• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৯:২২

প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটের গুরুত্ব বাড়াতে হবে

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর একই বছরের ১০ নভেম্বর প্রথম টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। এরপর থেকে ১৩৪ টা টেস্ট ম্যাচ খেললেও একটি ভাল দল হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেনি। উল্টো সবচেয়ে কম সময় আর টেস্টে ১০০ ম্যাচ পরাজয়ের ’লজ্জার’ রেকর্ড গড়েছে সাকিব আল হাসানের দল। এখন চারিদিকে হৈ হৈ রব উঠেছে। তাহলে কি বাংলাদেশ একটি ভালমানের টেস্ট দল হতে পারবেনা। সাথে খোঁজা হচ্ছে কারণও। তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের বেশিরভাগেরই মতো, দেশের প্রথম শ্রেনির ক্রিকেট খেলতে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের যে অনীহা সেটাই টেস্টে বাজে ফলের অন্যতম কারণ। মূলত একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের যে ধরনের কালচার গড়ে ওঠা প্রয়োজন তার কিছুই হয়নি এখানে। এই যেমন পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের যেভাবে রনজি ট্রফির আয়োজন করা হয় সারাদেশে বাংলাদেশে এরকম কোন টুর্নামেন্টই নেই। যেখানে খেলে ক্রিকেটাররা নিজেদের ঋব্ধ করতে পারবেন। পাশাপাশি হারের দায় দেয়া হচ্ছে টেস্ট সংস্কৃতির উপর! আরও একবার ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দি থাকলেন ব্যাটাররা, তাতে টেস্টে আরও একটি হার দেখল বাংলাদেশ। সেন্ট লুসিয়ায় ১০ উইকেটের ওই হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দুই টেস্টের সিরিজে ধবলধোলাই সাকিব আল হাসানের দল। 
 
ব্যর্থতা যেন আষ্ট্রেপৃস্টে লেপ্টে আছে ক্রিকেট দলের সঙ্গে। কেবল এই সিরিজেই নয়, বছরের শুরুতে ক্রাইস্টচার্চে রূপকথা লেখার পর টানা তিনটি সিরিজে ধবলধোলাই হলো টাইগাররা। ম্যাচগুলোতে ঠিকঠাক লড়াইটাও গড়তে পারেনি তারা। দলের এমন ভরাডুবির পর খেলোয়াড়দেরই কাঠগড়ায় তোলা উচিত। কিন্তু লাগাতার ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ‘টেস্ট সংস্কৃতি’কেই কাঠগড়ায় তুলছেন দল সংশ্লিষ্ট সবাই। কদিন আগে টাইগারদের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছেন, বাংলাদেশে টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি বলেই ক্যারিবীয়দের সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে উঠছেন না সাকিব-তামিমরা। সেন্ট লুসিয়ায় হারের পর একই কথা বললেন অধিনায়ক সাকিবও। টেস্ট সংস্কৃতির উন্নতি না হলে ভালো ফল পাওয়ার কোনো সুযোগই দেখছেন না তিনি। দারুণ শুরুর পরও প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রানে অলআউট হওয়া, বোলিংয়ে চাপ সৃষ্টি করেও তা ধরে রাখতে না পারা এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৬ রান করে কোনোমতে ইনিংস হার এড়ানো, এতকিছুর পরও খেলোয়াড়দের কোনো দায় দেখছেন না তিনি। 
 
কোচের মতোই দেশের টেস্ট ক্রিকেট সংস্কৃতির ওপর হারের সব দায় চাপিয়ে অধিনায়ক সাকিব বলেছেন, ‘খেলোয়াড়দের এখন খুব বেশি দোষ দেওয়াটা ঠিক হবে না। শুধু খেলোয়াড়দের দোষ দিলে হবে না। আমাদের দেশের সিস্টেমটাই কিন্তু এমন। আপনি কবে দেখেছেন বাংলাদেশে ৩০ হাজার দর্শক টেস্ট ম্যাচ দেখছে বা ২৫ হাজার দর্শক মাঠে এসেছে টেস্ট দেখতে? ইংল্যান্ডে তো প্রতি ম্যাচে এরকম দর্শক থাকে। টেস্টের সংস্কৃতিটাই আমাদের দেশে ছিল না কখনও, এখনও নেই।’ সাকিব যোগ করেন, ‘টেস্ট সংস্কৃতি নেই বলে যে হবেও না, সেটাও কিন্তু নয়। এই জিনিসটা পরিবর্তন করাই আমাদের বড় দায়িত্ব। সবাই মিলে যদি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে আগানো যায়, তাহলেই হয়তো কিছু সম্ভব। নইলে খুব বেশি দূর আগানো সম্ভব হবে না।’ ২২ বছরের বেশি সময় পূর্বে এই সংস্কণে বাংলাদেশ পথ চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সাফল্য তাই খুব বেশি আসেনি। ১৩৪ টেস্টে ১৬টি জয়ের সঙ্গে ১৮টি ড্রই প্রাপ্তি। সেন্ট লুসিয়ায় হারটি বাংলাদেশের ১০০তম। এমন পারফরম্যান্সের পর সাকিব বলেছেন, ‘আমরা যদি টেস্ট ম্যাচ জিততে চাই, সব বিভাগেই উন্নতি করতে হবে। ভালো দিক হলো, এখন অনেক বড় একটা বিরতি আছে। যারা টেস্ট খেলতে আগ্রহী, তারা হয়তো যার যার জায়গা থেকে উন্নতি করার চেষ্টা করবে। উন্নতি ছাড়া আর কোনো পথ নেই ভালো করার’।
 
