দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : জয়ের থেকে ১ রান দূরে ছিল বাংলাদেশ। তামিমের লক্ষ্য ছিল আরেকটু বেশি। ৪ রান হলেই পেয়ে যাবেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৩তম ফিফটি। গুদাকেশ মোতির বল মিড অফ দিয়ে উড়িয়ে তামিম পেয়ে গেলেন ফিফটি। বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ১০৯ রানের লক্ষ্য। ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে বাংলাদেশ এক ম্যাচ বাকি থাকতেই জিতে নিল ওয়ানডে সিরিজ।
ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের ৩১তম সিরিজ জয়। সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের টানা দশম ওয়ানডে জয়। সব মিলিয়ে নিজেদের প্রিয় ও সাচ্ছন্দ্যের ফরম্যটে বাংলাদেশের জয়রথ ছুটছে। তামিম ফিফটি পেয়েছেন ৬২ বলে ৭ বাউন্ডারিতে। লিটন ২৭ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। ম্যাচসেরা হয়েছেন নাসুম আহমেদ। বাঁহাতি স্পিনার ১৯ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন। একই মাঠে ১৬ জুলাই হবে সিরিজের শেষ ম্যাচ।
জয়ের পথে ছুটছে বাংলাদেশ
শান্ত আউট হলেও তামিম ও লিটনের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে জয়ের পথে ছুটতে বাংলাদেশ। লিটন আগ্রাসী ক্রিকেটে বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছুটিয়ে যাচ্ছেন। তামিমও তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন। জয়ের থেকে মাত্র ১৬ রান দূরে বাংলাদেশ। আজ জিতলেই সিরিজ জিতে নেবে বাংলাদেশ।
সুযোগ হাতছাড়া করে ফিরলেন শান্ত
১০ উইকেটে কোনো ওয়ানডে জয় নেই বাংলাদেশের। ১০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তামিম ও শান্তর জুটি সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল। দলে জায়গা পাকাপাকি করতে শান্তর বড় ইনিংস খেলার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ নষ্ট করলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। গুদাকেশ মোতীর বল মিড উইকেট দিয়ে উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেন আকীল হোসেনের হাতে। ৩৬ বলে ২০ রান করে ফিরলেন শান্ত। নতুন ব্যাটসম্যান লিটন দাস।
সহজ লক্ষ্যে বাংলাদেশের সতর্ক শুরু
১০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সতর্ক শুরু করেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনই ধীরস্থির মনোভাবে ব্যাটিং করছেন। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিংয়েও তেমন তেজ নেই। ছোট পুঁজি নিয়ে লড়াইয়ের কোনো তাড়না হয়তো পাচ্ছেন না বোলাররা।
সিরিজ জিততে বাংলাদেশের চাই ১০৯ রান
এবার কোনো মতে একশ করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ উইকেটে কেমো পল ও গুদাকেশ মোতির ২২ রানের জুটি না হলে শতরানের আগে অলআউটের লজ্জা পেত স্বাগতিকরা। মোতিকে এলবিডব্লিউ করে মিরাজ পেলেন তার চতুর্থ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হলো ১০৮ রানে। ঘরের মাঠে যা তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় রান। এর আগে ২০১৩ সালে এই মাঠেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৩ রানে অলআউট হয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা। বাংলাদেশের সেরা বোলার মিরাজ। প্রথম ম্যাচের নায়ক মিরাজ ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ৮ ওভারে তার বোলিংয়ে ছিল ১ মেডেনও। নাসুম ১০ ওভারে ৪ মেডেনে ১৯ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন। এছাড়া শরিফুল ও মোসাদ্দেকের পকেটে গেছে ১টি করে উইকেট। ১১তম ওভারে প্রথম উইকেট হারানোর পর ২৫ ওভারেই অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের বোলাররা তাদের কোনো ব্যাটসম্যানকেই থিতু হতে দেননি। তাতে সিরিজ জয়ের দারুণ সুযোগ এসেছে দলের সামনে।
মিরাজের ঘূর্ণিতে এলোমেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মিরাজের অফস্পিনে নীল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিন ওভারের ব্যবধানে তিন উইকেট পেলেন মিরাজ। সঙ্গে শরিফুলের থ্রোতে সোহানের স্টাম্পিংয়ে সাজঘরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ব্যাটসম্যান। শেষ ৫ ওভারে ১৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে ফিরে মিরাজ ব্রেন্ডন কিংকে বোল্ড করেন। এগিয়ে এসে তার বল উড়াতে গিয়ে বোল্ড হন কিং। পরের ওভারে তার ওভার থেকে ৯ রান আদায় করেন কেমো পল ও শেফার্ড। এক ওভার পর ফিরে শেফার্ডকে বোল্ড এবং নতুন ব্যাটসম্যান জোসেফকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান। মাঝে তার ওভারেই রান আউট হন আকিল। পয়েন্টে বল পাঠিয়ে প্রান্ত বদলের চেষ্টায় উইকেট বিলিয়ে আসেন আকিল।
জ্বলে উঠার আগেই আউট রোভম্যান
