• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ২১:২৬
মৃণাল বন্দ্য

ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধীর শহর

  • মত-দ্বিমত       
  • ০১ অক্টোবর, ২০২৩       
  • ৮৫৯
  •       
  • ০১-১০-২০২৩, ১৮:১১:০৪

রাজধানী ঢাকার রাস্তায় তীব্র জ্যামে বসে থাকতে থাকতে অনেকেই মন্তব্য করেন, এর চেয়ে হেঁটে যাওয়া ভালো! বিরক্তি নিয়ে কথাটা বললেও, খুব একটা ভুল কিন্তু তিনি বলেন নাই। বরং বলা যেতে পারে সঠিক কথাটি তিনি বলেছেন। 
 
আসুন একটু দেখে আসি, গবেষণা কি বলে? ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪.৯ কিলোমিটার। ৩০ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ববয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫.১ কিলোমিটার। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই গতি ঘণ্টায় ৪.৮২ কিলোমিটার। আর সত্তরোর্ধ্ব মানুষ ঘণ্টায় হাঁটতে পারেন ৪.৫ কিলোমিটার। এভাবে বিভিন্ন বয়সী মানুষের গড় হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪.৮৩ কিলোমিটার, যা বর্তমানে ঢাকার সড়কে চলা গাড়ির গতির চেয়েও বেশি। অবাক হলেন? যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের এক গবেষণায় ঢাকার বিষয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার সূচকে ঢাকার পয়েন্ট ০.৬০। পরের অবস্থানে নাইজেরিয়ার লাগোস, পয়েন্ট ০.৫২।
 
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘দ্য ফাস্ট, দ্য স্লো, অ্যান্ড দ্য কনজাস্টেড : আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন রিচ অ্যান্ড পুওর কান্ট্রিস’ শীর্ষক ওই গবেষণা গত আগস্টে প্রকাশিত হয়। গবেষণায় পৃথিবীর ১৫২টি দেশের এক হাজার ২০০ শহর নিয়ে কাজ করা হয়। অবশ্য, চীন ও উত্তর কোরিয়া গবেষণার আওতায় ছিল না।
 
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ছাড়াও বিশ্বের শীর্ষ ২০ ধীরগতির শহরের তালিকায় বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের নামও আছে। ময়মনসিংহের অবস্থান নবম, চট্টগ্রাম ১২তম। উল্টো দিকে বিশ্বের শীর্ষ ২০ গতিশীল শহরের ১৯টিই যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২০ সালে করা বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে ব্যস্ত সময়ে (পিক টাইমে) চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। ২০২২ সালে এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪.৮ কিলোমিটারে। উল্টো দিকে শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের হাঁটার গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় এর চেয়েও বেশি।
 
ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে কর্মঘণ্টা ও জ্বালানির অপচয় হচ্ছে, বায়ুদূষণও বাড়ছে। আর্থিক ক্ষতির প্রভাব পড়ছে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি)। যানজটের কারণে ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ ধীরগতির শহরে পরিণত হয়েছে। দরিদ্র ও ধনী দেশের তুলনা করতে গিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, গরিব দেশের তুলনায় ধনী দেশের শহরে গাড়ির গতি অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি। যে শহরের গতি বেশি সে শহরের মাথাপিছু আয়ও বেশি।
 
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, শব্দ কিংবা পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি এই ধীরগতির শহর থেকে মুক্তি মিলবে কিসে? প্রয়োজন, সামাজিক সচেতনতা আর অতি  বিলাসিতা পরিহার। ঢাকা শহরের ৮০ ভাগ পরিবহণ এখন ব্যাক্তিগত গাড়ি। ধানমণ্ডি, উত্তরা, গুলশান, বনানী কিংবা বারিধারা, প্রায় প্রতিটি স্কুলে শিক্ষাথীরা আসে ব্যাক্তিগত গাড়িতে, যায় ব্যাক্তিগত গাড়িতে। অভিযোগ আছে, ভর্তির আগে স্কুল থেকে নিশ্চিত হয়, ব্যক্তিগত গাড়ি আছে কিনা! ফলাফল, প্রধান সড়ক থেকে জ্যাম ছড়িয়ে পরে অলিগলিতে। প্রতিটি স্কুলে স্কুল বাস বাধ্যতামূক করা এখন সময়ের দাবী। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে আমাদের মতো এভাবে কোন দেশ রাজধানী কেন্দ্রিক নয়। পাশের দেশ ভারতেও অনেক দূর থেকে এসেও মানুষ অফিস করে। দিন শেষে আবার ফিরে যায়। কখনো কখনো সেটা ৮০-১০০ কিলোমিটার দুরেও। আমাদের দেশে সেটা কল্পনার অতীত। 
 
আরেকটি প্রধান সমস্যা, ঢাকায় গাড়ি পার্ক করার জায়গার অভাব! অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি ভবনে পারকিং না থাকায় স্কুল কিংবা অফিস-আদালতের সামনের সড়কে রাখা হচ্ছে গাড়ি। হোটেল, রেস্টুরেন্ট কিংবা হাসপাতালেও নেই পর্যাপ্ত পারকিং। এর চেয়েও বড় সমস্যা, দিন দিন মানুষের কমে যাচ্ছে ধৈর্য শক্তি। ফলাফল, চালককে উৎসাহিত করছি নিয়ম ভাংতে। ট্রাফিক আইন অমান্য করে পুরো শহরকে দিয়ে ফেলেছি সুপার স্লো শহরের তকমা! উন্নয়নের জোয়ারে যতই ভেসে যাক প্রিয় শহর, নিজেকে পরিবর্তন না করতে পারলে, ঘণ্টার পরে ঘণ্টা শ্রমঘন্টাই অপচয় হবে। দেশ পড়বে পিছিয়ে। 
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।