পথরেখা অনলাইন : জেলার সরিষার মাঠে দুলছে ”কাঁচা সোনা” রঙ। মাঠের পর মাঠ কেবলই দুলছে সরিষার ডগা।পল্লী কবি জসিমউদ্দিন গ্রাম বাংলার শীতকালীন সরিষা ক্ষেতের চিত্র এভাবেই ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার কবিতায়।
‘মনে হবে তব, মাঠখানি যেন হেলিছে দুলিছে। হলুদ স্বপন ভরে, সাবধান হয়ো। সুগন্ধ বায়ে ছড়িয়ে যেয়ো না- আর কোন দেশ পরে।’ বাংলাদেশের প্রকৃতি যেন এক স্বর্গীয় ল্যান্ডস্কেপ। ফল-ফসল, প্রকৃতি ও জনজীবন যেন একে অপরের সঙ্গে নিবীড় ভাবে মিশে গেছে। ঋতুচক্রে পৌষের মাঝামাঝি এ হিমশীতল আবহে জেলায় জেলায় দিগন্তজুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। মাঠ জেলায় চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ৪৫৭ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার জেলার ছয়টি উপজেলায় সর্বমোট ১৯ হাজার ৪৫৭ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন হারে সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি মৌসুমে জেলায় বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯, বিনা সরিষা-১০, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৭ ও বারি সরিষা-১৮ বপন করেছেন চাষীরা। ১ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সরিষা বপন করা যায়। সদর উপজেলা ছাড়াও কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিনাকুণ্ডু ও শৈলকুপা উপজেলাতেও ব্যাপক হারে সরিষা চাষ হয়েছে।
এদিকে সদর উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, জেলার সদর উপজেলায় চলতি মৌসুমে অন্তত ৩ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। কেবল সদর উপজেলাতেই সরিষা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৩৫০ মোট্রক টন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণেও অবদান রাখতে পারবেন ঝিনাইদহের কৃষকরা।
সরেজিমনে, জেলার সদর উপজেলার কাষ্টসাগরা, বালিয়াডাঙ্গা, হলিধানী, বৈডাঙ্গা, কুমড়াবাড়িয়া গ্রামে দিগন্ত জোড়া বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হয়েছে সরিষার আবাদ। সরিষার হলুদ ফুল দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন ‘কাঁচা সোনা’ ঢেউ খেলছে। সরিষা ফুলে ফুলে উড়ে মধু আহরণে মৌমাছিদের ব্যস্ত আনাগোনা। বিকেল হলেই সরিষা ক্ষেতে বাড়ছে শিশুদের আনাগোনা। সরিষা ক্ষেতে সরিষা শাক তুলতে ব্যস্ত শিশুরা।
কৃষকরা বলছেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফলন খুবই ভালো হয়েছে। আর কয়েকটা দিন আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই সরিষা ঘরে তুলতে পারবেন চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলার এবার ১৯ হাজার ৪৫৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন কৃষকরা। মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, হরিনাকুণ্ডু, শৈলকুপা ও কালীগঞ্জ উপজেলায়ও এবার সরিষার আবাদ বেড়েছে।
সরিষা চাষী সদর উপজেলার তোফাজ্জেল জানান, সরিষা আবাদের খরচ খুবই কম। অল্প মেয়াদি ফসল হওয়ায় সরিষার চাষ বেড়েছে। আবহাওয়া এবার ভালো আছে। বিঘা প্রতি ৪ থেকে সাড়ে ৪ মণ সরিষা পাওয়া যেতে পারে।
হরিনাকুন্ডু উপজেলার ভেড়াখালি গ্রামের নেকবার মন্ডল জানান, সরিষা আবাদে সবচেয়ে কম সময় লাগে। খরচও কম। ইরি ধান কাটার পরপরই জমি ফেলে না রেখে সরিষা বপন করেছি। সরিষা বপন করলে জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে ভালো দামও পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার আবাদ বেড়েছে। আশা করছি, উৎপাদনও ভালো হবে। আমরা যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি, তার খুব বেশি কমবেশি হয় না। তবে আশা করছি, এবার সরিষা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
পথরেখা/এআর