• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৩:৪৭

ঈদ ছুটিতে আনন্দনগর কক্সবাজারে

ঈদের ছুটি এবার অবিশ্বাস্যভাবে ছিল প্রলম্বিত। ঢাকা শহর আবার গরমের কাছে আত্মসমর্পণ করে জীবন অতিষ্ঠ করে রেখেছে। দুই নাতনী সুরায়না আর সাররিনাহ, সুরায়না সমুদ্র দেখলেও সাররিনাহ দেখে নাই, তাই স্বিদ্ধান্ত- চল কক্সবাজার যাই। বাসার গোল টেবিল মিটিং। কিভাবে যাব। কক্সবাজার ট্রেন যাচ্ছ এখন। ঢাকা থেকে রাতের দামি দামি বাসে উঠলে ঘুম ঘুম সকালে পৌঁছে দেয় কক্সবাজারে। তবে সময় খেয়ে নেয়। ছুটির এক দিন যেতে আর এক দিন আসতে মানে রাস্তাতে দুই দিন শেষ।বাসার গোল টেবিল আলোচনাতে সব থেকে জ্ঞানি আমি, দাদুমনি সুরায়না আর দাদু মনি সাররিনাহকে রাখা হয় না। আমরা বলে অযথা আলোচনাতে বিঘ্ন ঘটাই। নারী নেতৃত্ব চলছে, হাসিনা, খালেদা, রওশন এরশাদ এদের অনুসরণে বাসাতেও বেগম সাহেবাদের দুর্দান্ত প্রভাব। বড় ছেলে সজীব তার মত হল রাস্তাতে দুই দিন নষ্ট না করে আকাশপথে যাওয়া যুক্তিসংগত। এবং হলো তাই;  ইউএসবাংলা এবারের বাহন। সর্বসাকুল্যে পঞ্চাশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লাগে।
 
কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর নিজস্ব রিসোর্ট জল তরংগ। পাঁচ তারকা স্টান্ডার্ড। গেট পার হলেই বিচের বালি পারিয়ে পঞ্চাশ গজ দূরে সমূদ্র পাড়ের ছাতির নীচে ইজি চেয়ার গা এলিয়ে শুয়ে থাকা আর সমূদ্রে নামার এক অদৃশ্য আহ্বান। জলতরংগে সুইমিং পুল আছে। সমুদ্র থেকে ফিরলে সুইমিং ড্রেসের পকেট আর শরীরে বালি আদরে লেপ্টে থাকে। সুইমিং পুলে সাঁতারে মজা সাথে ঝরঝরে হওয়া। তবে পত্রিকাতে দেখলাম পুকুরে ডুবে এক ৪ বছরের শিশু মারা গেছে। খুবই দুঃখজনক কবে এটা ঐ পরিবারের নেগলিজেন্সই বলব। আমার ছোট্ট দাদুমনি সাররিনাহ সমুদ্রে নেমেছে। কলাতলিতে নেমেছে বউ মা অনন্যা। রিনা, বড় দাদুমনি সুরায়না এক মূহূর্ত চোখের আড়াল করে নাই।এটাই ট্যুরের প্রথম শর্ত। জলতরংগ ফ্রন্ট ডেস্ক খুবই কো-অপেরেটিভ। ঈদের দিন কোথায় নামায পড়ব। জলতরংগ থেকে ৩/৪ মিনিট লাগে আলিফ লাম মিম মসজিদ। ওখানেই সজিব নিয়ে গেল। ছোট্ট ছিম ছাম মসজিদ। ঘুরতে যাবার গাড়ির ব্যবস্থা দ্রুতই করে দেয়। 
 
জলতরংগের সকালের ব্রেক-ফাস্ট প্রায় ২০-২২ আইটেম থাকছে। ডিমের যে কোন পদ কুক রা দ্রুত করে দিচ্ছে। বলা যায় জলতরংগ যে কোন পাঁচ তারা হোটেলকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত। কলাতলিতে যাবার পর এক রেস্টুরেন্টে সজিব নিয়ে গেল। কোনায় কোনায় করই ফল ঝুলান। বিরাট সিম আকারের দেখতে। এর ভিতরের ফল গুলি মুরগির গিলার আকারের। সেনাবাহিনীতে থাকার সময় বান্দরবনের চিম্বুক এলাকাতে এ গাছ প্রচুর দেখেছি। সজীবকে বল্লাম শুঁটকি খাব। পৃথিবীতে যত ঝাল থাকতে পারে তার সব টাই উজার করে শুঁটকির তরকারিতে দিয়েছে। সুখ করে শুটকি খাব। আর এখন ইচ্ছা করছে বাবুর্চিকে ডেকে এনে গলায় পারা দেই, রিনাকে বললাম- উত্তর হল, শুটকি ত ঝাল হবেই, এক তরফা বিচার, তর্ক না করে চুপ রইলাম। বউ মা আইসক্রিম দিতে বলল। ঝাল থেকে নিস্তার পেলাম। 
 
