• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৫:২৯
হকির স্মৃতিকথা

খেলাতে মানুষ চেনা

মেজর  (অব.) চাকলাদার : হকি এক ছন্দের খেলা। ড্রিবলিং করে গতিতে এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে দর্শক যে আনন্দ পায়; তা বহুদিন তাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল থাকে।
 
১৯৮২ সালে করাচিতে খেলার সময় বাম পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পাই। টিমের মাথা ছিলেন সাদেক ভাই। তাকে বললাম আগামী খেলা খেলতে পারবো না। সাদেক ভাই বললেন খেলতে হবে; কেনো? জানালাম- ব্যথা পেয়েছি; হাঁটতেই তো পারছি না। একস্ট্রা থেকে এক জনকে নামান। সাদেক ভাই বললেন না; তুমিই খেলবে। সাদেক ভাইর মুখের উপর কথা বলার সাহস কোন দিনও ছিলনা। রুমে চলে আসলাম। একটু পর দেখি বালতি ভরা বরফ দিয়ে একস্ট্রা এক খেলোয়াড় পাঠিয়েছেন, সে সারা রাত বাম পায়ের হাঁটুতে বরফ চেপে রাখল। খেলার জন্য মাঠে গেলাম। সাদেক ভাই বললেন, তোমার দৌড়াতে কষ্ট তবে তোমার উপর আমার কনফিডেন্স আছে, তুমি ওয়ান টাচে খেলবে। বল পেয়ে ‘হ্যান্গ’ না করে সাথে সাথেই বল দিয়ে দিবে। তাই করলাম। বেশ কিছু ‘স্কুপ’ করলাম (ফুটবলে যেটা ‘লব’ হকিতে সেটাই ‘স্কুপ’)। ভালই খেললাম। করাচি থেকে ঢাকায়। পায়ে ব্যথা। রুমেই শুয়ে রইলাম। আমি তখন ফার্স্ট বেংগল বা সিনিয়র টাইগারর্স-এ। দুর্দান্ত আর শ্রেষ্ঠ এক ব্যাটেলিয়ন। আমার ব্যাটেলিয়ন তখন বান্দরবনে। আমাকে বলা হল করাচিতে প্রতিটি খেলা খেলেছ আর এখানে রুমে শুয়ে থাকবে তা হবে না। কর্নেল ফেরদৌস আমার সিনিয়র। নিজেও জাতীয় হকি দলের গোলরক্ষক। স্যার বললেন, তুমি সিএমএইচ যাও। দলে আমার  কোর্সমেট মোসাদ্দেক আছে; চলো সিএমএইচ যাই। গেলাম। এক্সরে হলো। পরদিন গেলাম রিপোর্ট আনতে। নার্সিং এ্যসিস্ট্যান্ট আমাকে এক্সরে রিপোর্টটা দিল। লেখা আছে লেফট নি লোয়ার প্যাটেলা ফ্রাকচার। বললাম, এই আমার রিপোর্টটা দাও, এটারতো লেফট নি ফ্রাকচার রিপোর্ট আছে। নার্সিং এ্যাসিস্ট্যান্ট বলল, স্যার আপনি ক্যাপ্টেন চাকলাদার না? আমি বললাম; হ্যা। বলল, আপনার নি ফ্রাকচার হয়েছে। দাঁড়িয়ে ছিলাম, থতমত অবস্থা, চার পাঁচ কদম দূরে চেয়ার, যেতে চাইলাম। পারলাম না। মোসাদ্দেককে বললাম, আমাকে ধর। এর নামই শক এফেক্ট। করাচিতে আন্তর্জাতিক সবগুলো ম্যাচ খেলেছি। সকালেও মাঠে প্রাকটিস করেছি আর এখন! পা প্লাস্টার করে সিএম এইচে এ্যাডমিট করে দিল।
 
আব্দুস সাদেক ভাই এক বোতল হরলিকস নিয়ে দেখতে আসলেন, আর রুম হয়ে গেল ফলের দোকান। ভাল লাগল, যেই দেখতে আসে সেই আমার পায়ের প্লাস্টারে সিগনেচার করে যায়। সিগনেচারের আর যায়গা নাই, মোসাদ্দেক বলল, তোমার ডান পা প্লাস্টার করতে বলি। তা হলে বাকিরা ডান পায়ের প্লাস্টারের উপরও  সিগনেচার দিতে পারবে। আলিউজ্জমান ভাই হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, ইনসিওরেন্সের বড় কর্মকর্তাও ছিলেন। পা ইনশিওরেন্স করা ছিল। পা ফ্রাকচারের বদৌলতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা পেলাম। আলিউজ্জমান ভাই সব বন্দোবস্ত করে দিয়ে ছিলেন।
 
মোসাদ্দেকের কথা বলছিলাম, ইতিহাসবিদ প্রফেসর কে আলির সন্তান। মোসাদ্দেক তখন লেফটানেন্ট কর্নেল। কয়েক বছর আগে এক বৃষ্টির রাতে বাসাতে আসা অতিথিকে মোটর সাইকেল করে জাহাঙ্গীর গেটের কাছে নামিয়ে ফিরতি পথে শাহীন সিনেমা হলের সামনে ডিভাইডারে মাথায় বারি খেয়ে ওখানেই স্পট ডেথ। এক দুর্দান্ত অফিসার আর বিশাল মনের মানুষ, আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে চিরতরে হারালাম—
‘তুমি যে গিয়াছো বকুল বিছানো পথে
দিয়ে গেছো মোরে শত পরাজয়
ফিরে এসো জয় রথে’
 
জয় রথে ফিরবে না, আমারাই  স্মৃতি আঁকড়ে পরে থাকব।
পরিস্কার মনের মোসাদ্দেক  নিশ্চয় বেহেস্তের দাবিদার ।
 
লেখক : সাবেক অধিনায়ক জাতীয় ও সেনাবাহিনী হকি দল এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।