বাকেরগঞ্জের বহু অংশ চর এলাকা। এখানে জমি দখল নিয়ে মারামারি নিত্য দিনের ব্যাপার। বাবা সাবরেজিস্ট্রার। ওই অঞ্চলে একমাত্র গেজেটেড অফিসার। এই যে মারামারি ঘটে, সেখানে ব্যবহার হয় দেশীয় অস্ত্র- টেটা, সড়কি, রামদাও এসব। আহতদের মধ্যে যারা মৃত পথযাত্রী তাদের ডাইং ডিক্লারেশন নিতে হত আর গেজেটেড হওয়াতে বাবাই নিত। অফিস বাসার সাথে হওয়াতে প্রায়ই আহত রা আসত বাবা ডাইং ডিক্লারেশনল নিত। তারপর ডাক্তার কাকা আহতকে পাঠিয়ে দিত বরিশাল মেডিক্যালে।
বাবার অফিস ছিল নদীর পারে। বাসা থেকে অনেক দূরে। বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সাইকেল ব্যবহার করতেন। আমি নিজেও ঢাকাতে ঐ সাইকেল করেই হকি মাঠ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতাম। হাম্বার সাইকেল ছিল। বেশ পোক্ত। নদীর পারে ছিল সাবরেজিস্ট্রার অফিস। একেতো দূর আবার ইন সিকিউর্ড। বাবা সাইকেলে যেতেন। একরাতে কে বা কারা রেকর্ড রুমের তালা ভেংগে ছিল। দলিল নিতে নয়। টাকা নেবার জন্য তবে মূল অফিসে মাটিতে কোনো সিন্ধুক এতই শক্ত আর তালা বৃটিশ তৈরি তা ভাংগা ইম্পসিবল। কিছুই নিতে না পারলেও বাবা। দূর আর নির্জন এলাকা থেকে অফিস সরিয়ে আনেন পাশের পুরাতন এক বিল্ডিং এ। প্রচুর ঘষামাজা করে অফিস হিসাবে ভাল রূপ দেয়া হল।
এক দিন দেখি চাদর মুড়ি দিয়ে এক লোক বসা। সাথে বেশ কজন। বাবা তার এজলাসে ডাকলেন। আমিও সাথে সাথে গেলাম। দেখি একটা টেটার আটটা লোহার মাথাই লোকটার বুকে ঢুকে আছে। মাথাগুলো আবার তিন কোনা ফলে টান দিয়ে বেড় করা যায় না। এ জন্য অপারেশন করতে হবে আর তা এখানকার হাসপাতালে সম্ভব না। বরিশালে পাঠাতে হবে। লোকটি বেশ শক্ত পোক্ত। চেহারাতে ভয় ডর নাই। ডাইং ডিক্লারেশন দিবার সময় চেয়ারম্যান সাহেব ধমক দিলেন। বললেন যারা মারছে তাদের নাম কও। ওগো ফাসাও ক্যান। মরতে যাইতাম তাও শয়তানি যায় না। আহত লোকটি বলে সবত আপনার ইংগিতেই হছে। তারপর বাবাকে বলে। হুজুর- এই চেয়ারম্যানের নাম লিখেন। ঐ চরের জমির দখলদার। এলাকার সব গন্ডগোলের সর্দার। চেয়ারম্যান ক্ষেপে জুতা খুলে বলে তরে আইজ শ্যাষ করুম। বাবা ধমক দিয়ে তাকে রুম থেকে বেড় করে দিয়ে। বলেন- যা বলার ঠিকঠাক বল। সে বলল আমি মিথ্যা বলব ক্যান, এই চেয়ারম্যান এলাকা ধ্বংস করতাছে। আহত লোকটা চলে যাবার পরই চেয়ারম্যান আবার বাবার কাছে এসে বলল, স্যার আমার নামটা বাদ দিয়ে দেন। বাবা বললেন- এটা ডাইং ডিক্লারেশন, মৃত পথ যাত্রীর শেষ কথা। আমি কি করে বাদ দেই বলেন?
[চলবে]
পথরেখা/আসো