পথরেখা অনলাইন : ইনজুরি একজন ক্রিকেটারের কতটা বড় শত্রু সেটা প্রায়শই বোঝা যায়। বড় বড় আসরগুলোও খেলা মিস হয়ে যায়। যেমন হয়েছে তামিম ইকবালের। এবার শংকায় পড়েছে সাকিব আল হাসানের বিশ্বকাপে সবগুলো ম্যাচ খেলা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েছিলেন এই বাহাতি। এরপর ম্যাচ শেষ না হতেই ছুটতে হয়েছে হাসপাতালে। যে কারণে ম্যাচের শেষদিকে ছিলেন না সাকিব। শনিবার দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তার পেশিতে চিড় ধরা পড়েছে। সাকিবের ইনজুরির চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও হাতে পায়নি বাংলাদেশ। রিপোর্ট পেলে বাকিটা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সাকিবের পেশিতে চিড় ধরা পড়েছে, এখনও রিপোর্ট আসেনি। আশা করি ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচ খেলতে পারবে।’ চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে খেলতে নেমে শুরুর দিকে বেশ স্ট্রাগলই করছিলেন টাইগার অধিনায়ক। পরবর্তীতে মানিয়েও নিচ্ছিলেন সব। তবে রাচিন রবীন্দ্রের বলে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে থাই স্ট্রেইনের চোট পান সাকিব। তাৎক্ষণিক মাঠে খানিকটা সেবা শুশ্রুষা করেন ফিজিও।
যদিও পরবর্তীতে আবারও ব্যাট করেন অধিনায়ক, আউট হওয়ার আগে করেন ৪০ রান। এরপর বল হাতেও নিজের কোটার ১০ ওভার শেষ করেন। পরে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছেড়ে সোজা গিয়েছিলেন হাসপাতালে। ম্যাচ শেষে তাই সাকিব কথা বলতে আসেননি পোস্ট ম্যাচ প্রেজেন্টেশনেও। আর অধিনায়কের পরিবর্তে আসেন সহ-অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত। এ সময় জানান, সাকিব হাসাপাতালে স্ক্যান করার উদ্দেশে গিয়েছেন। চোট কতটা গুরুতর তা চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই বুঝতে পারবে টিম ম্যানেজমেন্ট। সাকিবের চোটের কারণে বাংলাদেশের সমর্থকদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। তিন ম্যাচ থেকে মাত্র ২ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখতে বড় ভরসা হতে পারেন সাকিব। এমন অবস্থায় অধিনায়ক না থাকা দলের জন্য বড় সমস্যা। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই সমস্যার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ দল। আগামী ১৯ অক্টোবর ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে খেলতে পারবেন তো সাকিব?
এই যখন অবস্থা তখন বিশ্বকাপের ‘সেরা’ অলরাউন্ডার হিসেবে বলা হয়েছে সাকিবের নাম। সেরা শব্দটা বরাবরই নানা সমালোচনা আর মত পার্থক্যে ঘেরা। তবুও পরিসংখ্যান বিবেচনায় তো কাউকে সরাসরি সেরা বলেই দেয়া যায়। যদিও সেরা তকমাটা লাগাতে অনেক সময় পরিবেশ-পরিস্থিতি ও কার্যকরিতাও বিবেচনায় নিতে হয়। তবে পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল এবং শ্রীলঙ্কান সনাথ জয়সুরিয়াকে টপকে সাকিব পরিসংখ্যানের শীর্ষে উঠে গেছেন। পাঁচ বিশ্বকাপে সাকিব ১ হাজার ২০১ রান করেছেন। নিয়েছেন ৩৮ উইকেট। সেই পরিসংখ্যান তাকে বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ডার করে তুলেছে। এই তালিকায় তারচেয়ে পেছনে আছেন ইমরান খান-কপিল দেবের মত সাবেক তারকারা। ২০০৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৫টি বিশ্বকাপে খেলেন ক্রিস গেইল। ৩০ ম্যাচে ১ হাজার ১৮৬ রান এবং ১৬টি উইকেট শিকার করেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক জয়সুরিয়ার। তিনি ১৯৯২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত মোট ৫টি আসরে অংশ নিয়েছিলেন। একবার বিশ্বকাপ জেতা জয়সুরিয়া ৩৮ ম্যাচ খেলে সর্বমোট ১ হাজার ১৬৫ রান ও ২৭ উইকেট সংগ্রহ করেন।
সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৩১টি ম্যাচ খেলে ১ হাজার ২০১ রান ও ৩৮ উইকেট নিয়েছেন। এখানে বিশ্বকাপে সাকিবের বিরল রেকর্ডই গড়েছেন বলা যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয় হিসেবে মাঠে নামা মানেই নতুন রেকর্ডের জন্ম। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ডে নিজের নাম বসিয়েছেন। ভারতে নিজের ক্যারিয়ারের পঞ্চম বিশ্বকাপে আরো একটি কীর্তি গড়লেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ফলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে বিরল এক রেকর্ডের মালিক হলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। গত শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬ রান করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকার শীর্ষস্থানে উঠে আসেন তিনি। শীর্ষ আসনে উঠে আসতে গিয়ে সাকিব পেছনে ফেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্রিস গেইল ও শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক সানাথ জয়সুরিয়াকে। যা তাকে ২০১৯ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রহকারী ব্যাটারদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে নিয়ে গিয়েছিল। সেই আসরে ৬৪৮ রান করে ভারতের রোহিত শর্মা শীর্ষ রান সংগ্রহাকদের আসন দখল করেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার করেন ৬৪৭ রান। বর্তমানে ক্রিকেট খেলছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে সাকিব আল হাসানের আশপাশে আর কেউ নেই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা অলরাউন্ডারের তালিকার শীর্ষ ৪০ এও নেই কেউ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব ১১৬১ রান নিয়ে খেলতে নামেন। গেইলকে টপকাতে প্রয়োজন ছিল ২৬ রানের আর জয়সুরিয়াকে টপকাতে প্র্রয়োজন ছিল পাঁচ রানের। সাকিব ২৪ রান করে পর পর তিন বলে দুটি ছয় ও একটি চার মারেন। এখন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া পালা।
পথরেখা/আসো