এলোমেলো শটে বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দিলেন রোভম্যান পাওয়েল। শরিফুলের লেন্থ বল উড়াতে গিয়ে মিড উইকেটে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দেন রোভম্যান। অনেক উচুঁতে ক্যাচ উঠেছিল। বলের নিচে গিয়ে ঠিকঠাক মতো তালুবন্দি করেন মাহমুদউল্লাহ। ১৯ বলে ১৩ রান করে জ্বলে উঠার আগেই সাজঘরে ফিরলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারাল পঞ্চম উইকেট।
হোপ-পুরানকে এক ওভারে ফেরালেন নাসুম
নাসুমকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন শাই হোপ। ওই ওভারের শেষ বলে নিকোলাস পুরান রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন। এক ওভারে নাসুমের জোড়া সাফল্যে উড়ছে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে হোপ ৪৫ বলে ১৮ রান করেন। অধিনায়ক পুরান পেয়েছেন গোল্ডেন ডাক।
নাসুমের প্রথম ওয়ানডে উইকেট
সামরাহ ব্রুকসকে বোল্ড করে প্রথম ওয়ানডে উইকেট পেলেন নাসুম আহমেদ। বাঁহাতি স্পিনারের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন ৫ রান করা ব্রুকস।ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি তার প্রথম উইকেট। প্রথম ওয়ানডেতে দুর্দান্ত বোলিং করলেও উইকেট পাওয়া হয়নি। আজ শুরুতে তার বলে শাই হোপকে কট বিহাইন্ড দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ক্যারিবিয় ওপেনার। উইকেটে নতুন ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন কিং।
ম্যাচের প্রথম উইকেট মোসাদ্দেকের
দলে ফেরা মোসাদ্দেক প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ১২ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। ১১তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে আসেন এ স্পিনার। ফিরেই বাংলাদেশকে সাফল্যে ভাসান। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কাইল মায়ার্সকে বোল্ড করেন মোসাদ্দেক। অফস্পিনারের একটু টেনে দেওয়া বল আগেভাগে ব্যাট চালিয়ে মিস করেন ১৭ রান করা মায়ার্স। উইকেটে নতুন ব্যাটসম্যান ব্রুকস।
পাওয়ার প্লে: বাংলাদেশের সুযোগ হাতছাড়া, সতর্ক ওয়েস্ট ইন্ডিজ
আগে বোলিং নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বোলাররা চাপে রাখলেও ফিল্ডারদের কারণে এখনও সাফল্য মেলেনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সহজ রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন শান্ত। কভার থেকে তার থ্রো স্টাম্পে লাগলেই ফিরে যেতেন কাইল মায়ার্স। পঞ্চম ওভারে মিরাজের বলে এগিয়ে এসে উড়াতে চেয়েছিলেন শাই হোপ। কিন্তু তার ব্যাটে লেগে বল যায় উইকেটের পেছনে। ক্যাচ মিসের পর স্টাম্পিংয়ের সুযোগও হাতছাড়া করেন সোহান। দুই ওপেনারই সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ফিল্ডারদের শুরুর ব্যর্থতায় মেলেনি সাফল্য।
টস: টস জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
টসের সময় অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানিয়েছেন, কন্ডিশনের কারণ বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান নিয়ে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এজন্য দূর্ভাগ্যজনকভাবে তাসকিন আহমেদকে একাদশের বাইরে রাখতে হয়েছে। তাসকিনের জায়গায় দলে এসেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার অফস্পিনও কাজে লাগানোর কথা বলেছেন তামিম। এছাড়া দলে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
আজ-ই কি সিরিজ জয়?
প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলেও ওয়ানডেতে সেই ছাপ একদমই ছিল না বাংলাদেশের। নিজেদের প্রিয় ও স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে দাপট ধরে রেখে খেলে জয় পেয়েছে অতিথিরা। এবার সিরিজ জয়ের অপেক্ষা। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে জয় অসম্ভব কিছু নয়। বাংলাদেশ এর আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০টি সিরিজ জিতেছে।
দশে দশ নাকি দশে প্রথম?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ নয় ওয়ানডের নয়টিই জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সিলেটে এই জয়রথের শুরু। সিলেট ঘুরে ডাবলিন। ডাবলিন থেকে টনটন। টনটন থেকে মিরপুর হয়ে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম থেকে গানায়ার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম। সব ভেন্যুতেই চলছে বাংলাদেশের রাজত্ব। প্রতিটি ম্যাচেই বাংলাদেশ নিজেদের দাপট দেখিয়েছে। শ্রেষ্ঠত্ব বুঝিয়েছে। আজ জিতলেই দশে দশ বাংলাদেশের। নাকি বাংলাদেশের জয়রথ থামিয়ে দশম ম্যাচে প্রথম জয় পাবে ক্যারিবিয়রা।
স্কোর: বাংলাদেশ ১১২/১ (২০.৪ ওভার), ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০৮/১০ (৩৫ ওভার)
দেশকন্ঠ/অআ