পথরেখা অনলাইন : অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে ব্যবসার প্রবৃদ্ধির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দক্ষতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।
একই সঙ্গে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত হওয়া লক্ষ্যে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ লক্ষ্যে স্থানীয় শিল্পসমূহে শ্রমিক অধিকার ও পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়গুলো নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দিয়েছেন।
আজ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘রিফর্মস ইন কাস্টমস, ইনকাম ট্যাক্স এন্ড ভ্যাট ম্যানেজমেন্ট টু অ্যাড্রেস দ্য এলডিসি গ্রাজেুয়েশন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্রাজুয়েশন প্রজেক্ট (এসএসজিপি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান।
অর্থ উপদেষ্টা তার বক্তৃতায় আরও বলেন, এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে সক্রিয় হতে হবে। তিনি সম্প্রতি চূড়ান্ত করা স্মুথ ট্রানজিশন র্স্ট্যাটেজি (এসটিএস) বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এলডিসি উত্তরণের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় শিল্পসমূহের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
একই সঙ্গে তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ভ্যাটের আওতায় আনা এবং অভিন্ন কর হার ব্যবস্থা চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান কর সংক্রান্ত ব্যয় কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও জানান, আগামী মার্চের মধ্যে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে চালু হবে এবং খুব শিগগিরই সম্পূর্ণ কর ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে।
ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, সরকার স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি (এসটিএস) কার্যকর ও সময়মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সেমিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, এনবিআর সদস্য এ কে এম বদিউল আলম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এনবিআর সদস্য হোসাইন আহমেদ ও মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় কিছু দিন পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এর ফলে বাংলাদেশ উত্তরণের জন্য প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু সময় পাবে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সাবেক সদস্য এবং এসএসজিপির কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মোস্তফা আবিদ খান অনুষ্ঠানে মূল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটর ২০২৩-এর পর্যালোচনার ওপর আলোকপাত করে ড. মোস্তফা আবিদ খান উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানি ব্যয় ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম এবং সিঙ্গাপুরের তুলনায় অনেক বেশি।
বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স. লজিস্টিক সেবার মান দক্ষতা এবং বাণিজ্য ও পরিবহন সম্পর্কিত অবকাঠামোর মানও সেসব দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে নিম্নমানের।
সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন প্রভাব মূল্যায়নের ফলাফল তুলে ধরে ড. খান বলেন, স্থানীয় বন্দরে শুল্ক ছাড়পত্রের সময় যদি একদিন কমানো যায় তাহলে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি ৭.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে শুল্ক পদ্ধতি সহজ করার ফলে দেশীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা কমপক্ষে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপির প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর।
উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা হ্রাস পাবে। এছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে না। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃুদ্ধির লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব কাঠামোর ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়াবে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা, সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাত ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিরা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
পথরেখা/এআর