মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : মেহেদি হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুন্যে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে দারুণ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ৯২ বল বাকি থাকতেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাকিব আল হাসানের দল। বিশ্বকাপ মিশনে দেশ ছাড়ার আগের দিন দল ঘোষণা, মাস দুয়েক আগে অধিনায়কত্বে পরিবর্তন, ওপেনিং জুটিতে মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো পরিবর্তন সবমিলিয়ে কিছুটা হলেও মানসিকভাবে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তবে মাঠ আর মাঠের বাইরের এসব বিতর্ক পারফরম্যান্স দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানদের হারিয়ে ভারত মিশনের শুরুটা রাঙাল সাকিব আল হাসানের দল। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৭ ওভার ২ বলে ১৫৬ রান তুলে অলআউট হয় আফগানিস্তান। সর্বোচ্চ ৪৭ রান এসেছে রহমানুল্লাহ গুরবাজের ব্যাট থেকে। ৩টি করে উইকেট শিকার করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। জবাবে খেলতে নেমে ৩৪ ওভার ৪ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্ত ৫৯ ও মিরাজ ৫৭ রান করেন। বল হাতে ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন মিরাজ।
১৫৭ রানের মামুলি লক্ষ্যকে টপকে যেতে যতটা সাবধানী হওয়া উচিৎ ছিল ততটা করতে পারেনি। দ্রæত দুই ওপেনারকে হারিয়ে শুরু থেকে বিপদে বাংলাদেশও। মাত্র ২৭ রান তুলতেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে। তবে এর মধ্যে দুর্ভাগ্যের শিকার হলেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। একটি রান নেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে নজিবুল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট হয়ে যান এই তরুন। ১৩ বলে ৫ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন তামিম। দলীয় রান ছিল ১৯। লিটন দাসের ওপর প্রত্যাশা বেশি থাকলেও পুরোপুরি হতাশ করেন তিনি। ইনিংসের সপ্তম ওভারের ৪র্থ বলে ফজল হক ফারুকির বলে বোল্ড হয়ে যান। কভার অঞ্চল দিয়ে মারার জন্য শট খেললেন। কিন্তু বল ভেতরের কানায় লেগে গিয়ে হিট করলো স্ট্যাম্পে। বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি। এরপর জুটি বেঁধে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মেহেদী হাসান মিরাজ দলকে জয়ের বন্দরে পৌছে দেন।
এর আগে বাংলাদেশের বোলারদের ঘূর্ণিতে দিশেহারা আফগানরা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৫৬ রানে। ধর্মশালায় পেসাররা তোপ দাগবেন, পরিসংখ্যান বলছিল এমনটাই। কিন্তু বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ যেন সেই নিয়ম বদলে দিতে নামলেন। হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে এ দুই অভিজ্ঞ স্পিনারের জাদুতে নাকাল হয়েছেন আফগানিস্তানের ব্যাটাররা। একটা সময় ২ উইকেটে ১১২ রানে পৌঁছে যাওয়া আফগানিস্তান শেষ ৮ উইকেট হারায় মাত্র ৪৪ রানে! অথচ যেভাবে এগুচ্ছিলেন তাতে করে বড় স্কোর হওয়াটা ছিল প্রত্যাশিত। তাতে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানেই গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে সাকিবের পরিসংখ্যান সব সময়ই দারুণ। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও এই বাঁহাতি স্পিনার। দুই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেননি ঠিকই। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ৮ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সাউদাম্পটনে হেরেছিল আফগানরা। বোলিংয়ে এবারও উজ্জ্বল থাকলেন, সুযোগ পেলে ব্যাটিংয়ের ঝলকটাও দেখাতে চাইবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৯ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান শুরুটা দারুণ করেছিলেন। প্রথম ৮ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে করে ৪৭ রান। নবম ওভারে ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব। ওভারের দ্বিতীয় বলে সুইপ করেন ইব্রাহিম, ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচ ধরেন তানজিদ হাসান তামিম। ২৫ বলে ২২ রান করেন আফগানের এই ওপেনার। ৩ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা রহমত শাহকে নিয়ে আরও একটি বড় জুটি গড়ার পথে এগোতে থাকেন গুরবাজ। তবে এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি সাকিব। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে সুইপ করতে যান রহমত।
এই ব্যাটারের খেলা বল টপ এজ হওয়া বল মিড অফে সহজে লুফে নেন লিটন দাস। ২৫ বলে ১৮ রান করেন রহমত। দ্বিতীয় উইকেটে রহমত-গুরবাজের জুটিতে আসে ৪১ বলে ৩৬ রান। তৃতীয় উইকেটে গুরবাজ ও হাসমতউল্লাহ শাহিদি ২৯ রানের একটি জুটি গড়েন। এর পরই খেই হারায় আফগান ব্যাটিং অর্ডার। আফগানিস্তানের রান যখন ১১২, তখন পর পর ফেরেন গুরবাজ ও হাসমতউল্লাহ। ৬২ বলে ৪৭ রানের সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেছেন গুরবাজ। বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে শরীফুল ইসলাম নিয়েছেন ২টি উইকেট। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ।
পথরেখা/আসো