পথরেখা অনলাই : এই পৃথিবীতে ‘ফ্রি লাঞ্চ’ (বা ফ্রি মিল) বলে কিছু নেই। আমেরিকান লেখক রবার্ট এ. হাইনলাইনের ‘দ্য মুন ইজ অ্যা হার্শ মিসট্রেস’ উপন্যাসের একটি বিখ্যাত লাইন এটি। সত্যিইতো দুঃখ-কষ্ঠ, আনন্দ, ভালোবাসার মতো আবেগীয় বিষয়গুলোকে বাদ দিলে এই পৃথিবীর কোন বিষয়টির সাথে অর্থের যোগাযোগ নেই বলুনতো। আজকের এই ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘অর্থ উপার্জন’ একটি অপরিহার্য বিষয়।
এই প্রেক্ষাপটে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো তুমুল জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো অর্থ উপার্জনের পথে হাঁটবে না, এমনটা নিশ্চয়ই হতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে প্ল্যাটফর্মগুলো অর্থ উপার্জন করে কিভাবে। আজকে চলুন হোয়াটসঅ্যাপ কিভাবে অর্থ উপার্জন করে সেটা দেখে নেয়া যাক।
বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজিং অ্যাপ। বিশ্বজুড়ে অ্যাপটির ২৭৮ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে। এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ও ডিক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় বলে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ আদান-প্রদানে ব্যবহারকারীরা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কেননা নিজেদের মধ্যে শেয়ার করা মেসেজ তৃতীয় কোনো ব্যক্তির হাতে বেহাত হবে না- এই নিশ্চয়তাটুকুই ব্যবহারকারীদের কাছে মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপকে অনেক বেশি বিশ্বস্ত করে তুলেছে।
সাধারণত বিজ্ঞাপনই (বা ডিজিটাল বিজ্ঞাপন) হলো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর অর্থ উপার্জনের প্রধান উৎস। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী মাত্রই জানেন, এই অ্যাপটিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। পাশাপাশি অ্যাপটি একেবারে বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। শুধু তাই নয়, গত বছর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যানেল খোলার যে ফিচারটি চালু হয়েছে সেটিও পুরোপুরি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি এই চ্যানেলগুলোতে সাবস্ক্রাইব করার জন্যেও ব্যবহারকারীদের কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না এবং প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের চ্যানেলে যুক্ত হওয়া ব্যবহারকারীদের বিনামূল্যে মেসেজ পাঠাতে পারে।
হোয়াটসঅ্যাপের অর্থ উপার্জনের উৎসটা তাহলে কোথায়? হ্যাঁ, এটা ঠিক যে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যানেল তৈরি করতে এবং চ্যানেলের মাধ্যমে গ্রাহক বা ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগের করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো প্রকার অর্থ প্রদান করতে হয় না। কিন্তু, চ্যানেলের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সরাসরি কোনো ব্যবহারকারীকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠাতে চায় সেক্ষেত্রে তাদেরকে একটি ‘প্রিমিয়াম ফি’ প্রদান করতে হয় অ্যাপটিকে।
অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের সাথে সরাসরি চ্যাট করতে হলে, তাদেরকে কোনো লিঙ্ক বা অফারের মেসেজ পাঠাতে হলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট একটি ফি দিতে হয়। আর এটাই হোয়াটসঅ্যাপের অর্থ উপার্জনের মূল উৎস।
এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে গ্রাহকদের বা সম্ভাব্য গ্রাহকদের কেবলমাত্র মেসেজ পাঠানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কেন অর্থ প্রদান করবে। আসলে হোয়াটসঅ্যাপে গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু বিভিন্ন অফারই পাঠায় না, লেনদেনও করে থাকে। অর্থাৎ, বিভিন্ন পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত অফার পাঠানোর পাশাপাশি সরাসরি চ্যাটের মাধ্যমে গ্রাহকদেরকে পেমেন্ট প্রদানেরও সুযোগ দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ, হোয়াটসঅ্যাপেই ক্রয়-বিক্রয়ের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা সম্ভব। তো বুঝতেই পারছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো কেন প্রিমিয়াম ফি প্রদানে আগ্রহী হবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপের অনেক দেশেই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনের (ট্রানজেকশন) বিষয়টি একেবারে নতুন হলেও ভারতে ইতোমধ্যেই এর ব্যবহার বেশ ভালোভাবেই শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে ডিজিটাল লেনদেন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে আধুনিক প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত নাগরিকদের অনেকেই এখন বিভিন্ন সার্ভিসের জন্য পেমেন্ট করছেন হোয়াটসঅ্যাপেই। এই যেমন ব্যাঙ্গালোর শহরে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেই বাসের টিকিট কেনার পাশাপাশি নির্দিষ্ট যাত্রার জন্য বাসের আসন নির্বাচনও করা সম্ভব।
পথরেখা/এআর