মৃণাল বন্দ্য, কানাডা থেকে : বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আরও কমিয়ে আনার পাশাপাশি প্রবাসী কর্মীর বিধিমালা আরও কঠোর করতে যাচ্ছে কানাডা। দেশে অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে গত সপ্তাহে এমন বার্তা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও ভিসা দিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ অনুরোধ করেন।
এ সময় বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানী ঢাকার দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি চিত্রের একটি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ উপহার হিসেবে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন ড. ইউনূস। তিনি বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কানাডা সরকারের সমর্থনের জন্য প্রশংসা করেন।
এর আগে এক্স-এ দেয়া পোস্টে ট্রুডো বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অধ্যয়নের অনুমতির সংখ্যা আরও কমিয়ে দেয়া হবে। সেই সঙ্গে বিদেশি কর্মীর বিধিমালাগুলোকে আরও কঠোর করা হবে। আমরা এই বছর ৩৫ শতাংশের কম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনুমতি দিচ্ছি। পরের বছর, এই সংখ্যা আরও ১০ শতাংশ কমে যাবে। অভিবাসন আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি সুবিধাজনক বিষয়। কিন্তু যখন খারাপ কর্তাব্যক্তিরা এই সুবিধার অপব্যবহার করে এবং শিক্ষার্থীদের থেকে বাড়তি সুবিধা নেয়, তখন আমরা গোটা প্রক্রিয়ার ওপর ক্র্যাক ডাউন করতে বাধ্য হই,’
অভিবাসন বিভাগের তথ্য অনুসারে, কানাডা ২০২৩ সালে ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৯০ শিক্ষার্থী এবং চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯২০ জনকে অনুমোদন দিয়েছে। তবে নতুন পদক্ষেপের ফলে ২০২৫ সালে ইস্যু করা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অনুমোদিত সংখ্যা ৪ লাখ ৩৭ হাজার থেকে কমে আসতে পারে।
নীতিমালার পরিবর্তনগুলো কিছু শিক্ষার্থী এবং তাদের স্বামী/স্ত্রীর কাজ করার অধিকার কমিয়ে দিতে পারে। সেই সঙ্গে অস্থায়ীভাবে বসবাসরত বিদেশি কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিটের যোগ্যতা কঠোর করা হতে পারে। এবং সীমিত করা হবে কাজের পরিধি। ঘোষণাটি এমন সময় আসে যখন ট্রুডোর লিবারেল সরকার আগামী বছরের ফেডারেল নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে পিছিয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং বিদেশি কর্মীসহ অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা কমানোর দাবি উঠছে দেশটিতে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দফায় কঠোরতা আরোপ করে কানাডা। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা’র মতে, অভিবাসন সংখ্যার সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন হয়েছে অস্থায়ী বাসিন্দাদের- বিশেষ করে শিক্ষার্থী এবং অস্থায়ী বাসিন্দাদের কারণে। তাদের সংখ্যা গত দুই বছরের মধ্যে দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ২৮ লাখ।
কানাডা ইতোমধ্যে অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা কমিয়ে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা চলতি বছরের এপ্রিলে বেড়ে হয় ৬ দশমিক ৮ শতাংশে। সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন সংকট এবং কানাডায় বসবাসের ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ সামাজিক সমস্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে অতিরিক্ত অভিবাসীদের।
পথরেখা/আসো