►অনিন্দিতা আরিফ চৈতি
৭ মার্চ ২০২৪ শুরু হয়েছে সতীর্থ শিরোনামে পঞ্চ আঁকিয়ের দলীয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনী । আয়োজন আঙিনা শিল্পগুরু সফিউদ্দীন শিল্পালয়। চলবে টানা ৭দিন। ৭-১২ মার্চ এ চিত্র প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলবে।
১৯৭২ ব্যাচে পাশ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছবিগুলোর দলীয় আয়োজনের শিল্পীরা হলেন— আলফা বেগম, জ্যোৎস্না মাহবুবা, নাজলী লায়লা মনসুর, সাঈদা কামাল ও সুরাইয়া চৌধুরী। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন মানবাধিকার কর্মী এবং শিল্পী খুশি কবির। শিল্পীময় আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভি। শিল্পীর ভাষায়, নানাকথনে উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে অনাবিল শান্তি-স্নিগ্ধতার বারতা ছড়িয়ে দিতে প্রজ্জ্বলন করা হয় আলোর দ্বীপশিখার।
উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ। ততক্ষণে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের প্রথম লগ্ন ছুঁয়েছে সময়ের চাকা। অভ্যাগতরা সবাই ধীরপায়ে ছুটলেন ছবিময় গ্যালারিতে। সেখানে এসে সবার চোখ আটকে গেল দেয়াল জুড়ে সুশোভিত নানা ধরনের বর্ণময় শিল্পকর্মে। ছবিগুলো লাল, সবুজ, হলুদ রঙের আঁচরে আঁকা বাস্তব-পরাবাস্তব ধাঁচের ছবি। ১৯৬৭ এসএসসি ব্যাচের এই শিল্পীরা যখন যাপিত জীবনপথে ধীরে চলার গতিতে; তখনও তাদের চিত্রকর্মের কল্পনার রাজ্যে নানা মিশেল রঙের নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ। প্রদর্শনীর ফ্রেমবন্দি ছবিগুলো তারই প্রমাণ। আঁকাআঁকির বিষয়বস্তু, সময়কাল খুব পেছনের নয়; সমসাময়িক। ছবিগুলো যেন বিমূর্ত আর প্রতিবাদমূখর; আবার কখনো স্বপ্ন-ভালোবাসার জীবনকথার সাক্ষী। কোনো ছবির ভাষা— অবারিত সুন্দর আর শান্তির বারতাময়।
ভিন্নমাত্রার এই প্রদর্শনীতে পাঁচ সহপাঠীর আঁকা ৫০টি ছবি শোভা পাচ্ছে। এই ছবিগুলো বেশির ভাগই করোনাকালে আঁকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনিস্টিটিউট থেকে ১৯৭২ সালে পাশ এই পঞ্চশিল্পী নিজ নিজ পেশার পাশাপাশি আঁকিয়ে জীবনের কথাও ভুলে যাননি। পেশাদার ও সংসারের কর্মময় জীবন দ্বৈরথের ফাঁকে ফাঁকে তারা এঁকেছেন নানা ধাঁচের নান বিষয়বস্তুর ছবি। এ ব্যাপারে অন্যতম আয়োজন কারিগর জ্যোস্না মাহবুবা জানিয়েছেন, ‘শুধু করোনার সময় আমরা প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারিনি। এ ছাড়া আমাদের এই আয়োজন প্রায় নিয়মিতই হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে নাজলী লায়লা মনসুর পেশাদার চারুশিল্প। আঁকাআঁকির পাঠ দিচ্ছেন এখনও; চট্টগ্রাম চারুকলায়। অন্যপেশার থাকার পরও আমরা বাকি চারজন তুলি-কলম তুলে রাখিনি। বরং সময় পেলেই মন-হৃদয়ের ভালোলাগার ছবি এঁকেছি।’
ধানমন্ডিস্থ সফিউদ্দীন শিল্পালয়ের পঞ্চশিল্পীর যাপিত জীবনের নানা চিত্রকর্মে আর্ট গ্যালারি আলো ঝলমল করছে। প্রয়াত দেশসেরা আঁকিয়ে কাজী হাসান হাবিবের সহধর্মীনি উদ্যোক্তা জ্যোস্না মাহবুবা বলেন, ‘আয়োজনের মধ্যে নারী দিবসকে অন্যভাবে যাপনের প্রয়াস হিসেবে আমাদের কেউ কেউ নারীদের নিয়ে বিশেষ ছবি উপস্থাপন করেছি। ছবিতে নারীদের প্রতিবাদের ভাষা জানিয়েছি। আমাদের ১১ জনের একটি সামাজিক যোগাযোগের গ্রুপ আছে। এবার আমরা পাঁচজন ছবি নিয়ে দলীয় প্রদর্শনীর আয়োজন করছি। আমাদের ছবিগুলো আমাদের জীবনের এক একটি ভাবনাচিত্র।’
শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে উপচে পড়া ভিড় নানা থাকলে; বৃহস্পতিবারের নাগরিক যানজটের বিড়ম্বনা সরিয়ে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অক্সিজেন নিতে এসেছিলেন নানা বয়সী মানুষ। আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে এসেছিলেন কবি গবেষক ও উত্তরণের প্রকাশক এবং সম্পাদক ড. নূহ-উল-আলম লেনিন, তার সহধর্মীনি মুক্তিযোদ্ধ কাজী রোকেয়া সুলতানা রাকা, ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক ড. মুনতাসির মামুনদের মতো অনেকেই। উপস্থিত ছিলেন সফিউদ্দিন শিল্পালয়ের অন্যতম কর্ণধার শিল্পগুরু সফিউদ্দিনের ছেলে গুণীশিল্পী আহমেদ নাজির খোকন এবং তার স্ত্রী শিল্পী নাহিদা শারমিন। উদ্বোধনী দিনেই ঋদ্ধজনের উপস্থিতি প্রমাণ করছে আয়োজনের পরের দিনগুলোতে বাড়বে সংস্কৃতিপ্রেমীদের কোলাহল। ভিন্ন ঘরানার ছবির সঙ্গে স্নিগ্ধ সুর-মুর্ছনা আবেশ জড়ানো এই আয়োজনে আসতে পারেন আপনিও।
পথরেখা/আসো