এখন পেছনের সব ভুলে টেস্ট সংস্কৃতি গড়া আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় জোর দিচ্ছেন সাকিব। একই কথা বললেন দেশের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও, ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করলে তো রাতারাতি ফল আসবে না, সমালোচনা তাই হবেই। কিন্তু একটা পর্যায়ে কিন্তু আপনি ফল পাবেন। টেস্ট সংস্কৃতি কখনও ছিল না, তৈরি করতে হবে।’ পাশাপাশি সাকিবকে সময় দিতে বললেন মাশরাফি। তৃতীয় মেয়াদে অধিনায়কত্ব পেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। মুমিনুল হকের কাছ থেকে নেতৃত্ব হাতবদল হলেও টেস্টে বাংলাদেশের ভাগ্য বদল হয়নি। ক্যারিবিয়দের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হয়ে শেষ করেছে সাকিবের দল। তবে টেস্টে উন্নতির জন্য সাকিবকে সময় দিতে বললেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সেন্ট লুসিয়া টেস্টের হারের পর এই সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ’ওকে (সাকিব) সময় দিতে হবে। আমার বিশ্বাস সময় দিলে এটা (টেস্টে ব্যর্থতা) আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। কিছুটা সময় লাগবে। অনেক দূর পিছিয়ে গেলে আবার সামনে এগোতে, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে সময় লাগবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ডিউক বলে খেলা, আমরা অভ্যস্ত না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড এই দুই জায়গায় কিন্তু ডিউক বলে খেলা হয়। ডিউক বলে মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন। এগুলো সব বিবেচনায় নিয়ে...হুট করে দলকে চাপ দিলেও হবে না’।
 
অনেকটা অপ্রতাশিতভাবে সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে একটি টেস্টে জিতেছিল বাংলাদেশ। এরপর আগের ও পরের দৃশ্যটা রয়ে গেছে সেই পুরনোই। রাতারাতি টেস্ট ক্রিকেটে পরিবর্তন সম্ভব না জানিয়ে মাশরাফি আরও বলেন, ’প্রথমত টেস্টে আমরা কখনোই ভালো ছিলাম না। মাঝে ঘরে কিছু ম্যাচ জিতেছিলাম। একটা উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ আবার নিচের দিকে। টেস্টে আমরা কখনোই ধারাবাহিক ছিলাম না। টেস্ট ক্রিকেটে ইতিবাচক ব্যাপার হলো, সাকিব বেশ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সাকিব এখন অধিনায়ক। কিন্তু রাতারাতি কিছু হওয়া সম্ভব না। সাকিব কিছু কথা বলেছে যেগুলোর গভীরতা আছে।' টেস্টে পরিবর্তনের জন্য ঘরের মাঠে না হারার ফরর্মুলার কথা সেন্ট লুসিয়া টেস্ট শেষে বলেছিলেন সাকিব। মাশরাফিও সাকিবের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত, ’একদম শতভাগ একমত। ওয়ানডে ক্রিকেটও কিন্তু আমরা এভাবে পরিবর্তন করেছি। আমাদের প্রথম পরিকল্পনা ছিল ঘরের মাঠে যতটা সম্ভব ম্যাচ জিতব। ৮০ শতাংশ ম্যাচ আমরা কীভাবে জিততে পারি।’ মাশরাফি ও সাকিবের কথামতো দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনাই বাড়াতে পারে টেস্ট নিয়ে হতাশার উত্তর। 
দেশকন্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।