পথরেখা অনলাইন : এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২২টি দেশের মধ্যে দু’দিনব্যাপি বাংলাদেশ, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো একটি আঞ্চলিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশ থেকে একটি বিশেষ কৃষি পণ্যের উপর জোর দেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রদর্শনী প্রকল্প হিসাবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর ওয়ান কান্ট্রি ওয়ান প্রায়োরিটি প্রোডাক্ট (ওসিওপি) উদ্যোগে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রচারণা করছে কাঁঠালের।
অন্যান্য আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মঙ্গোলিয়া, নাউরু, নেপাল, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপাইন, সামোয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, টোঙ্গা, ভানুয়াতু, এবং ভিয়েতনাম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে প্রতিটি দেশের প্রতিনিধিরা ঢাকায় জড়ো হয়েছিলেন। যেখানে তারা তাদের "বিশেষ কৃষি পণ্যের" টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে কচুর মূল থেকে শুরু করে চা, হলুদ, ভ্যানিলা, কাউন, এবং কোকোয়া।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, উচ্চমান সম্পন্ন এবং দেশ-নির্দিষ্ট খাবারের উৎপাদন ও প্রচার দেশে এবং বিদেশে সেসকল খাবারের ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। যদিও বিশ্বের অনেক দেশের খাদ্য এবং কৃষি পণ্য সেই দেশের স্থানীয় তথাপি বেশিরভাগ দেশে অন্তত একটি কৃষি পণ্য পাওয়া যায় যা সব থেকে ভিন্ন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এই বছরের শুরুতে বাংলাদেশে কাঁঠালের ক্ষুদ্র চাষি ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য একটি প্রকল্প চালু করে।
বাংলাদেশের এফএও প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন বলেন: “এই আয়োজন বাংলাদেশের জাতীয় ফল সম্পর্কে প্রচার করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ। বিশ্বব্যাপী কাঁঠালের ব্যাপক ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উৎপাদনকারীদের সহায়তা করছে।”
কাঁঠাল দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রচুর পরিমাণে জন্মানো একটি ফল। ভারতের পরেই বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁঠাল উৎপাদনকারী দেশ। দেশের মোট ফল উৎপাদনের এক পঞ্চমাংশেরও বেশি হয় কাঁঠালের উৎপাদন (বার্ষিক উৎপাদনের দিক থেকে আম এক নম্বর ফল)। সারা দেশব্যাপী কাঁঠালের চাষ হয়। জাতীয় উৎপাদনের প্রায় এক চতুর্থাংশ ঢাকায় উৎপাদিত হয়। অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় কাঁঠাল উৎপাদনকারী জেলাগুলো হল গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, এবং নরসিংদী। বেশিরভাগ কাঁঠাল ব্যক্তিগত জমিতে চাষ করা হয় এবং মহিলারা উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে জড়িত থাকে। পুষ্টিকর কাঁঠাল ভিটামিন, খনিজ এবং ক্যালোরির একটি ভাল উৎস। এত পুষ্টিগুণ এবং রপ্তানির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কাঁঠাল এখন পর্যন্ত খুব বেশি সাড়া জাগাতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকার ওসিওপি উদ্যোগের আওতায় কাঁঠাল নির্বাচন করেছে। মিশর, মালাউই, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং উজবেকিস্তানের সাথে বাংলাদেশকে প্রথম পাঁচটি দৃষ্টান্তমূলক দেশের একটি দেশ হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
গাজীপুরের কাঁঠাল চাষি কাজী মুহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, “কাঁঠাল অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর একটি ফল। গাছ, পাতা, ফল এবং বীজ সবই ব্যবহার করা যেতে পারে। কাঁঠাল উৎপাদন করা সহজ এবং এতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল পণ্য। কাঁঠাল বিপণনের আরও জায়গা তৈরী হলে তা আমার মতো কৃষকদের জন্য আরও লাভজনক হয়ে উঠতে পারে।”
পথরেখা/রাসু