• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
    ২৯ কার্তিক ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৫:১৫

পাহাড়ের জুমে চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব

  • কৃষি বার্তা       
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২৪       
  • ১৭
  •       
  • ২৩-১০-২০২৪, ১৯:০২:৫১

পথরেখা অনলাইন : রাঙ্গামাটি , বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের জুমে এখন চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। ক’দিন পর পর থেমে থেমে বৃষ্টি আর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার জুমের আবাদ ও ফলন ভালো হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত পরিচর্যার কারনে এবার খাগড়াছড়ির জুমে ভালো ফলন হযেছে।ধান ছাড়াও বাহারি সবজির চাষ হযেছে জুমে। পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে পাকা সোনালী ধান জুমিয়াদের এনে দিয়েছে পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্য।
ঘরে ঘরে এখন খুশির বন্যা ।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৯ হাজার ৮শ ৬২ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার জুমিয়া পরিবার জুম চাষ করছে। এ মধ্যে সবচেয়ে বেশী জুমের আবাদ হয়েছে বান্দরবান পার্বত্য জেলায়। বান্দরবানে ২৮ হাজার পরিবার প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে জুমের আবাদ করেছে।

রাঙ্গামাটিতে ৫ হাজার পরিবার সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে এবং খাগড়াছড়িতে ৬ হাজার ৬শত ৮২ পরিবার ১১ হাজার ১শ ২৪ হেক্টর জমিতে আবাদ করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে লাঙ্গলে চাষাবাদ জমির পরিমান খুবই কম। ফলে উপজাতীয়রা জীবন ধারণের একমাত্র উপায় পাহাড়ে আদিযুগের প্রথানুযায়ী জুম চাষের ফসল উৎপাদন করে থাকে। সাধারণত পৌষ-মাঘ মাসে মালিকানাধীন কিংবা পরিত্যক্ত ঘন বন-জঙ্গল, পাহাড় নির্বাচন করে জঙ্গল কাটা শুরু হয় এবং ফাল্গুন-চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রখর রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়ে ছাই করা হয়।

নেড়া পাহাড়ে বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে প্রথম বীজ ধান বপন ও পরবর্তীতে বিভিন্ন তরিতরকারি বীজ বপনসহ নানা প্রকার ওষুধি, সবজি রোপণ করা হয়। বর্তমানে জুম চাষের উৎপাদিত ফসলের মধ্যে রয়েছে-মারপা (শশা জাতীয়) বরবটি, শীম, বেগুন, চিকন মরিচ, ধনিয়া, কুমড়া, ধেরস, বাতিমা, কচু,আদামরিচ,তিল ভুট্টাসহ ৪০ প্রকারের নানা প্রকার বর্ষা কালীন সবজি। এ সমস্ত সবজি পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিটি হাটবাজারে প্রচুর পরিমানে এখন পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি হাটের দিনে বিভিন্ন জেলার কাঁচামালের  ব্যবসায়ীরা পাইকারী হারে তা ক্রয় করে ট্রাক ভর্তি করে চালান করছে সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে। জুম তরকারির মধ্যে জুম মিষ্টি কুমড়া ও সাদা কুমড়া সুস্বাধু বলে সব এলাকায় প্রিয়। জুম উৎপাদিত তরি তরকারি গুলো তুলনা মূলক ভাবে অন্যান্য তরকারির চেয়ে কম মূল্য এবং ক্রেতার সংখ্যা বেশি বলে জানা গেছে। এবার এ দেশের অন্যান্য জেলায় তরিতরকারির দাম বেশি হওয়ায় জুম চাষীরা তাদের উৎপাদিত ফসল পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ ভালো দামে বিক্রি করতে পারছে। অন্যান্য বছর যেখানে জুম চাষীরা প্রতি কেজি মারফা (শশা জাতীয়) ফল ২০ টাকা ২৫ টাকা দামে বিক্রি করতেন। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দামে। তরিতরকারী ন্যায্য মূল্য পেয়ে চাষীরা আনন্দিত।

জুম চাষী খগেন্দ্র ও হরি ত্রিপুরা জানান, এবার প্রথম থেকে আবহাওয়া ছিল অনুকূলে । চৈত্র বৈশাখ মাসে জুমের গুল্ম লতা পুড়ে ফেলার জন্য ছিল প্রখর রোদ। জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ধানসহ বিভিন্ন ফলের চারা গজিয়ে উঠার জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টি ছিল। ব্যাপক হারে ভূমি ধসের আশংকা থাকলেও ভূমি ধস কম হওয়ায় কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতি থেকে বেঁচে গেছে। ফলে এবার জুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। খাগড়াছড়ি শহরের আলুটিলা, দীঘিনালা সড়কের বিভিন্ন স্থানে জুমে উৎপাদিত পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে।

জুম চাষ পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও পাহাড়ীদের ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ পদ্ধতি বলে চাষীদের আবাদ থেকে ফিরিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জুমিয়াদের পূর্নবাসন করার পরও জুম চাষ বন্ধ করা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে জুমে নতুন জাতের ধান বপন ও পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিউট আউশ মৌসুমের বিরি-২৪, বিরি-২৬, বিরি-২৭সহ গবেষণায় পরীক্ষাধীন দুটি জাতের ধান জুমে পরীক্ষামূলকভাবে খাগড়াছড়িতে আবাদ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বাছিরুল আলম জানান, প্রদর্শনী প্লটেও জুমের আবাদ ভালো হয়েছে। চারটি জাতের মধ্যে বিরি- ২৪ ও বিরি- ২৭ এর ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে বলে তিনি জানান।

জুম চাষের উপর নেতিবাচক ধারণা থাকলেও পার্বত্য অঞ্চলের বড় ছোট প্রায় ১৪ টি বিভিন্ন ভাষাভাষীর পাহাড়ী জনগোষ্ঠী সাধারণত এ জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য গৌতম কুমার চাক্মার ১৯৮৮ সালে লেখা এক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ১ লাখ পরিবার জুম চাষ করে।

অপরদিকে ২০০১ সালে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫টি প্রধান জনগোষ্ঠীর্ মধ্যে মুরং ৮৪.০৪ ত্রিপুরা ৫৪.০৮, মারমা ৪২.৩, চাক্মা ২২.০৭, এবং ১.০৬% বাঙ্গালী জুম চাষ করেন। চাক্মা ভাষা ঝুম, ত্রিপুরা ভাষায় ছুগ এবং মারমা ভাষায় ইয়া নামে পাহাড়ে জুম চাষ হয়ে থাকে।
পথরেখা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।