বাবা ইউনিভার্সিটিতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছিলেন। ড. মোহাম্মদ শহীদউল্লাহ ছিলেন প্রভোস্ট। খুব পছন্দ করতেন বাবাকে। বাবা যখন সাবরেজিস্ট্রার, তখন পোস্টিং হত বিভিন্ন জায়গায়। বাবার আমন্ত্রণে ড. মো. শহীদুল্লাহ প্রায় প্রতিটি যায়গায় ওয়াজ করতে যেতেন। ডোমারে ড. শহীদউল্লাহ আসবেন। বাবা উনার জন্য হাতী ঠিক করেছেন নিয়ে আসার জন্য। ট্রেন থেকে নামার পর বাবা সহ ড. শহীদুল্লাহ হাতীতে উঠেছেন। হাতীর পিঠে ৪/৫ জন। এক মওলানা সাহেব হাতীতে যেতে চাইলে বাবা মানা করলেন। হাতী চলতে শুরু করলে মওলানা সাহেব ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে হাতীর লেজ ধরে উঠতে চাইলেন। লেজ ধরে ঝুলা ঝুলি হাতীর না-পছন্দ। পিছনে একা পা উঁচু করাতে মওলানা সাহেব ছিটকে পরে ব্যথা পেলেন। ওয়াজে যাবার পথে এ ঘটনা মওলানা সাহেব তিনি এলাকার পরিচিত। শহীদুল্লাহ সাহেব বাবাকে বললেন , শামসু চল আমরা হেঁটেই যাই। প্রায় দুই মাইল রাস্তা হেঁটে এসে তিনি ওয়াজ করলেন। শহীদুল্লাহর ছেলে শফিউল্লাহ বাবার বন্ধু, তিনিও এসে ছিলেন।
ডোমার, চিলমারি এ সব অঞ্চলে প্রচুর বিশাক্ত সাপ চষে বেড়ায়। সন্ধ্যা বেলা নীচে টুকটাক আওয়াজ। মা মুরগি পালতেন বড় একটা কামরার কোনে মুরগী খোলা খাচাতে থাকত। মনে করলেন কোন মুরগী হয়ত খাঁচার বাইরে। হ্যারিকেন নিয়ে ঐ ঘরে ঢুকে দেখলেন যেখানে ভাংগাটি তার নীচ থেকে আওয়াজ। ইঁদুর আছে মনে করে টিপয় টাতে পা দিয়ে ধাক্কা দিতেই মা যেদিকে তার উল্টা দিক থেকে মার প্রায় কমড় পর্যন্ত উঁচু হয়ে জাতি সাপ ফনা তুলে। মা জোরে বলল সাপ। বাবা আওয়াজ পেতেই বলল যেমনে আছ তেমনি থাক। দৌড় দিওনা। বলেই বন্দুকে কার্টুজ ভরতে ভরতে দৌড়ে এসে পরল। একক্ষণ মা হারিকেনটা সাপ আর নিজের মধ্যে স্থিরভাবে ধরে রেখেছিলেন। মা সব সময় ধৈর্যশীল। বাবা ঢোকা মাত্র সাপটা ফনা নামিয়ে ঘরের কোনাতে গর্তের ভিতর ঢুকতে শুরু করল। প্রায় ঢুকেই পরেছে। বাবা এরই মধ্যে গুলি চালিয়ে দিল। লেজে গুলি যে লেগেছে তার প্রমাণ হল সাপটা ওয়ালে লেজ দিয়ে বারি দিয়ে রক্ত ছিটিয়ে গর্তে ঢুকে গেল।
সন্ধ্যা বেলাতে গুলির আওয়াজ। আশে-পাশের সব অফিসার এসে হাজির। বলল- আপনি ইয়ং মানুষ। সাপকে সন্ধ্যা বেলাতে গুলি মারলেন মরল ত নাইই। রাত সামলাবেন কি করে? সাবরেজিস্ট্রার অফিসের অনেকেই কেউ শুকনো মরিচ পুরিয়ে। কেউ গর্তের মুখ কাপড় আটকে দিল। যে দরজা দিয়ে যাতায়াত। সে দরজাও যত খানি সম্ভব আটকানো হল, রাতে সাপ ঠি কই এসে ১০/১২ টা মুরগি মারল। হিংসায় অনেক মুরগির মাথা পর্যন্ত কামড়ে কামড়ে বিষে পিচ্ছিল করে ফেলল।
পরদিন বাসাতে লোক গিজ গিজ। হেড ক্লার্ক সাহেব বাবাকে বললেন গর্ত খুড়ব। সাপের নিজের গর্ত করার মুরদ নাই। তাই ইন্দুর মাইরা ঐ গর্তেই থাকে। গর্ত খুরা আর শেষ হয় না। শেষ মেষ গর্তের কাছে শাবল দিয়ে বারি দিতেই সাপ ফনা তুলে বের হয়েই আবার গর্তে। সাবধানে গর্তের মাথা বারি দিয়ে ভেংগে দিতেই সাপ ফনা তুলে আক্রমনে রেডি। শাবল দিয়েই পিটিয়ে মেরে ফেলা হল। সবাই বল্ল সময় মতন মারা পরেছে । নইলে কবে আপনাদের কাউকেই মেরে ফেলত।
পথরেখা/আসো