দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ৯০ দশকে দেশের মানুষের কাছে ভীতির এক নাম ছিল লোডশেডিং। সেদিন গত হয়েছে অনেক আগেই। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদ্যুতের ব্যাপক উন্নয়ন হয়। বিদায় নেয় লোডশেডিং। কিন্তু বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে ভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ। অতীতে ফিরে গেলে দেখা যায়, এক যুগ আগে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তিন হাজার মেগাওয়াটের নিচে। সরকার পরিবর্তনের পর বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। আর দেশে চাহিদা ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াটে ওঠানামা করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কথা মাথায় রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যে কারণে আবারও লোডশেডিং ফিরেছে দেশে। তবে, অতীতে যেমন বিদ্যুৎ কখন আসবে চিন্তা করে বসে থাকতে হতো, এবারের লোডশেডিং তেমন নয়। সরকার ঘোষণা দিয়েই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে ১৯ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং। জ্বালানি সাশ্রয়ে সারা দেশব্যাপী প্রথমে এক ঘণ্টা ও প্রয়োজনে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমদিন এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজধানীর সাধারণ জনগণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া এলাকায় বিকেল ৪টা থেকে পৌনে ৫টা পর্যন্ত লোডশেডিং ছিল৷ জুরাইনের মুরাদপুর মেডিকেল রোড, মাদ্রাসা রোড ও লাল মিয়া সরকার রোড এলাকায় বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে লোডশেডিং। এলাকাগুলো বিদ্যুৎ আসা নিয়ে কোনো বিলম্বের কথা শোনা যায়নি। জানা গেছে, সন্ধ্যা থেকে রাত গড়ালেও মগবাজার পূর্ব নয়াটোলায় এলাকায় লোডশেডিং হয়নি। এলাকাটিতে লোডশেডিংয়ের সম্ভাব্য সময় রাত ১০ টা থেকে ১১টা। মিরপুর ১৪ ও আশপাশের এলাকায় সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হওয়া লোডশেডিং চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। কুড়িল এলাকায় সন্ধ্যা ৭টায় বিদ্যুৎ যায়। এলাকায় শিডিউল অনুযায়ী সন্ধ্যা সাতটা থেকে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোডশেডিং কি, তারা ভুলে গিয়েছিলেন। গরমের সময়ে বেচাকেনা কমে যাবে। সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত। রায়েরবাজার টালি অফিস এলাকায় বিকেল চারটা থেকে ৫টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন বলেন, জ্বালানি সংকটে সরকার বাধ্য হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিলেও দ্রুত বিকল্প উপায়ে সমাধান জরুরি। আজিমপুর এলাকায় শিডিউলে বিদ্যুৎ যাওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। কিন্তু বিদ্যুৎ গিয়েছে বেলা ১১টায়। আসে দুপুর ১২টায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, যেহেতু সরকার শিডিউল দিচ্ছে; সেটি মানা উচিৎ। কিন্তু শিডিউল মানা হচ্ছে না, এটা ঠিক না। আরেক শিক্ষার্থী সুরজিৎ সরকার বলেন, দীর্ঘদিন লোডশেডিং মুক্ত ছিলাম। কিন্তু বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের মধ্যে আমাদেরকে সংযত আচরণ করতে হবে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
সোমবার লোডশেডিং সংক্রান্ত বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, লোডশেডিং কোথাও টানা দুই ঘণ্টা করা হবে না। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আধঘণ্টা করে সব মিলিয়ে দুই ঘণ্টা করা হতে পারে। রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় এমনটি দেখা গেছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রাত সোয়া ৮টায় বিদ্যুৎ যায়। আসে রাত ৯টা ৫ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বৈঠকে দেশের সব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে লোডশেডিংয়ের সময় জানাতে তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অনুসারে ঢাকার দুই বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) তাদের গ্রাহকদের জন্য এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করা দিচ্ছে। যা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
দেশকন্ঠ/অআ