• বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
    ২৯ কার্তিক ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৯:২৮

আমেরিকা-চীন যুদ্ধে জড়ালে পরিনাম কী হতে পারে

  • মত-দ্বিমত       
  • ০৭ অক্টোবর, ২০২৪       
  • ৩৫
  •       
  • ০৭-১০-২০২৪, ১৯:৪৮:১০

সুব্রত শুভ্র,  পথরেখা অনলাইন : আমেরিকা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না, বা করবে না–এমন ধারণা বিভ্রান্তিকর। আমেরিকা তার রাষ্ট্রীয় চরিত্রের মধ্য দিয়ে এটিই সবসময় করে আসছে। আমেরিকা তার সাম্রাজ্যবাদী শক্তি টিকিয়ে রাখতে ক্ষুদ্র গণতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক–সকল রাষ্ট্রকেই আক্রমণ করে আসছে তার প্রয়োজনে ও সুবিধার নিরিখে। স্থানীয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা এই স্বার্থ হাসিলে সব সময় তৎপর। এ জন্য হাজার হাজার মানুষ হত্যায়ও তারা পিছপা হয় না। বর্তমানে গোটা বিশ্ব আরেক দ্বৈরথের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর এ দ্বৈরথ চীন ও আমেরিকার মধ্যে।

এখানে তাইওয়ান একটি বড় বিষয়। আমেরিকা তাইওয়ানের জন্য চীনের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে। আমেরিকা ঐতিহ্যগতভাবে তাইওয়ানের আধা-স্বাধীন অবস্থাকে সমর্থন করে এবং তাকে আঞ্চলিক মিত্র হিসেবে দেখে। আর চীন মনে করে তাইওয়ান তার নিজের ভূখণ্ড। ফলে তাইওয়ানের আকাশসীমার চারপাশে চীনা সামরিক বিমানের ঘোরাফেরার বিপরীতে তাইওয়ানের সন্নিকটে জাপানের ছোট ছোট দ্বীপে আমেরিকার যুদ্ধাস্ত্র জড়ো করা প্রবল শঙ্কার জন্ম দেয়। এর সাথে রয়েছে দক্ষিণ চীন সাগর, যেখানে চীনের একচেটিয়া ব্যবসায়িক আগ্রাসন বহুদিন ধরেই বাস্তব। এটি ঠেকাতে তাইওয়ানের কাছে জাপানের ছোট ছোট দ্বীপে ভারী যুদ্ধাস্ত্র মজুতের মাধ্যমে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপান-আমেরিকা।

চীন‑জাপান যুদ্ধ কি হবে
বহু বছর ধরে দক্ষিণ চীন সাগরে নিজ নিজ সীমানা নিয়ে বিভিন্ন দেশ বিরোধে লিপ্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই বিরোধকে ঘিরে উত্তেজনা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে, সম্প্রতি চীন যে ধরনের ব্যাপক দাবি শুরু করেছে, যার মধ্যে বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জ এবং সংলগ্ন জলসীমাও রয়েছে, তা ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইকে ক্ষুব্ধ করেছে। দক্ষিণ চীন সাগর একটি প্রধান সমুদ্রপথ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের হিসাবে ২০১৬ সালে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২১ শতাংশ এই সমুদ্রপথেই হয়েছে, যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৩.৩৭ ট্রিলিয়ন (লাখ কোটি) ডলার। ফলে এই বাণিজ্যপথের নিয়ন্ত্রণকে সোনার হরিণ হিসেবেই দেখছে বিবদমান পক্ষগুলো। এ জন্য সম্ভাব্য দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের দখলদারি ও ‘আগ্রাসন’ ঠেকাতে এশিয়ার মিত্রদের সঙ্গে জোট গড়েছে আমেরিকা, যাকে চীন উসকানি হিসেবেই দেখছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় দেশটির পক্ষ থেকে খোলাখুলি উষ্মাও প্রকাশ করা হয়েছে।

এদিকে চীনও বসে থাকেনি। চীনা সামরিক বাহিনী গত পাঁচ বছরে আধুনিকীকরণের পাশাপাশি নিজের পরিসর বাড়িয়েছে। বিশেষত হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন করেছে, যা চীনকে এগিয়ে রেখেছে। কারণ, আমেরিকা এখনো সে তুলনায় অনুরূপ অস্ত্রের মোতায়েন করেনি। এ ছাড়া তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, চীনা জনসাধারণের মধ্যেও জাতীয়তাবাদী প্রবণতা প্রবল হয়েছে।

