• বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
    ১৭ মাঘ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০২:০২

বড়বাড়ীতে বাহারি বাঁশ পণ্যের বেচাকেনা

  • সারাদেশ       
  • ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫       
  •       
  • ২৯-০১-২০২৫, ২১:৪০:২৭

পথরেখা অনলাইন : বাঁশ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে এখনো জীবনধারণ করছে লালমনিরহাটের অর্ধশতাধিক পরিবার। বাঁশ থেকে তৈরি ডালা, কুলা, চালনসহ হরেক রকমের পণ্য বিক্রি করে নিজেদের যেমন বাঁচিয়ে রেখেছেন, ঠিক তেমনি ভাবে দেশীয় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে পরিবারগুলো। জেলার সদরের বড়বাড়ীহাটে বাঁশের তৈরি পণ্যকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে সাপ্তাহিক হাট।

সরেজমিনে বড়বাড়ী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের তৈরি পণ্যের ক্রয় বিক্রয়ের হাট বসেছে। সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার দুই দিন হয় বাহারি বাঁশ পণ্যের বেচাকেনা। বিভিন্ন ধরনের বাঁশের তৈরি পণ্য নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের কেউ কেউ কিনছেন ডুলি, কুলা,ডালি, খাঁচা আবার কেউবা কিনছেন চাইলন, টালা। এভাবেই বিভিন্ন ধরণের বাঁশের তৈরি পণ্যের কেনা-বেচা চলছে। মূলত শীতকালে গ্রামের বাড়িতে সাংসারিক কাজে এগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এখানে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি করতে আসেন কারিগররা।

ধান রাখার ডুলি ও মাটি কাটার ডালি কিনতে আসা ক্রেতা আহাম্মদ আলী (৪০) বলেন, আমাদের বাড়ি নদীর ধারে, বাড়িতে ধানের ডুলি ভেঙ্গে গেছে তাই নতুন ডুলি ও মাটি কাটার ডালি কেনার জন্য এসেছি। তিনি আরো বলেন,আমরা এসব বাঁশের পণ্য কিনে অভ্যস্ত। তাই প্রয়োজনের তাগিতে কিনতে আসা। তিনি আরো বলেন,ধীরে ধীরে এ বাজারে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের সরবরাহ কমে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, হয়তো কিছুদিনের মধ্যে প্লাস্টিকের ভিড়ে বাঁশের তৈরি পণ্য খুঁজেই পাওয়া যাবে না।

বাঁশের তৈরি পণ্যগুলো বিভিন্ন দরে বিক্রি হচ্ছে হাটে। তার মধ্যে মাটি কাটার ডালি ৭০ টাকা থেকে ৯০ টাকা, অনুষ্ঠানে ভাত রাখার বড় ডালি ৮০ থেকে ১৫০ টাকা, ঝাড়ু ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কুলা ৮০ থেকে ১৫০ টাকা, চাইলন ৬০থেকে ৭০ টাকা, মুরগীর টোপা ১২০থেকে ১৫০ টাকা, কবুতরের খাঁচা ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, ধারা ২০০ থেকে ১০০০ টাকা, ডারকি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাকি ডালি ১০০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, হাত পাখা ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, পাল্লা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, ডালা ২৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা, গরুর মুখের টোপা ৩০ থেকে ৬০ টাকা, মাছ রাখার খলাই ৮০ থেকে ১৫০ টাকা, ঝাপি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, মাছ ধরার পলো ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা এবং মাছ ধরার ডাইর ২০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।

বিক্রেতা আব্দুল খালেক (৬৫) জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বাঁশের তৈরি পণ্য পাইকারিতে কিনে এনে আমি আবার বাজারে বিক্রি করি। এখানে সপ্তাহে দু'দিন হাট বসে, বুধবার ও শনিবার। তিনি আরো বলেন, প্রতি হাটে প্রায় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য ক্রয় করি। সেই পণ্য বিক্রি করে  দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাভ হয়। তাছাড়া বর্তমানে এসব পণ্য বিক্রির মৌসুম চলছে ।

আরেক ক্রেতা ইসমাইল হোসেন (৫০) বলেন, আমি বিভিন্ন ধরনের বাঁশের তৈরি পণ্য ক্রয় করি। পরে এগুলো আমি গ্রামে গ্রামে বিক্রি করি । তিনি বলেন আমি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করে এসব পণ্য গ্রামে বিক্রি করলে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হয় যা দিয়ে কোন রকমে সংসার চালাতে পারি। আমি এ ব্যবসা করতে করতে বৃদ্ধ হয়েছি। তাই এখন আর অন্য কাজ করতে ভালো লাগেনা। তিনি আরো বলেন, এখন এসব পণ্যের কদর কমে গিয়ে প্লাস্টিক জাতীয়  পণ্যসামগ্রী দিয়ে বাজার ভরে গেছে। তাই  ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকর্মটি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাঁশের তৈরি পণ্যের কারিগর হযরত আলী (৪৮) বলেন, এক সময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের গ্রামীণ পল্লীতে বাঁশের চটা(চেইসকা) দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। আর হাটের দিন বাজারে এসে এসব বাঁশ-বেতের পণ্য বিক্রি করা হতো, কিন্তু এখন সময়ের ব্যবধানে খাদ্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি হওয়ার ফলে আমাদের কারিগরদের তৈরি পণ্য বিক্রি করে সংসার চলছে না।  অন্যদিকে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্যও বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যার ফলে বেকার হয়ে পড়েছে আমাদের গ্রামীণ কারিগরেরা। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।

এ বিষয়ে বড়বাড়িহাটের ইজারাদার আলমগীর বাদশা বলেন, বর্তমানে এসব পণ্য বিক্রয়ের মৌসুম আসায় চাহিদা বেড়েছে। তবে আগের মত তেমন চাহিদা নেই কারণ প্লাস্টিকজাত পণ্যের কারণে বাঁশের তৈরি পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। তিনি বলেন, আগে এ বাজারে হাটের দিন ৮০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত দোকান বসলেও এখন ৩২থেকে ৩০টি দোকানের বেশি দেখা যায় না।
পথরেখা/এআর

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।