• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৭ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৭:৩৬
দলের সঙ্গে অভিভাবক যাবেন এটা ঠিক নয় : যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

এই দায় কার ফেডারেশন নাকি দূতাবাসের

মোরসালিন আহমেদ : ইতালিতে ফিদে ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চেস চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে। এ আসরে আমাদের কোমলমতি একঝাঁক দাবাড়ু, ভবিষৎতে যাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করার সম্ভাবনা রয়েছে- তাদের অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু তারা জীবনের শুরুতেই ইতালির ভিসা না পেয়ে যে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে। এই দায় কে নেবে? বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন চেষ্টা করলেই ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিজেদের আরো চৌকসভাবে উপস্থাপন করতে পারত। কিন্তু তাদের নির্বুদ্ধিতার কারণে সবটাই মাটি হলো। 
 
আগামীদিনের দাবাড়ু হবেন যারা, তারা অবশ্যই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে চৌষট্টি বোর্ডের দাবার জমিনে যুদ্ধের দামামা বাজাবেন। এই দামামা বাজানোর জন্য প্রকৃতিঅর্থে ফেডারেশন কতটা তাদের প্রস্তুত করে তুলেছে, এ নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে।
 
বর্তমান সময়ে দাবা ফেডারেশন অত্যন্ত স্বাবলম্বী। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে কর্মকর্তারা কতটা সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে পারছেন; তা ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বাহাবা পাওয়া যায়, কিন্তু আমাদের দাবার পাইললাইনের অবস্থা খুবই নাজুক। এ মুহূর্তে হাতে গোণা মাত্র কয়েক খুদে প্রতিভাবান দাবাড়ু ছাড়া দাবার পাইপলাইন বড়ই নড়বড়ে। বিদেশের মাটিতে কোনো টুর্নামেন্ট থাকলে কোনো মতে তাদের ঘষেমেজে ঠিক করার প্রস্তুতি চলে। টুর্নামেন্ট শেষে সেই আগের চেহারায়। কেনো কোমলমতি দাবাড়ুরা ভাল খেলতে পারেনি, কিংবা কোথায় কোন চালে ভুল করেছে, ব্লান্ডার করেছে তা টুর্নামেন্ট শেষে শুধরিয়ে দেওয়ার জন্য ফেডারেশনকে উদ্যোগী হতে দেখা যায় না। দাবা উন্নয়নে কঠোর অনুশীলন আর দক্ষ কোচের দরকার হয়। কোমলমতি খুদে, প্রতিভাবান ও উদীয়মান দাবাড়ু এসব সুযোগ-সুবিধা কতটা পাচ্ছেন তা প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে। নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় এমন উথ্থান বা সাফ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন কিন্তু একদিনের ফসল নয়। আজকের এই সাফল্যের জন্য ফুটবল কর্মকর্তারা সেই ২০১৬ থেকে প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন। যার ফসল তুলেছেন অর্ধ যুগ পর।
 
বছরে একাধিক গ্র্যান্ডমাস্টার্স, আন্তর্জাতিকমাস্টার্স, রেটিং টুর্নামেন্টসহ ফেডারেশনের গতানুগতিক নানাধরনের আয়োজনে দাবা ফেডারেশনের ব্যয় গড়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। অথচ প্রশিক্ষণ খাতে ফেডারেশনটির বাজেটবরাদ্ধ অর্ধ কোটিও নয়। তাহলে কিভাবে পাইপ লাইপ থেকে আগামীদিনের তারকা দাবাড়ু বেরোবে? ইউরোপ-আমেরিকার কোনো দাবা টুর্নামেন্টের খবর পেলে ব্যক্তিবিশেষ তিন-চার কর্মকর্তার ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, কে কোন টুর্নামেন্টে কে কতটা ভাল করতে পারবে কিংবা কতটা ভাল করার সম্ভাবনা রয়েছে বা তাদের প্রস্তুতিটাই কেমন- তা বিবেচনায় না এনে দলভারী শুরু হয়। তাতে লাভ দলের সঙ্গে কর্মকর্তারা বেশি যেতে পারবেন। এখন তো কর্মকর্তাদের দেখাদেখি অভিভাবকরাও দলের সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকা নিজ খরচায় যাবার কালচার শুরু করে দিচ্ছে। যার মাশুল গুণতে হলো ইতালির ভিসা না পেয়ে- দেশকে, জাতিতে, কোমলমতি দাবাড়ুদেরকে।
 
