• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
    ১০ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ২১:৫৫
হযরত মুসলিম ইবনে আকিল

পরীক্ষিত এক শহীদ মর্দে মোজাহিদ

জি আর সুমন : হযরত মুসলিম পরীক্ষিত এক প্রেমিকের নাম। যার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে বুলন্দ হবে। মুসলিম ইবনে আকিল অর্থাৎ আকিলের পুত্র মুসলিম। আকিল ইবনে আবু তালিব অর্থাৎ আবু তালিবের পুত্র আকিল। আবু তালিব হচ্ছেন হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (দ.) এর সম্মানিত চাচা ও মাওলা আলী (রা.) এর ভাগ্যবান পিতা সেই হিসেবে হযরত আকিল ও মাওলা আলী (রা.) হচ্ছেন আপন সহোদর এবং হযরত মুসলিম হচ্ছেন মাওলা আলীর ভাতীজা। আলী পুত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও হযরত মুসলিস হচ্ছেন আপন চাচাতো ভাই।
 
হযরত আমিরে মোয়াবিয়া হিজরী ৬০ সনে মৃত্যুবরণ করেন তার অবর্তমানে মুসলিম বিশ্বের স্থলাভিষিক্ত খলিফা নিযুক্ত হোন মোয়াবিয়া পুত্র মদ্যপ ইয়াজিদ যা তখনকার সময়ে সাধারণ মুসলমান ও আহলে বায়াতের প্রেমিক ও সমর্থন কারীরা মেনে নিতে পারেনি কারণ ইসলামের যে আদর্শিক  শৃঙ্খলিত জীবন সে জীবনে অভ্যস্ত ছিলেননা মোয়াবিয়া পুত্র মদ্যপ ইয়াজিদ।
 
হযরত আমিরে মোয়াবিয়া ও হযরত ইমাম হাসান (রা:) সাথে সন্ধি চুক্তির বরখেলাফ করে ইয়াজিদকে ক্ষমতায় বসানো নিয়ে আমিরে মোয়াবিয়ার প্রকাশ্য ওয়াদা ভঙ্গের কখা ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে যা আহলে বায়াতের প্রেমিকদের মনে কষ্টদেয়।
 
ইয়াজিদের অত্যাচার ও নিপিড়নে কুফার সাধারণ জনগণ এমনকি বিভিন্ন গোত্রের বিশিষ্ট নেতাগত একত্রিত হয়ে ইমাম হোসাইনকে চিঠি প্রদান করেন কুফায় এসে আনুগত্যের বাইয়্যত গ্রহন করানোর জন্যে, একে একে ১২০০০ চিঠি ইমাম হোসাইন (রা.) হস্তগত হয়।
 
মহামানব তনয় হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ছিলেন কোমল হৃদয়ের মানুষ। তিনির নানাজানের রেখে যাওয়া ইসলামকে কোলষিত করবে এত বড় স্বর্ধা তিনি মেনে নিতে পারেননি এমং নিপিড়ীত মানুষের পাশে দাড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে কুফাবাসীদের কাছে চিঠি লিখেন ও কুফার সঠিক অবস্থা জানার জন্যে আপন চাচাতো ভাই হযরত মুসলিমকে কুফায় প্রেরন করেন। মুসলিম ইবনে আকিল কফায় পৌছে মুখতার ইবনে আবী ওবায়দা সাকাফীর বাড়িতে অবস্থান করেন।
 
কুফাবাসী ইমাম হোসাইনের চিঠি ও মুসলিম ইবনে আকিলকে পেয়ে খুবই আন্দিত হোন এবং উৎসাহ ও সম্মানের সহিত তার কাছে পালাক্রমে প্রায় আঠারোশত লোক আনুগত্যের বাইয়াত গ্রহন করেন। এদিকে কুফায় মুসলিমের আগমনের খবর পেয়ে ইয়াজিদ ইবনে মোয়াবিয়া নোমান ইবনে বশীরকে কুফার গভর্ণরের পদ থেকে সরিয়ে ইবনে যিয়াদকে নিয়োগ দান করেন এমনকি মুসলিম ইবনে আকিলের সকল অনুসারিদেরকে যে ভাবেই হোক ছত্রভঙ্গ করে দেয়া, প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে তাদের ক্রয় করা এবং মুসলিমকে হত্যা করার জন্য কঠোর ভাবে নির্দেশ দান করেন ইয়াজিত ইবনে মোয়াবিয়া।
 
