►অনিরুদ্ধ ব্রতচারী
অর্থ পাচার সময়ের সেরা বিষয়, কেননা একটা পরিবার থেকে সম্পদ বা অর্থ কারো অগোচরে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ায় পাচার। তেমনি দেশের সম্পদ বা অর্থ দেশের প্রচলিত আইন কানুন বিধি বিধান অনুসরণ না করেই অগোচরে ফাঁকি দিয়ে অন্য কোন দেশে স্থানান্তর করা অর্থ পাচার। অর্থ পাচার দণ্ডনীয় অপরাধ। কেননা অর্থ নিজে নিজে পাচার হয় না কেউ বা কারা মিলে পাচার করে। অর্থ পাচার সংঘবদ্ধ কাজ। এই কেউ বা কারা আইন আদালতের সীমার মধ্যেই থাকে কিন্তু তাদের বা তাকে স্পর্শ করা যায় না, বা জানা গেলেও ততদিনে অনেক আয়ত্বের বাইরে চলে যায়।
অর্থ পাচার হয় আয়ের ঘোষণা না দেওয়া বা ঘোষণা ছাড়াই অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া। অর্থ প্রেরণের যে আইনের আওতায় নিয়ম আছে সেগুলো ফলো করা হয় না। সে ক্ষেত্রে কেউ কেউ বিদেশে যাবার সময় লাগেজে করে নিয়ে যায়, কেউ গন্তব্য দেশে ডলার বা সেদেশের মুদ্রা নেয় এবং নিজ দেশে অর্থ অর্থাৎ টাকা দিয়ে থাকে। আমদানি ও রপ্তানি (পণ্য, সেবা, কনসালটেন্সি) করার সময় অতিরিক্ত মূল্য শোধ বা রয়ালটি প্রদান বাবদ অর্থ প্রেরণ করে অর্থ পাচার করা হয়। কোন পণ্য বা সেবার মূল্য বা রয়াল্টি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি প্রেরণ করা হয় এবং প্রাপককে বলা হয় আমার অমুক ব্যাংক একাউন্টে বা অমুক ব্যাক্তির কাছে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে। ইদানিং শিক্ষা ও চিকিৎসা বাবদ অর্থ প্রেরণ করা হয় যা প্রয়োজনের থেকে বেশি এমনকি রুগী না হয়েও রুগী সাজে এবং পড়ালেখা শেষ হয় না। এটি মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বৈধ ভাবে অর্থ সরিয়ে নেওয়া। যারা খুব বেশি বিদেশ ভ্রমণ করে তারাও অনুমোদনের অতিরিক্ত অর্থ সাথে নিয়ে যায়। আর হুন্ডি তো আছেই। তাহলে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না, কেউ করছে কি না এসব ধরলেই বা নজরদারি বৃদ্ধি করলেই অর্থ পাচার মোটামুটি বন্ধ করা সম্ভব।
যাদের আয়ের উৎস প্রকাশ করে না কিন্তু প্রচুর আয় করছে তারাও একটা পর্যায়ে গিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করে। এ জাতীয় আয় কর ট্যাক্স দিয়ে বৈধ করার সুযোগ আছে কিন্তু পরবর্তী প্রতিক্রিয়া খুবই বিরক্তিকর, হয়রানিমূলক এবং নিজেকে কালো টাকার মালিক হিসেবে ঘোষণা দেবার প্রেস্টিজ কাজ করে। ফলে এই অর্থ হুন্ডি বা অন্য কোন উপায়ে বিদেশে পাচার করে। কোন কোন দেশে আছে সেভাবেই হোক অর্থ আসলে সেগুলো দেশেই বিনিয়োগ করতে হয় এবং এজন্য সেই ব্যক্তিকে কোন ঝামেলা সহ্য করতে হয় না। এসব রাষ্ট্র বা সরকার গোপন রাখে। কিন্তু যেখানে অকাট্য প্রমাণ আছে দুর্নীতির বা অনিয়মের সেখানে শাস্তি ঠিকই দিচ্ছে।
অর্থ পাচার সম্পর্কে বাংলাদেশে বাস্তবতার চেয়ে হুজুগ প্রচলিত বেশি। কোন কোন শর্ত পূরণ হলে অর্থ পাচার হবে সেগুলো কেউই খেয়াল করে বিবেচনা করে কথা বলে না। যার যার মত করে বলে। আসলে পাচার হয়ে অন্য দেশে গেলে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধীনে থাকে না। আর এমন না যে এর টাকা ওর কাছে আছে সেখানে থেকে নিয়ে আসবে। যেখানে অর্থ যায় সেখানে প্রেরণকারী ব্যক্তির থেকে অর্থকে বেশি গুরুত্ব ও সুরক্ষা দেওয়া হয়। সে পেতে প্রমাণ করতে হবে যে অমুক দেশ তুমি এই অর্থ আমার দেশকে ফেরত দিতে বাধ্য। এই বাধ্যতা তৈরি হয় উভয় দেশের মধ্যে অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপরাধের তথ্য, বিচার ও অভিযুক্ত বিনিময় চুক্তির আওতায়। এখন বাংলাদেশ চাইলেই কি সুবিধাভোগী সেই দেশ এ ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হবে? সে দেশের সরকার ও জনগণ কি মেনে নিবে? যদি জনগণ না মেনে নেয় তাহলে সে দেশ কিন্তু এ ধরনের সম্পর্কে আবদ্ধ হবে না। অনেক দেশেই অর্থের উৎস জিজ্ঞেস করে না তারা শুধু অর্থকে প্রাধান্য দেয় সে অর্থ বিনিয়োগের নানান সুযোগ রেখেছে। ফলে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে তারা মান মর্যাদা ও সুবিধা দেয়। যদিও সে অর্থ পাচারকারী হিসেবে আরেক দেশে সন্দেহযুক্ত বা অভিযুক্ত বা অপরাধী। এ বিষয়গুলো তখন জটিল ও ব্যয়বহুল হয়। দেখা গেছে পাচারের এককোটি টাকা ফেরত আনতে দশ কোটি টাকা খরচ হয়ে যায়। তাই সুযোগ যেহেতু আছে সেহেতু নিজ দেশেই অর্থ পাচারের উপায়গুলো মনিটর ও বন্ধ করার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে যে সুযোগ নেয় এবং সুযোগ নিবে তাই বলে কি সুযোগ দেব?
দেশকণ্ঠ/আসো