ইতালি দূতাবাস বাংলাদেশ দলকে ভিসা দেয়নি- কেনো দেয়নি, এ নিয়ে কিন্তু দাবা আঙিনায় নানারকম মুখরোচক খবরও বাতাসে উড়ছে। দাবা ফেডারেশন ইতালিতে দল প্রেরণের ক্ষেত্রে দূতাবাসে যে নামের তালিকা পাঠিয়েছে সেখানে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেননি। দেশের একটি শীর্ষ দৈনিক শিরোনাম করেছে ‘পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ দাবা দলকে ভিসা দেয়নি ইতালি’। এটা রীতিমতো দেশের জন্য অত্যন্ত অপমান ও লজ্জাজনক। যদি সত্যিই হতো তাহলে দাবা ফেডারেশন এখনো কেনো তীব্র প্রতিবাদ করেনি কিংবা আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ করলো না সেটাই এক অজানা রহস্য! 
 
বিশেষ করে যে অভিভাবককে নিয়ে সবার ধারণা উনার কারণে ভিসা হয়নি তার নামটি কার্যনির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন মিলেছিল কিনা সেটা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন। কারণ বিদেশের মাটিতে যেকোনো দল পাঠানোর আগে কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দাবা ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে সুব্রত বিশ্বাস, নোশিন আঞ্জুম, সাদাত কিবরিয়া, নীলাভা চৌধুরী, জান্নাতুল ফেরদৌসদের সঙ্গে ওয়ালিজা আহমেদ এবং ওয়াদিফা আহমেদের সঙ্গে তার মা তসলিমা খাতুনের নাম ছিল। টিম লিডার ছিলেন ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য মাহমুদা হক চৌধুরী মলি। এদিকে বিদেশ ট্যুরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় ফেডারেশনে দু একজন ছাড়া তাদের বিদেশে যাবার মতো আর যোগ্য লোক নেই। দাবার সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিজ্ঞমহল মনে করেন বতর্মান বিশ্বে আর্থিক মন্দা অবস্থায় এ মুহূর্তে বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে আমাদের মতো দেশের থেকে এতোবড় লটবহর পাঠানোর সিদ্ধান্ত সমীচিন ছিল না। 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফেডারেশন কর্মকর্তা বলেন, ওয়ালিজা-ওয়াদিফার আব্বা দীর্ঘ দিন ধরে ইতালিতে বসবাস করছেন। তার দুই মেয়ে ওয়ালিজা-ওয়াদিফা ইতালির মিলানে জন্মগ্রহণ করেন। কি কারণে তারা দেশে ফিরে এসেছিলেন আমরা জানি না। তারা সেখানে বৈধ কিংবা অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন কিনা সে তথ্য আমাদের জানা নেই। হয়ত বা ইতালি দূতাবাস জানতে পেরেছে তার বাবা ইতালি থাকেন। এখন তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী ইতালি গেলে পুরো পরিবার সাধারণ মানুষের মতো থেকে যাবার আশঙ্কা থেকে যায় বিধায় সেই কারণেই হয়তো কাউকে ভিসা দেয়নি।
 
এদিকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি'র সঙ্গে ১২ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে দেখা হলে দাবা সংক্রান্ত ইতালির ভিসা না পাবার ব্যাপারে দৃষ্টি আর্কষণ করলে তিনি বলেন, দলের সঙ্গে খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা যেতে পারেন। কিন্তু দলের সঙ্গে অভিভাবকও যাবেন এটাকে তো কখনো উৎসাহিত করা সমীচিন নয়। তবে বিষয়টি আমি দেখব। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবউদ্দিন শামীম ১৩ অক্টোবর কথা প্রসঙ্গে জানান, বিষয়টি তারা বিশ্ব দাবা সংস্থা ও আয়োজক ইতালিকে জানিয়েছে। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। তবে সবশেষ তথ্য হচ্ছে ইতালি দূতাবাস মৌখিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছে। 
লেখক : সাবেক দাবাড়ু

  মন্তব্য করুন
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।