মৃণাল বন্দ্য, কানাডা থেকে : ক্ষেপাটে স্বভাবের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে এখনো ক্ষমতা হাতে নিতে বেশ কিছুদিন বাকী। কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন বক্তৃতায় বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন। যেমন সীমান্তবর্তী দেশ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ছুটে গেছেন ট্রাম্পের কাছে। মিটিয়ে নিতে অতীতের সকল ভুল আর ভবিষ্যতের কিছু চাওয়া পাওয়া। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম কোন রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে আলোচনায় মিলিত হলেন ট্রাম্প।
সপ্তাহের শুরুতে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। যদি তারা সীমান্তে অবৈধ মাদক ও অনিবন্ধিত অভিবাসীর প্রবেশ থামাতে ব্যর্থ হয় তবে তিনি সেসব দেশ থেকে আমদানিকৃত সকল পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করবেন। আর এতেই ঘুম হারাম মেক্সিকো আর কানাডার। সাথে সাথে জাস্টিন ট্রুডো ফোনে কথা বলেছিলেন ট্রাম্পের সাথে। তবে তেমন একটা ফলপ্রসূ হয়নি সেই ফোনালাপ। এবার ছুটে গেছেন নিজেই দেখা করতে সপ্তাহ না পেরুতেই।
ট্রুডো শুক্রবার সন্ধ্যায় ফ্লোরিডার পশ্চিম পাম বিচে পৌঁছেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। ডিনারের টেবিলে আন্তরিকতার সাথে সেরেছেন আলোচনা। চরম গোপনীয়তার সাথে তিনি সেখানে গেলেও বুঝতে বাকী নেই কেন তিনি সেখানে গিয়েছেন। যারা এই পরিকল্পনার সাথে পরিচিত, তারা গোপনীয়তা রক্ষা করে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছেন।
ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনকে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার হুমকি দেন, এই শুল্কগুলোকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেন, যা নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটারদের প্রধান উদ্বেগের বিষয় ছিল। তিনি বলেছেন, যদি কানাডা ও মেক্সিকো এবং চীন তাদের পদক্ষেপ নেয় না, তবে তিনি চীনের পণ্যের উপর ১০% অতিরিক্ত শুল্ক এবং মেক্সিকো ও কানাডার সমস্ত পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করবেন। এটি তার নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবাহ সীমিত করার স্পষ্ট হুমকি, যা বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের এই হুমকি, যা তিনি তার সোশ্যাল নেটওয়ার্কে দিয়েছিলেন, কানাডিয়ান ডলারের মূল্যপতন ঘটিয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, কানাডার সীমান্ত পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অভিবাসীদের সংখ্যা মেক্সিকো থেকে আসা অভিবাসীদের তুলনায় খুবই কম। মেক্সিকো সীমান্তে ২০২২ সালের শুরু থেকে আটক করা ফেন্টানাইলের পরিমাণ কানাডা সীমান্তে আটক করা ফেন্টানাইলের পরিমাণের চেয়ে প্রায় ১,০০০ গুণ বেশি, বলে জানাচ্ছে মার্কিন কাস্টমস ও বর্ডার প্রটেকশন ডেটা। তবে, ট্রুডোর উপর ঘরের মধ্যেই রয়েছে চাপ। আসন্ন নির্বাচন আর অভিবাসী নিয়ে ঘরে বাইরে এই চাপ সামলে উঠতে না পারলে অপেক্ষা করছে ভয়ানক দিন।
কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, যার মূল্য প্রতি বছর ৯০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কাঁচামাল তেল সরবরাহকারী দেশ, যা প্রতিদিন মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যারেল তেল পাম্প করে মধ্যপশ্চিমের রিফাইনারি এবং অন্যান্য জায়গায় পাঠায়। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যদি ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মার্কিন আমদানির বিরুদ্ধে ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেন, তবে মেক্সিকো এবং কানাডা সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
মেক্সিকো এবং কানাডার উপর শুল্কও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের বাণিজ্য বিরোধ আবার নতুন করে উসকে দেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে, যখন তিনি উত্তর আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি [নাফটা] পুনঃপরীক্ষার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। নতুনভাবে সংস্কৃত বাণিজ্য চুক্তি, যা যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি নামে পরিচিত, এটি বিভিন্ন খাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য অনুমোদন করে।
পথরেখা/আসো