আমেরিকা ও চীন ইতিমধ্যে একটি অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় রয়েছে। ২০২৩ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট চার ঘণ্টার বৈঠকে পারস্পরিক সামরিক সহায়তার সম্পর্ক পুনরায় চালুর বিষয়ে সম্মত হন। এর মাধ্যমে জো বাইডেন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি চীনের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা কমাতে তাঁর কঠোর নীতি থেকে কিছুটা সরতে প্রস্তুত। কিন্তু তাঁর প্রশাসন মার্কিন চিপ প্রস্তুতকারকদের চীনের কাছে চিপ বিক্রির অনুমতি দেয়নি। বিপরীতে চীন চিপ প্রস্তুতে মনোযোগ দেয়। পাশাপাশি চিপ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সেমিকন্ডাক্টর বাজারে নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করে। এদিকে নিরাপত্তার প্রশ্নে আমেরিকা চীনা চিপের বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। এ ক্ষেত্রে তারা পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে এক রকম বাধ্য করে। ডাচ প্রস্তুতকারক এএসএমএল চীনে তার চিপ তৈরির সরঞ্জামের চালান বাতিল করতে বাধ্য হয়।

   
চীন-মার্কিন প্রতিযোগিতার বর্তমান অবস্থাটি ১৯৮০ ও ১৯৯০‑এর দশকের প্রথম দিকের মার্কিন-জাপান উত্তেজনার অনুরূপ, যেখানে জাপানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল।

ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বমূলক চীন-মার্কিন সম্পর্কের নতুন বাস্তবতার সাথে বেইজিং মানিয়ে নিয়েছে। এর মানে এই নয় যে, চীন দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত শুরু করতে আগ্রহী। চীন বরাবরই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়েছে। আর এ কারণে চীন সব সময়ই যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

দেশটির সামনে যুদ্ধের তেমন কোনো ইতিহাস নেই। চীনের আচরণে মৌলিক বিষয় হচ্ছে–চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তারা বিপর্যয়কর যুদ্ধ এড়াতে পেরেছে। সর্বশেষ ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামে তারা যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই বিপদটিই সামনে। এ ক্ষেত্রে বেইজিংকে নানাভাবে উসকে দেওয়ার কাজটি করছে ওয়াশিংটন।

আবার যুদ্ধে অনুপস্থিত মানেই অগ্রাসনে অনুপস্থিত–বিষয়টি এমন নয়। বেইজিং দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে তার প্রভাব বাড়াতে সামরিক ও আধাসামরিক ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনও ভারতের সাথে রক্তাক্ত খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও, চীন বড় যুদ্ধ থেকে বিরত থেকেছে। এর ঠিক বিপরীত ইতিহাস আমেরিকার।

পরাশক্তি দেশগুলো যখন অর্থনৈতিক স্থবিরতা, কৌশলগত বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সংকটে আচ্ছন্ন হয়ে হিংসাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় পতিত হয়, তখন তারা আন্তর্জাতিক পরিসরকে হুমকির মুখে ফেলে যুদ্ধবাজ হয়ে ওঠে। একই প্রবণতা দেখা যায় একনায়কতন্ত্রের ক্ষেত্রে, যেখানে ভবিষ্যৎ পতনের আশঙ্কা থেকে যুদ্ধবাজ প্রবণতার জন্ম হয়। ইতিহাসে আমরা এমনটাই দেখে এসেছি।

এদিকে বর্তমান সংকটে স্পষ্ট যে, রাশিয়া বনাম ন্যাটো সমর্থনপুষ্ট ইউক্রেন যুদ্ধ চীনকে প্রতিপক্ষের দিক থেকে বিদ্যমান সামরিক চ্যালেঞ্জগুলো বোঝার ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। ইউক্রেনের সংঘাত চীনকে বেশ কিছু অর্থনৈতিক সুবিধাও দিয়েছে। বিশেষত, রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা বাড়তি তেল ও গ্যাস তাকে কিছু বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। এই তেল‑গ্যাস অনেক ইউরোপীয় শিল্পের প্রাণশক্তি ছিল। এই সুবিধা পেতে চীনা সংস্থাগুলো আগে লড়াইও করেছে। একইভাবে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার কথাও বলা যায়। ইউক্রেনের মতো করে মধ্যপ্রাচ্যেও আমেরিকার ঘুরিয়ে ও সরাসরি যুক্ত হওয়াটা চীনকে এখন পর্যন্ত সরাসরি সংঘাত থেকে দূরে রখেছে। ফলে এই সংঘাত চলাকালে চীন নিজেকে প্রস্তুত করার সুযোগ পেয়েছে।