এখবর যখন কুফায় ছরিয়ে পরেন তখন মুসলিম ইবনে আকিল কিছুটা বিচলিত হয়ে পরেন এবং মুখতারের যর ছেড়ে হানি ইবনে উরওয়ার ঘরে আশ্রয় নেন। মুসলিম ইবনে আকিলকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে ইবনে যিয়াদ হানি ইবনে উরওয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হানি ইবনে উরওয়ার হত্যার খবর যখন মুসলিম ইবনে আকিলের কর্ণগোচর হয় তখন মুসলিম এবং তাঁর বাহিনী ইবনে যিয়াদের সৈন্যদের সাথে তাৎক্ষণিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হোন এদিকে ইবনে যিয়াদ ভয়ে তাঁর প্রসাদে আত্ন গোপন করেন। যুদ্ধ দিন গরিয়ে রাতের অন্ধকারে পর্যবসিত হয়।
 
রাতটি ছিল ভয়ানক কাল রাত আর সে রাতেই ওবায়দুল্লা ইবনে যিয়াদ কূটনৈতিক দাবার চালে অর্থের বিনিময়ে মুসলিমের প্রায় সকল লোকদেরকে ক্রয় করে ফেলে। ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের মিথ্যা প্রলোভনে প্রতারিত হয়ে  বেশির ভাগ মানুষই ইমামের প্রতিনিধিকে (মুসলিমকে) ত্যাগ করেন। মুসলিমের সঙ্গী সাথীরা ধীরে ধীরে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। একে একে সবায় চলে গেল শুধু মাত্র দশজন লোক ছিল তারাও মুসলিম ইবনে আকিলকে নামাযে রেখে পিছন থেকে পালিয়ে যায়। মুসলিম নামায শেষ করে দেখে তাঁর সাথে অবশিষ্ট আর কেউ রইল না। তিনি দ্রুত মসজিদ থেকে বের হয়ে অসহায়ের মতো শহরের অচেনা অলিগলির মধ্যে পথ চলতে চলতে তুষ্ণার্ত হয়ে তাওয়া নাম্নী নামক এক ভদ্রমহিলার ঘরে পানির সন্ধান করেন, তাওয়া নাম্নী তাঁর তৃষ্ণা নিবারণ করান এবং রাতে তাঁর বাসায় থাকতে দেন। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় তাওয়া নাম্নীর এক ছেলে ছিল সে ছিল মদ্যপ। মদের টাকা যোগানোর জন্য ইবনে যিয়াদের কাছে সব ফাস করে দেন।
 
ইবনে যিয়াদ খবর পেয়ে মুহাম্মদ ইবনে আশআসকে একদল লোক সহিত প্রেরণ করেন মুসলিমকে গ্রেফতার করার জন্যে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মুসলিম একাই তাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দেয় এবং শত্রুপক্ষের অনেকগুলো লোককেও হত্যা করে এ অবস্থায় ইবনে আশআস মুসলিমকে যুদ্ধ থামানোর আহবান জানান এবং তাকে নিরাপত্তা দানের কথাও প্রকাশ করেন। মুসলিম তাদের চতুরতা বুঝতে পেরে মোনাফেক ও ফাসেক হিসেবে আক্ষায়িত করে বলেন তোমাদের কোন সাহায্য ও নিরাপত্তা আমার দরকার নেই একমাত্র মহান রবই আমার সহায়,এই বলে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মুসলিম শেষ রক্ষা আর করতে পারেনি। নিষ্ঠুর যিহাদ বাহীনির হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে প্রেরিত হোন এবং পাষবিক নির্যাতনের শিকার হোন।
 
অবশেষে ইতিহাস বিখ্যাত এই মর্দে মোজাহিদকে ইবনে যিয়াদ বকর ইবনে হামারানকে দারুল ইমারার ছাদের উপর মুসলিমকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করার নির্দেশ দেন। মুসলিম যাওয়ার সময় তাছবীহ পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছিলেন। ছাদের উপর পৌছা পর্যন্ত তিনি রাসূল (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করতে থাকলেন এবং এই বলে আফসোস ও ক্রন্দ্রন করতে থাকেন ইমাম হোসাইন (আ.) যেন কুফায় না আসেন। অবশেষে ইতিহাস বিখ্যাত এই মর্দে মোজাহিদকে দারুল উমারার ছাদ থেকে ধক্কা দিয়ে ফেলে শহীদ করা হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)।
 
সম্মানিত পাঠক ইসলাম ভোগে প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং ত্যাগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সত্য এবং মিথ্যের পার্থক্যের যে উপমা রচিত হয়েছিল কারবালা প্রান্তরে তা প্রেমিকের মর্ম চেতনায় আমৃত্যু উদ্বাসিত হবে। যুগে যুগে মোনাফেকেরা ও ফাসেকেরা গাদ্দারি ও ওয়াদার বরখেলাফ করেছিল, করছে এবং করবে পাশাপাশি মুসলিমেরা মানবতার তরে এভাবেই তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন এবং বিলিয়ে যাবেন শুধু প্রেক্ষাপট যুগে যুগে ভিন্নতর হবে।
লেখক : প্রভাষক, কালিগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।