পথরেখা অনলাইন : অপেক্ষার পালা শেষ। ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। চারবছর আগে দুই ফাইনালিষ্ট ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এবারের ১৩তম আসর। অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলল। দেখতে দেখতে মহেন্দ্রক্ষণটি এসেই গেল। বুধবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের শুরুর দামামা বেজে যাওয়ার কথা। হওয়ার কথা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ও ‘ক্যাপ্টেনস ডে’ অনুষ্ঠান। অংশগ্রহণকারী দলের ১০ অধিনায়কের অফিসিয়াল ফটোসেশনও হওয়ার কথা এদিন। ১০ অধিনায়ককে নিয়ে ‘ক্যাপ্টেনস ডে’ ও অফিসিয়াল ফটোসেশনপর্ব যথা সময়েই হবে। আহমেদাবাদের এই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামেই উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে ২০১৯ বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরু হবে ৭ অক্টোবর, ধর্মশালার এইচপিসিএ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের ম্যাচ দিয়ে। ১০ অক্টোবর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচটিও বাংলাদেশ খেলবে এই ধর্মশালাতেই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ম্যাচ দুটি সামনে রেখে বাংলাদেশ দল আসামের গোহাটি থেকে এরই মধ্যে হিমাচল প্রবেশের ধর্মশালায় পৌঁছে গেছে। তবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দলের সঙ্গে ধর্মশালায় যাননি। তিনি থেকে গেছেন আহমেদাবাদে, ‘ক্যাপ্টেনস ডে’র অনুষ্ঠান ও অধিনায়কদের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনপর্বে অংশ নিতে। বিশ্বকাপ সামনে রেখে প্রতিটি দলই শেষ সময়ের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে। সেই প্রস্তুতির ফাঁকে ফাঁকে ক্রিকেটাররা নিজ নিজ দেশের মানুষকে শুনিয়েছেন আশাবাদের গান। দিচ্ছেন ভারতের মাটিতে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার প্রস্তুতি। বাংলাদেশের দলের তরুণ সদস্য তানজিদ হাসান তামিম যেমন গাইলেন আত্মবিশ্বাসের গান। বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলে এখন দুই জন করে সাকিব-তামিম। নামের মিল ছাড়াও ‘দুই তামিমের’ মধ্যে আরও একটা বড় মিল আছে।
‘বড় তামিম’ (তামিম ইকবাল) ও ‘ছোট তামিম’ (তানজিদ হাসান তামিম), দুজনেই ওপেনার। দুজনেই দলে থাকলে দারুণ একটা ব্যাপার হতো। কিন্তু তামিম ইকবাল (বড় তামিম) এবারের বিশ্বকাপ দলে নেই। তামিম ইকবালের বিশ্বকাপ দলে না থাকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। এখনো হয়তো তামিম ইকবাল ভক্তদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অনেকের মনেই শঙ্কা— বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল অভিজ্ঞ তামিম ইকবালের শূন্যতায় ভুগবে! এমন শঙ্কা যারা করছেন, তারা আশ্বস্ত হতে পারেন ছোট তামিমের আত্মবিশ্বাসের কথা শুনে। প্রতিভা আর সামর্থের প্রমাণ দিয়েই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। আছেন বিশ্বকাপ দলেও। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকটা তার সুখবর হয়নি। এ পর্যন্ত ৫টি ওয়ানডে খেলে ৪ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। ইনিংস ওপেন করতে নেমে সেই ৪ ইনিংসে করেছেন মাত্র ৩৬ রান!
যদিও ডাক মেরে শুরু করেছিলেন। পরের তিনটি ইনিংস ১৩, ১৬ ও ৫ রানের। রানের হিসেবে শুরুটা চরম হতাশাজনক। তবে সেই হতাশা তানজিদ তামিম কাটিয়ে উঠেছেন বিশ্বকাপের আগে খেলা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্সের মাধ্যমে। ভারতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিতে ৮৪ ও ৪৫ রানের ইনিংস খেলেছেন তানজিদ হাসান তামিম। যা তার আন্তর্জাতিক অভিষেকের হতাশা মুছে দিয়ে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। স্বপ্নের বিশ্বকাপের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের প্রতি সেই আত্মবিশ্বাসের গানই গাইলেন তিনিও। এদিকে বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে রান উৎসবের, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে রানের ফোয়ারা ছোটার কারণেই এমন ধারনা করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই। শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো? প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই। বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে। প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি। উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে। বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে।
পথরেখা/আসো