কলাতলি সিবিচ জনশূন্য। সমুদ্রে বেশ ধারাল পাথর বালির নীচ ভরা। সাবধানে পা না ফেললে পা ছুলতে পারে। রাস্তার নীচ থেকেই অসংখ্য বোল্ডার দিয়ে রাস্তাকে সমুদ্রের ঢেউ থেকে সুরক্ষিত করা হয়েছে। দুর্যোগ পূর্ন আবহাওয়াতে সমুদ্র ফুসে উঠলে জনপদ নিরাপদ রাখার প্রচেষ্টা। বউ মা, দুই দাদুমনি আর রিনা এই বোল্ডারের উপর বসে ছবি সেশন করল। আমিও বাদ  কেন যাব, ছবি তুললাম। এখানে বালি বোঝাই অসংখ্য গর্ত। লাল কাকড়রার বাস, বালির উপর প্রচুর সাম্পান আর জেলে নৌকা। দাদুমনি সুরায়না ওদের জিজ্ঞেস করল। বললো এখন ভাটি চলছে। দুই ঘণ্টা পর জোয়ার আসবে, তখন ভাসবে। গাড়ি কাছে এসে দেখি ড্রাইভার ডাব এনে রেখেছে। ডাবওয়ালা কাটছে, দাম দুই শ টাকা। বলে কি; শেষে ১৪০/- টাকাতে রফা। পাঁচটার দিকে জলতরংগে ফেরত আসলাম।
গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ঢাকা ছেড়ে ছিলাম, কক্সবাজারে তাপ কম না, সন্ধ্যার পর সমুদ্র সৈকতে, কত রকম ফেরিওয়ালা, আইসক্রীম নিয়ে কেউ আসছে, কেউ ডাব, কেউ চানাচুর, কেউ বা আবার শিশুতোষ খেল না নিয়ে। দূর সমুদ্রে চারটা জাহাজ নোঙ্গর করা। পাশের ইজি চেয়ারে  রিনা। এ দের কেমন জীবন- মাটির সাথে সম্পর্কহীন। বললাম এরা পারে নেমেই জিজি খুঁজে, রিনা বলল। জিজি মানে, বললাম, গে গার্ল। 
 
করাচির ক্লিফটন সিবিচ বহু দালাল এ রকম আছে। দূরবীণ নিয়ে দূর সমূদ্রে নোঙ্গর করা জাহাজের নাম পড়তে বলাও আছে। আমাকে একবার দূরবীণ দিয়ে দূর সমুদ্রে নোঙ্গর করা এক জাহাজের নাম বলতে বলল, খুব পাওয়ারফুল দূরবীণ, জাহাজটা একদম হাতের মুঠোয়। নাম দেখে বলে দিয়ে দূরবীণ ফেরত দিয়ে হাঁটা দিলাম, ঐ লোক এসে রুপিয়া চাইল, বললাম, কিউ! নেহি দেগা। উর্দু বুঝি তবে বলতে সমস্যা। ক্যাচাল লেগে গেল, আরো ৪/৫ জন জমায়েত, শেষ মেষ কিছু রুপিয়া দিতে হল। এটা ওদের ব্যবসা। কক্সবাজার সিবিচে দূরবীণ হাতে এমন ব্যবসা দেখি নাই।
 
ভ্রমন শেষে ঢাকার ফেরার পালা। আর্মি মিনিবাস আমাদেরসহ আর এক পরিবারকে নিয়ে বিমানবন্দর যাবে। ইউএস বাংলাতে ফিরব। ব্রেকফাস্ট টেবিলে সিডনি থেকে প্রতিদিন সাকিব আর বউ মা কাশফি কল করত। এবারের ট্যুরটা সব মিলিয়ে মনকাঁড়া এক অনুভূতি বহুদিন স্মৃত তে আটকে থাকবে।
 
লেখক : সাবেক জাতীয় হকি অধিনায়ক, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং কলামিস্ট
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।