বিগত দুই দশক চীন তার নিজের মতো করে এগিয়েছে। বিশেষ করে গত এক দশকে চীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য নিজেকে যথেষ্ট গুছিয়ে নিয়েছে। এই সময়ে লোহিত ও ভারত সাগরের আপরাপর সমুদ্র শক্তিগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করেছে। শক্তিশালী পরাশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রস্তুতি নিয়েছে। এবং মার্কিন নৌশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বেইজিং তার অ্যান্টি-শিপ ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ফলে বলতেই হয় যে, ভবিষ্যৎ সংঘাতের জন্য চীন প্রস্তুতি নিয়েছে, যা এখনো চলমান। এই প্রস্তুতি বেইজিংয়ের দিক থেকে ফল নির্ধারকও হয়ে উঠতে পারে।

সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, চীনকে অবশ্যই ‘সবচেয়ে খারাপ ও চরম পরিস্থিতি’র জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই ভাষ্য তাইওয়ান, জাপান, ভারত ও ফিলিপাইনসহ প্রতিবেশীদের সাথে চীনের ক্রমবর্ধমান সংকটের ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয়।

১৯৫০ সালে চীন পরমাণু হামলার ঝুঁকি নিয়ে উত্তর কোরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করা মার্কিন বাহিনীকে রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য করেছিল। সেই দশকের পর চীন তাইওয়ান প্রণালীর দ্বীপগুলোতে থাকা জাতীয়তাবাদী আস্তানাগুলোতে গোলাবর্ষণের মাধ্যমে প্রায় দুটি যুদ্ধ শুরু করে। ১৯৬২ সালে চীন হিমালয়ে চীনা-দাবিকৃত অঞ্চলে ফাঁড়ি তৈরির পর ভারতীয় বাহিনী আক্রমণ করেছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, চীন মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কয়েক হাজার সৈন্য পাঠিয়েছিল। ১৯৬৯ সালে, বেইজিং আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়েছিল উসুরি নদীর তীরে মস্কো বাহিনীর পিছু ধাওয়া করে।

১৯৭৮ সালে চীন নিজ সীমান্ত রক্ষায় ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে কোণঠাসা করার জন্য, আমেরিকার সাথে একটি আধা-জোট গঠন করে। যখন ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে, তখন চীনের স্থল সীমান্তের প্রধান হুমকিগুলো প্রায় সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। রাশিয়ার সমর্থন ছাড়া ভারত, ভিয়েতনাম এবং মধ্য এশিয়ার নবগঠিত দেশগুলো চীনের সীমানায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থানে ছিল না। পরিবর্তে রাশিয়া বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগী হয়।

ভবিষ্যতের বিষয়ে চীনের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। আমেরিকা ও ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে চীন এগিয়ে আসে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সহজ প্রবেশাধিকার এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন পায়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ থেকে ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে দেশটির অর্থনীতি ভয়াবহ গতিতে এগিয়েছে। দেশের পর দেশ চীনের ক্রমবর্ধমান বাজারে প্রবেশের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হংকংকে ফিরিয়ে দিয়েছে ব্রিটেন। ম্যাকাও ছেড়ে দিয়েছে পর্তুগাল। যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত চীনকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র পরিচালক উইলিয়াম বার্নসসহ অনেক মার্কিন কর্মকর্তা ‘বিশ্বাস’ করেন যে, প্রেসিডেন্ট শি ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ানকে দখলের পথ খুঁজছেন। আর এমন লক্ষণ বা অজুহাত খুঁজে আমেরিকা তাইওয়ানের চারপাশ থেকে চীনের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ চীন সাগরে জাপানের নৌবাহিনীর একটি ডেস্ট্রয়ারসহ অন্য চারটি দেশের নৌবাহিনীর একাধিক জাহাজ যৌথ মহড়া চালিয়েছে। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশটির ডেস্ট্রয়ার সাজানামি আমেরিকা, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আরও পাঁচটি জাহাজের সাথে একত্রে ফিলিপাইনের একান্ত অর্থনৈতিক (সমুদ্র) অঞ্চলে এ মহড়া চালিয়েছে। উদ্দেশ্য, মেরিটাইম কো-অপারেটিভ অ্যাক্টিভিটি বা সামুদ্রিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম। এই বিষয়ে বিশ্বস্ত সূত্রগুলোর ভাষ্যমতে, মহড়ার আগে জাপানি ডেস্ট্রয়ার এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের জাহাজগুলো তাইওয়ান প্রণালীর মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছিল। ডেস্ট্রয়ারের এই যাত্রার বিরোধিতা করে এটিকে চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণকারী একটি উসকানিমূলক কাজ হিসেবে অভিহিত করেছে চীন সরকার।

