পথরেখা অনলাইন : গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী ২৫ মে।তিনি আমৃত্যু মানব মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলাম চিরকালই ছিলেন আপোসহীন। তিনি অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ২৫ মে) জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক ‘দুখু মিয়া’ । তার বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মায়ের নাম জাহেদা খাতুন।
কাজী নজরুলের লেখা কবিতা তদানিন্তন রজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। নজরুল ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিতো ও বঞ্চিত মানুষের জাগরণে ছিলের একজন মহান প্রবক্তা।
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর –
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
খোদার আসন 'আরশ' ছেদিয়া,
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতর।
এরকম তার অসংখ্য সাড়া জাগানিয়া কবিতা রয়েছে। যা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ভারতীয়দের জাগিয়ে তুলেছিল।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রেম, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের মানুষ। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্য-সংগীত তথ্য সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। সাম্যের এই কবি সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার হয়ে লিখে গেছেন অসংখ্য গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও গান। এছাড়াও তিনি ছিলেন চির প্রেমের কবি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন ২২টি কাব্যগ্রন্থ, সাড়ে ৩ হাজার, মতান্তরে ৭ হাজার গানসহ ১৪টি সংগীত গ্রন্থ, ৩টি কাব্যানুবাদ ও ৩টি উপন্যাস গ্রন্থ, ৩টি নাটক, ৩টি গল্পগ্রন্থ, ৫টি প্রবন্ধ, ২টি কিশোর নাটিকা, ২টি কিশোর কাব্য, ৭টি চলচ্চিত্র কাহিনীসহ অসংখ্য কালজয়ী রচনা।
১৯৪১ সালের শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন এ কবি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা চলে লুম্বিনী পার্ক ও রাচি মেন্টাল হাসপাতালে। পরে ১৯৫৩ সালে ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে পাঠানো হয় তাকে। এই সময়ে একেবারেই বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। ফলে ১৯৫৩ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় নীরবে-নিভৃতেই কাটে তার জীবন।
১৯৭২ সালের ২৪ মে জন্মদিনে ঢাকায় এনে তাকে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় তাকে। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তবে ব্যক্তি নজরুল মারা গেলেও, কবি নজরুল ভক্তের মাঝে বেঁচে রবেন চিরকাল।
তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় না তো কভু।
আমরা অবোধ, অন্ধ মায়ায় তাই তো কাঁদি প্রভু।
পথরেখা/এআর