• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১১:৩৩

বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল ১০ এপ্রিল

পথরেখ অনলাইন :  ঐতিহাসিক ১০ এপ্রিল আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন এ দিনে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। এদিনই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং নয় মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে এই বিপ্লবী সরকারই। এটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার।
 
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। ২৫ মার্চ রাতে মুক্তিকামী বাঙালীদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। সে রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতারের আগে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাঙালি শুরু করে প্রতিরোধ। শুরু হয় যুদ্ধ। সরকার গঠনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (প্রোক্লেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেস) পাঠ করা হয়। এদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকেও অনুমোদন করা হয়। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে চুয়াডাঙ্গায় বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেনে যাওয়ায় ১৭ এপ্রিল বর্তমানের মুজিবনগর তখনকার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়।
 
 
১০ এপ্রিল পাকিস্তানের নির্বাচিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি গোপন স্থানে মিলিত হয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) নির্বাচিত করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরে তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা হলেন—এম মনসুর আলী (অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প) এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি বেইমান খন্দকার মোশতাক আহমদও (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ) মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
 
১০ এপ্রিল সরকার গঠনের পর ১১ এপ্রিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাজউদ্দীন আহমদ একটি বেতার ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। এছাড়াও ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়। এই সরকারের দক্ষতার ফলেই মাত্র ৯ মাসে বাংলাদেশ হানাদার পাকিস্তানিদের দখলমুক্ত হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। তাই ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয়, অমলিন একটি দিন।
 
১০ এপ্রিলের পর প্রথমে এম মনসুর আলী ও কামারুজ্জামান, তারপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুল মান্নান এবং আরও পরে খোন্দকার মোশতাকসহ অন্য নেতারা কলকাতা পৌঁছেন। মোশতাক ও যুবনেতাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানসহ আরও অনেকের সমর্থন ও সহযোগিতায় তাজউদ্দীন আহমদ ঘোষিত সরকার বহাল থেকে যায়।
 
১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মাটিতে মেহেরপুরের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম রচিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন চিফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলী। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম রচিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আরেকটি অমূল্য দলিল হয়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন তাৎক্ষণিকভাবে প্রবাসী সরকারের রাজধানীর নামকরণ করেন মুজিবনগর।
 
দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, গত ৪০ বছরের সকল সরকার এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও মুজিবনগর সরকার এবং ওই সরকারের নেতাদের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। আরও পরিতাপ ও বেদনার বিষয় হলো, বঙ্গবন্ধু মুজিব তার সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে একটিবারের জন্যও মুজিবনগরে যাননি। তবে কেউ স্মরণ করুন আর না করুন, স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস রচনা করতে গেলে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু মুজিবের পরে অবধারিতভাবেই তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং যুদ্ধকালীন সরকারের মন্ত্রী মনসুর-কামারুজ্জামানের নাম আসবে। ইতিহাস বিকৃতকারীরা বিগত বছরগুলোতে যাকে বা যাদের অন্যায়ভাবে টেনে এনে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি দাঁড় করিয়েছে, তাদের মুখোশও একদিন উন্মোচিত হবে।
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।