দক্ষিণ চীন সাগরে জাপানসহ পাঁচ দেশ নৌমহড়া দেয়দক্ষিণ চীন সাগরে জাপানসহ পাঁচ দেশ নৌমহড়া দেয়। ছবি: রয়টার্স
আমেরিকার আগ্রাসনমূলক ফাঁদে পা দিয়ে যুদ্ধের শুরুটা হতে পারে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে, যদি চীন সেখানে আক্রমণ করে বসে। অথবা ভারত, জাপান, ফিলিপাইন বা অন্য কোনো দেশের সাথে ২০২৫-২৭ বা ২০২৯ এর মধ্যে কোনো সংঘাতে চীন জড়িয়ে যায়। সাম্ভাব্য এই যুদ্ধে বাংলাদেশের মাটি ও আকাশ পথ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা চীন‑মার্কিন এই দ্বৈরথের প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে বিচার করতে চান, যেখানে চীনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকা‑ভারত‑জাপানের যৌথ শক্তি।

ক্ষেত্রটি চেনা যাবে একটু আশপাশে তাকালেই। যেমন, মিয়ানমারের পর মালদ্বীপ, শ্রীলংকাতে নিজ সমর্থিত সরকার বসিয়েছে চীন। উভয় পক্ষই প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরোদমে। বিশেষ করে আমেরিকা এই মুহূর্তে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে আমেরিকাও তাই পাল্টা হিসেবে নিজের সমর্থনপুষ্ট সরকার বা ক্ষমতাকাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ হিস্যা নিতে মরিয়া। গত দুই দশকে তারা প্রায় বিশ্বের প্রতিটি দেশকে চীনের বিরুদ্ধে একত্রিত করার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন উপায়ে। স্পষ্টভাবে চীনকে তাইওয়ানে আক্রমণে উসকে দিয়ে বিশ্বকে স্থায়ীভাবে ‘চীন’ এবং ‘চীন নয়’–এ দুই ধারণায় বিভক্ত করবে। সামনে রাখা হবে ভালো ও মন্দ নামের বাইনারি, যা আমেরিকার সমর্থিত সরকারগুলোর দেশে মন্দের (পড়ুন চীন) বিরুদ্ধে জনসাধারণকে একাট্টা হতে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হবে।

কারা কোন পক্ষে আছে? আমেরিকার দিকে যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, জাপান, ভারতসহ অন্য অনেক দেশ। এমনকি ভিয়েতনামও এই যুদ্ধে খুশি হবে না। দক্ষিণ কোরিয়াও বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। প্রচারমাধ্যমে প্রচার হবে কোনো বিবেকবান ব্যক্তি চীনের পক্ষ নিতে পারে না। চীনকে নাৎসিদের মতো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। চীন সাম্রাজ্যের পুনর্জন্ম এবং আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে নিম্নতর হবে। চীন যদি যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে চীন ও অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া আর কিছুই নিশ্চিত নয়। যুদ্ধের রাজনীতি বিশৃঙ্খলার রাজনীতি। এই যুদ্ধ এশিয়াতে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ এবং পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা, মৃত্যু ও ধ্বংস বয়ে আনতে পারে।

সম্ভাব্য যুদ্ধে যাই ঘটুক না কেন, চীনের ক্ষেত্রে যা ঘটবে:

১। চীন কার্যত তার সমস্ত বৈদেশিক বাণিজ্য হারাবে। নিষেধাজ্ঞা চীনকে যোগাযোগ, আন্তর্জাতিক অর্থ, বাণিজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। যা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারে, এটি শেষ পর্যন্ত চীনের সম্পদ ধ্বংস করবে।

২। চীনা কূটনীতিকদের বেশির ভাগকেই ওইসিডির ৩৮ দেশসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বহিষ্কার করা হবে। এর সাথে এশিয়ার অনেক দেশ যুক্ত হবে।

৩। কিছু দেশে চীনা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে (সম্ভবত তাইওয়ানের জনগণের জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য)।

৪। বিভিন্ন দেশে থাকা চীনা নাগরিকদের চীনে ফেরত পাঠানো হবে। যোগাযোগ ও বিনিময় বন্ধ হয়ে যাবে।

৫। রাশিয়া ও ইরান এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত হলে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখে দিতে পারে।

পৃথিবীর দেশগুলো আমেরিকা তথা ওয়াশিংটনের দেখানো চশমা এড়াতে না পারলে সাম্ভাব্য এই যুদ্ধ হবে না বা কখনোই যে হবে না, তার নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী এই মুহূর্তে করা যাচ্ছে না। কারণ অনেকগুলো আনুষঙ্গিক বিষয়ের ওপর এটি নির্ভর করবে।

লেখক: মাল্টিডিসিপ্লিনারি আর্টিস্ট এবং সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক
পথরেখা/এআর

 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।