর্মে থাকলে তাদের বাদ দেওয়ার ব্যাপারটা যেমন উচিত তেমনি সেই ক্রিকেটারদের টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো খুঁজে সমাধান করবার দ্বায়িত্বটা কিন্তু কোচদেরই। আচ্ছা দল যখন খারাপ করে, তখন তিন চারজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের খারাপ সময়ে মিডিয়া থেকে শুরু করে জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা সমর্থক সবাই একবাক্যে সমালোচনা করা শুরু করেন। ব্যাটসম্যানদের বাদ দেবার সহজ সমীকরণের সুত্রটাও সাকিব সেদিন সংবাদ সম্মেলনে বলেও দিয়েছেন। কিন্তু বাদ দেবার জন্য তো হাজার হাজার ডলার খরচা করে বিদেশী কোচদের প্রয়োজন নেই। বাদ দেবার জন্য দেশের যে কোন আনকোড়া কোচও যথেষ্ট। বিদেশের থেকে এত নামীদামী কোচদের নিয়ে আসবার কারনই দেশের ক্রিকেটার টেকনিক্যাল সমস্যাগুলোর সমাধান করাবার জন্যই। কিন্তু সেটা কতটা হচ্ছে? বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছেন বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানদেরই টেকনিক্যাল সমস্যা অনেক বেশি।
বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘টেকনিক্যালি অনেক সমস্যা আছে। আমাদের টেকনিক্যালি সাউন্ড খুব বেশি ক্রিকেটার নেই। সবারই অনেক টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। কিন্তু তাদের উপায় বের করতে হবে কীভাবে ক্রিজে থাকতে হবে, কীভাবে রান করতে হবে। সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা যার যার ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেই আসতে হবে। প্রত্যেককেই দায়িত্ব নিতে হবে, কীভাবে সে রানে ফিরবে।’ ব্যাটসম্যানদের ভূল ধরা এবং সেটি শুধরে দেবার জন্যই বিদেশ থেকে হাজার হাজার ডলার সপ্তাহেই খরচ করছে বিসিবি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সিরিজের পর সিরিজ খারাপ করবার ঘটনায় কেন কোচদের কোন দায়ী করা হবে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কি পারবে বিসিবি! মাহামুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্তরা প্রতিটা ম্যাচে খারাপ করছে। সেখানে রান না পাবার দায়টা অবশ্যই ক্রিকেটারদের। কিন্তু রান না পাবার পেছনে যে সমস্যাগুলো আছে সেটার সমাধান করবার জন্য যে কোচরা আছেন তারা কতখানি কাজ করছেন আর কাজ করলেও কেন সমাধান আসছে না? ব্যাপারটা এখন এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে ক্রিকেটারদের সমস্যা সমাধানের জন্য দ্বারস্থ হতে হচ্ছে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছে এবং স্থানীয় কোচদের কাছে।
আর সাকিব তো পরোক্ষভাবে বলেই দিলেন, সব কাজ তো তার না, কোচদেরও একটা কাজ আছে। সাকিব বলেন, ‘দেখুন, এটা আসলে আমার বিষয় না। কোচেরই আলোচনা করার বিষয়। আমি যদি কোচিংও করাই, অধিনায়কত্বও করি, তাহলে তো সমস্যা। আমার কাজ যতটুকু, ওইটুকুতেই যদি থাকি, তাহলে আমার জন্য ভালো। আমার দায়িত্ব যতটুকু, ততটুকুই পালনের চেষ্টা করব। বাকি যাঁরা আছেন, সবাই তাঁদের জায়গা থেকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে সবার জন্য কাজটা সহজ হবে।’ তিন চারজন ক্রিকেটার টানা খারাপ করছেন এবং তাদের মধ্যে কেউই আবার নিজেদের নিজেদের ফিরে পাচ্ছেন না এবং সেটার দায় কি সবটুকুই তাদের উপর? এর আগে সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল খান, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যক্তিগত কোচদের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। তবে কি জাতীয় দলের কোচরা সমস্যার সমাধান দিতে পারছেন না? রুটিন ওয়ার্ক করবার জন্য বিসিবি হাজার হাজার ডলার খরচ করছে না নিশ্চই। জেমি সিডন্স এর আগের বার যখন বাংলাদেশ দলের কোচ হয়েছিলেন তখন তিনি মোটা দাগে সাফল্য এনেছিলেন কিন্তু তিনি বর্তমানে সেটি পারছেন কি? যদি পারতেন তাহলে শান্ত, মুমিনুল, জয়দের এমন ভঙ্গুর অবস্থা কেন? এখন এই তিনজনকে পরিবর্তন করে যাদের আনা হবে তারাও যদি একই ফলাফল করেন তখন কি সমাধান দিবে টিম ম্যানেজমেন্ট?
দেশকণ্ঠ/আসো