অনিন্দ্য আরিফ দিব্য : ৩১ মে ২০২৪; শুক্রবার। সন্ধ্যায় গড়িয়ে ৭টা ছুঁই ছুঁই। মূলমঞ্চের পার্শ্বপদা সরে গেল। আলো ঝলমল গানের বিদ্যাপীঠ ছায়ানট মিলনায়তন। মঞ্চে শান্তিনিকেতনের প্রতিভাবান শিল্পী মধুবন্তী চক্রবর্তী। সাথে সঙ্গীয় বাদ্যিযন্ত্রী। গান শুনতে উদগ্রীব বিপুল উৎসাহী শ্রোতা-ভক্ত। সূচনাতেই শিল্পী মায়াবি কণ্ঠে সুধালেন— তাই তামার আনন্দ আমার পর। তার গানের মুগ্ধতায় আবির ছড়িয়ে পড়েছে ছায়ানট থেকে বাংলাদেশ; ইথারে সারাবিশ্ব।
মধুবন্তী চক্রবর্তী ‘অনন্ত আনন্দধারা’ শিরোনামে একে একে গেয়েছেন- ১৫টি গান। বারতা পেয়েছি মনে মনে, আমি তোমারই মাটির কন্যা, বহে নিরন্তন আনন্দধারা, মেঘ বলেছে যাব যাব, ওহে সুন্দর মম গৃহে, প্রভূ আমার প্রিয় আমার, যেত যেতে একলা পথে, আমারে তুমি অশেষ করেছ, চিরসখা হে, জগতে আনন্দযজ্ঞসহ বেশ কয়কটি রবীন্দ্র সঙ্গীত।
গানের আবেশ সরিয়ে দ্বিতীয় গানের আগেই প্রধান অতিথি মুক্তিযাদ্ধা জাদুঘরের সম্মানিত ট্রাস্টি বীর মুক্তিযাদ্ধা মফিদুল হক মঞ্চে এলেন। বুকভরা উচ্ছ্বাস নিয়ে বললেন, শিল্পী রবীন্দ্রনাথের প্রেম এবং পুজাপর্বের গান শোনাবেন। রবীন্দ্রনাথ গানে গানে জগতের আনন্দের মহাযজ্ঞের কথা বলেছেন। মধুবন্তী ‘জগতে আনন্দ যজ্ঞে তোমায় নিমন্ত্রণও’ এই গানটি করবেন। শান্তিনিকেতন কন্যা মধুবন্তী চক্রবর্তীকে আমরা বলব যে, এখন বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের গানের যে ভাব-দর্শন, গায়কি এবং তার যে শুদ্ধতা— সবকিছু মিলে তাকে আমরা চাইব রবীন্দ্রসংগীতে আরো সর্মপিত থকুক। আমাদের প্রত্যাশা মধুবন্তী রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী এবং সুর-মুর্ছনা দিকে দিকে ছড়িয়ে দিক। অনুষ্ঠানে শান্তিনিকেতনের সতীর্থ জাপান অ্যাম্বাসির ফার্স্ট সেক্রেটারি কোমিনে কেন মধুবন্তী চক্রবর্তীর সাফল্য কামনা করেন।
একটি প্রাণবন্ত রাবিন্দ্রিক পরিবেশ বেষ্টিত আয়োজন বলতে যা বুঝায় স্টেট মাল্টিমিডিয়া তাই করেছে সূচারুভাবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে সম্মাননা স্মারক এবং উত্তরীয় পড়িয়ে দেওয়াও বাদ যায়নি। আর সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল উপচে পড়া দর্শক। মধুবন্তী চক্রবর্তী বাংলাদেশের এই প্রথম কোনো ঘটা আয়েজনে গাইলেন। সঞ্চালক জয়ন্ত রয় শেষ গানের পর মধুবন্তী কি বলার অনুরোধ করতেই; জানালেন- এমন একটি দিনের স্বপ্ন দেখছিলাম আমি। আজ গাইতে পেরে পরিতৃপ্ত। দর্শকরা চাইলে আবারো গাইবেন ভিন্ন কোনো আয়োজনে।
মধুবন্তী চক্রবর্তী ১৯৯১ সালে শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন দ্বিতীয় শ্রেণীতে। ১৯৯৫ সালে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কালচার রিসোর্সেস এন্ড ট্রেনিং [সিসিআরটি] থেকে রবীন্দ্রসংগীতে বৃত্তি অর্জন করে প্রতিভার স্ফুরণ ঘটান। কলকাতা জহর শিশু ভবন আয়োজিত রবীন্দ্রসংগীত প্রতিভার অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন ২০০৭ সালে। একই বছর জুনিয়র আর্টিস্ট স্কলারশিপ অর্জন করা মধুবন্তী বিশ্বভারতীতে ২০০৬ সালে স্নাতকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়েছেন। ২০০৮ সালে স্নাতকোত্তরেও প্রথম বিভাগে প্রথম। ২০১০ সালে বিশ্বভারতী থেকে বিএড। আর বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করছেন। গান শেখা শুরু গুরু স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের কাছে। শাস্ত্রীয় সংগীতে হাতে খড়ি-ঝালাই ইন্দ্রানী মজুমদারে কাছে।
মধুবন্তী শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় আকাশবাণীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেনের গান গেয়েছেন। দিল্লি, মুম্বাই ও কলকাতায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানেও গান করেছেন। ২০২২ সালে ঢাকায় ‘মানবকন্যা’ নামে তার প্রথম সিডি প্রকাশিত হয়।
পথরেখা// আসো