দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি আনুমানিক ত্রিশ কিলোমিটার বেগে চালাচ্ছিলেন চালক। তাকে বারবার না করার পরও রিকশাটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেননি। বংশাল নর্থ সাউথ রোড মাহমুদ টাওয়ারের সামনে বেপরোয়া গতির অটোরিকশাটি স্পিডব্রেকারের ওপর উঠতেই ঘটে দুর্ঘটনা। রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী এবং তার ভাই ছিটকে পড়ে যান রাস্তায়। মাথায় আঘাত পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত্যু হয় ইডেন ছাত্রী উম্মে সালমার (২৪)। ঘটনার সময় ওই অটোরিকশায় থাকা নিহতের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ হাসান এমন তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে, দুর্ঘটনাস্থলে সড়কের স্পিডব্রেকারে (গতিরোধক) কোনো চিহ্ন ছিল না বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
মোহাম্মদ হাসান বলেন, রিকশাচালকের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩২ বছর। পরনে ছিল লুঙ্গি। সদরঘাট থেকে রিকশাটি নেওয়ার পরেই সদরঘাটে কিছুটা যানজট পেরিয়ে ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত গতিতে চালাতে থাকেন চালক। তিনি মোটরসাইকেলের মতো করে চালাচ্ছিলেন। রিকশায় থাকা আমি ও উম্মে সালমা বারবার তাকে অনুরোধ করি যে, আস্তে চালান। কিন্তু অটোরিকশার চালক আমাদের কথায় কান দেননি। দুর্ঘটনার পর আমাদের খারাপ অবস্থা দেখে তিনি পালিয়ে যান। হাসান জানান, উম্মে সালমার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। সেখানেই জানাজা শেষে দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
এদিকে রাজধানীর বংশাল থানার (এসআই) আলমগীর হোসেন বলেন, পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। রাতের কারণে চালককে স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে না। তিনি জানান, এই ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা রাতে মোটরবাইকের গতিতে ছুটতে থাকে। তাদের কোনো প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স নেই। তিনি আরও জানান, রাস্তায় থাকা স্পিডব্রেকারটা হয়তো অন্ধকারের কারণে দেখতে পাননি অটোরিকশাচালক। তবে স্পিডব্রেকারে কোনো মার্কিং (চিহ্ন) ছিল না। প্রসঙ্গত, রাজধানীর বংশালে অটোরিকশা উল্টে উম্মে সালমা নামে ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ভোর সোয়া ৪টার দিকে বংশাল নর্থ সাউথ রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পৌনে ৫টায় মৃত ঘোষণা করেন। ভোলা চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর গ্রামের গোলাম কিবরিয়ার মেয়ে সালমা। তিনি ইডেন মহিলা কলেজের রাজিয়া ছাত্রী নিবাসে থাকতেন।
তার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ হাসান জানান, ইডেন কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে অনার্স ও সম্প্রতি মাস্টার্স শেষ করেছেন সালমা। ঈদের ছুটিতে তিনি গ্রামে গিয়েছিলেন। গত রাতেই তার (হাসান) সঙ্গে লঞ্চে করে ঢাকায় ফেরেন। সদরঘাট নেমে অটোরিকশা যোগে হোস্টেলে ফিরছিলেন সালমা। পথে বংশাল নর্থ সাউথ রোডে তাদের বহনকারী অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়েন সালমা। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে একটি ভ্যানে করে ঢামেক হাসপাকালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান। তাৎক্ষণিকভাবে বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দুলাল কুন্ডু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বেপরোয়া গতির একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে ইডেন ছাত্রী সালমার হাসপাতালে মৃত্যু হয়। আর রিকশায় থাকা তার চাচাতো ভাই হাসান সামান্য আহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই সেখান থেকে রিকশাচালক পালিয়ে যান।
দেশকন্ঠ/অআ