• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০০:৪৫

খবরের স্বাধীনতা বজায় রাখতে

পথরেখা অনলাইন : রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ অনেক বেশি ক্ষতি করে গণতান্ত্রিক দেশে, যেখানে মানুষ মনে করেন যে, কম-বেশি সঠিক সংবাদই প্রকাশিত হচ্ছে।
 
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কাউন্সিলে সম্প্রতি গৃহীত হল ইউরোপিয়ান মিডিয়া ফ্রিডম অ্যাক্ট। আর্থিক বা রাজনৈতিক সংবাদের উপর বহু মানুষের বিশ্বাস, আচরণ এবং সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন শব্দের পুনরাবৃত্তির সঙ্গে মানুষের আয়-ব্যয়ের, বিনিয়োগের, এমনকি শেয়ার বাজারের উত্থান-পতনের সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ যাতে বিপথে চালিত না হন তার জন্য সংবাদ পরিবেশনকারী সংস্থাকে যেমন অনেক বিধিনিষেধ মানতে হয়, তেমনই তাদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার্থে আইন প্রণয়ন গণতন্ত্রে সরকারের অবশ্যকর্তব্য।
 
যে দেশ স্বৈরতন্ত্রী শাসনের অধীন, সেখানকার মানুষ সরকারি খবরের সত্যতা নিয়ে সচরাচর সন্দিহান থাকেন। এই দেশগুলোতে সংবাদসংস্থা সম্পূর্ণ ভাবে সরকার-নিয়ন্ত্রিত। সুতরাং, সে রকম সংবাদসংস্থায় মিথ্যের জাহাজ ফেরি হলেও লোকের সিদ্ধান্তে বিরাট পরিবর্তন আসে না। বরং, স্বৈরাচারী শাসকের সংবাদমাধ্যমে যে-হেতু শুধু সরকারের ঢাক পেটানোর খবরই প্রকাশিত হয়, মানুষের ক্ষোভের কথা ঠাঁই পায় না, ফলে মানুষ আসলে কী ভাবছেন, শাসকদের কানে সে খবরের বেশির ভাগটাই পৌঁছয় না। কোনও এক সময়ে বড় আন্দোলন তৈরি হলে সরকার তার মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে পারে না। আর অবাধ নির্বাচন যদি কোনও ভাবে ঘটে যায়, তা হলে তো পটপরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
 
রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ অনেক বেশি ক্ষতি করে গণতান্ত্রিক দেশে, যেখানে মানুষ মনে করেন যে, কম-বেশি সঠিক সংবাদই প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে ভুল প্রচার বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শুধুমাত্র সরকারের পছন্দসই খবরের প্রভাবে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সংবাদ তো আসলে তথ্য, এবং তথ্যই হল আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সম্পদ। মানুষ বিভিন্ন ভাবে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে একক ভাবে বা গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হন। ফলে সংবাদের গুণমান যদি অন্য কোথাও থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়, তা হলে গণতান্ত্রিক দেশে আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে এমন আশঙ্কা থাকে।
 
সংবাদমাধ্যম কী লিখবে, কতটা লিখবে, তা নিয়ে সব দেশেই সরকারি মাথাব্যথা ছিল এবং আছে। সংবাদপত্রের উপরে নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ, তেমন হলে ছাপাখানা বন্ধ করে দেওয়া, উনিশ শতকের ইংল্যান্ডে সবই ঘটত। এ ছাড়া নিউজ়প্রিন্ট-এর উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা, বিজ্ঞাপনের উপর শুল্ক বসানো, এই সব পদ্ধতি কাগজের উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য করত। তার পর একটা পরিবর্তন এল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে অবধি যে সময়কাল, তাতে সরকার সংবাদপত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ কমিয়ে দিয়ে ‘বাজারের ক্ষমতা’র উপর ভরসা করতে শুরু করল— বিশ্বাস করল যে, সংবাদের বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়লে সরকার যেগুলোকে জনস্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর সংবাদ বলে মনে করে, তার প্রচার কিছুটা কমে যায়। এই ধরনের যুক্তি ত্রুটিমুক্ত নয়, কিন্তু সেই সময়ের বিখ্যাত সংস্কারক চ্যাডউইক বা জন স্টুয়ার্ট মিল সংবাদের উপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তোলানোর জন্যে ভরসা করেছেন প্রতিযোগিতায়। অস্বীকার করা যাবে না যে, আধুনিক আমলের তথ্য বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায়, যেখানে সংবাদমাধ্যমের মধ্যে প্রতিযোগিতা কম, সেখানে খবরের সত্যতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ সৃষ্টি হচ্ছে।
 
ইইউ কাউন্সিলের নতুন আইন বলছে যে, সাংবাদিকদের উপরে সরকারি গুপ্তচর সংস্থা নজরদারি করতে পারবে না, যদি না নির্দিষ্ট কারণ অনুসারে এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিচারক সে রকম কোনও নির্দেশ দিয়ে থাকেন। এর পরেও যদি নজরদারি হয় লুকোনো ট্রান্সমিটার বা সফটওয়্যার দিয়ে, তা আদালতে জানাতে পারেন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক। এ ছাড়া, কোনও সাংবাদিককে সরকারি কর্তৃপক্ষ, পুলিশ বা বিচারব্যবস্থা তাঁর খবরের সূত্র বলার জন্যে বাধ্য করতে পারবে না। সংবাদমাধ্যমকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে এই সংস্থাগুলোর উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিয়োগ স্বচ্ছ পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে হতে হবে। সরকারি সংবাদসংস্থা কী ভাবে আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে, তা স্বচ্ছ পদ্ধতিতে আসছে কি না, এবং সেখানে দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের চাকরির শর্ত এবং মেয়াদ নিয়মমাফিক হচ্ছে কি না, সেগুলো নিয়মিত জানাতে হবে নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীকে। সরকারি বিজ্ঞাপন কোন সংবাদসংস্থাকে কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে, তার সম্পূর্ণ তালিকা এবং মোট বিজ্ঞাপনমূল্য সরকারকে বছর শেষে প্রকাশ করতে হবে জনসমক্ষে। অর্থাৎ রাজনৈতিক বা তদন্তকারী সংস্থার চাপ, অথবা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থপ্রাপ্তির প্রলোভন, কোনওটিই যাতে সংবাদমাধ্যমকে প্রভাবিত না করতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে এই আইনে। অন্য দিকে, সংবাদসংস্থাগুলিকেও জানাতে হবে, সংস্থার মালিক কে বা কারা। কী ধরনের মতবাদ বা বিশ্বাস সংবাদসংস্থার ভিত্তি, সংস্থার বিজ্ঞাপনদাতা কারা, তাও জানাতে হবে।
পথরেখা/আসো
 
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।