পথরেখা অনলাইন : বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের আশাটা প্রতনিয়ত কমছে। তবুও দক্ষিন আফ্রিকাকে পরাজিত করার স্বপ্ন নিয়ে সাকিব আল হাসানের দল এখন মুম্বাইয়ে অবস্থান করছে। ভারতের বিপক্ষে শেষ মুহুর্তের সিদ্বান্তে খেলেননি টাইগার অধিনায়ক। মঙ্গলবারের ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এই অলরাউন্ডার খেলবেন কিনা সেটি অবশ্য নিশ্চিত করা হয়নি। তবে দল হিসেবে জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। সে কারণেই একটা জয় দিয়ে দলের চেহারা বদলাতে চাইছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। ভারতের মাটিতে চলমান আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের দৈর্ঘ্য বেশ লম্বা। বিশ্বকাপের ১০টি দলকে ৪৫ দিনের পরিক্রমায় খেলতে হবে কমপক্ষে ৯টি করে ম্যাচ। লিগ পর্ব শেষে সেরা চার দল নাম লেখাবে সেমিফাইনালে। ১৯ নভেম্বর সেমিফাইনালের দুই বিজয়ীর মধ্যে শিরোপা লড়াই শেষে পর্দা নামবে ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপের। লম্বা সময় ধরে খেলা হওয়ায় পথ পরিক্রমায় লড়াইটা বড্ড কঠিন। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো ফেভারিট দলের বাজে খেলাটা ভরাডুবিতে। স্বাগতিক ভারত আর নিউজিল্যান্ড প্রায় শতভাগ সাফল্য নিয়ে উড়ছে। শ্রীলঙ্কাও রয়েছে জয়হীন।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর পথ হারিয়েছে। টানা তিন ম্যাচ হারা টাইগারদের জন্য ফ্যাকাশে হয়ে আসছে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের পর ভারতের কাছে বাংলাদেশের পরাজয় ছিল দৃষ্টিকটু। ধর্মশালায় ইংলিশদের সামনে টাইগাররা আত্মসমর্পণ করেছে ১৩৭ রানে। দেদার মার খেয়ে বাংলাদেশের বোলাররা ইংলিশ ইনিংস নিয়ে গেছে ৩৬৪ রানে। শেখ মেহেদী ৪ আর শরিফুল ইসলাম ৩ উইকেট নিলেও ইংলিশ ব্যাটারদের রুদ্ররোষ থেকে বাঁচতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছে ৮ উইকেটে। দুটি ম্যাচেই আগে-পরে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল নবিশের মতো। একমাত্র মুশফিকুর টানা দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিটন দাসের ব্যাট থেকে এসেছে ৭৬ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব ৪০ আর মাহামুদ উল্লাহ রিয়াদের অবদান ৪১ রান। বাংলাদেশের ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম কী করছেন নিজেই হয়তো জানেন না! তিন ম্যাচে সাকল্যে ২২ রান করেছেন।
যদিও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ৫১ রান করে নিজের আগমনী বার্তা শুনিয়েছেন তামিম। এখন প্রতি ম্যাচেই অনুভূত হচ্ছে তামিম ইকবালের অভাব। নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়রা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছেন না। মেহেদী হাসান মিরাজকে কখন কোথায় খেলানো হবে, সেটি আগাম বোঝা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাংলাদশ বিশ্বকাপে অগোছালো দল হিসেবে খেলছে বললে ভুল বলা হবেনা। এদিকে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছে আফগানিস্তান। এরপর দক্ষিন আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়েছে ’পুচকে’ নেদারল্যান্ড। রহমানুল্লাহ গুরবাজ (৮০) আর উইকেটরক্ষক ইকরাম আলিখিলের (৫৮) দুর্দান্ত ব্যাটে ইংল্যান্ডের সামনে ২৮৫ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় আফগানিস্তান। মুজিব উর রহমান আর রশিদ খানের তিনটি করে উইকেট শিকারে ইংলিশ ইনিংস থামে ২১৫ রানে। রচিত হয় খোরাসানের সিংহদের থাবায় দৈত্যবধের রূপকথা।
তবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত লড়াইয়ে ১৪ অক্টোবর মুখোমুখি হয় ভারত আর পাকিস্তান। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের এক লাখ ৩২ হাজার আসন ছিল একেবারে পূর্ণ। তবে ভিসা জটিলতায় পাকিস্তানের দর্শকদের মাঠে খেলা দেখার সুযোগ পায়নি। স্টেডিয়াম ছিল স্বাগতিক দর্শকে একরকম ঠাসা। ঘরের মাঠে অনুকূল পরিবেশে ভারত ৭ উইকেটে হারায় চিরপ্রতিদ্বন্ধীকে। অথচ ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। বাবর আজম (৫০) আর রিজওয়ানের (৪৯) কল্যাণে এক পর্যায়ে ২ উইকেটে ১৫৫ রানে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। কিন্তু ২৯.৪ ওভারে অধিনায়কের আউটে বদলে যায় দৃশ্যপট। অবিশ্বাস্যভাবে পাকিস্তান অলআউট হয় ১৯১ রানে। যেখান থেকে অধিনায়ক রোহিত শর্মা আর শ্রেয়াস আইয়ারের হাফ সেঞ্চুরিতে ভারত পায় সহজ জয়। এটি ছিল ভারতের কাছে একদিনের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অষ্টম পরাজয়। বিপরীতে জয় নেই একটিও, ভাবা যায়! ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩৪৪ রানের টার্গেট তাড়ায় জয়ের রেকর্ড গড়ে পাকিস্তান। ম্যাচে হয়েছে চারটি সেঞ্চুরি। যা বিশ্বকাপের এক ম্যাচে সর্বোচ্চ।
এখনো দল হিসেবে খেলতে পারেনি এশিয়ার আরেক পরাশক্তি দেশ শ্রীলংকা। দাসুন শানাকার বদলি হিসেবে নেওয়া হয়েছে চামিরা করুনারত্নেকে। চোট কাটিয়ে প্রায় ছয় মাস পর মাঠে ফিরেছিলেন কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে পান নতুন আঘাত। এই ম্যাচে রান নিতে গিয়ে নাজমুলের থ্রো সরাসরি লাগে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কের বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে। স্ক্যানে ওই আঙুলে চিড় ধরা পড়েছে, ফলে আবার ছিটকে গেছেন তিনি। কবে ফিরবেন কিউই কাপ্তান ঠিক নেই। তাই বদলি হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে টম ব্লান্ডেলকে। বিশ্বকাপে লিগ পর্বে এক-তৃতীয়াংশ খেলা শেষ। দুই হারে বাংলাদেশের সামনে পথ হয়ে উঠেছে দুর্গম। এখন বাকি ম্যাচগুলোতে কেমন খেলবে বাংলাদেশ সেটাই দেখার বিষয়।
পথরেখা /আসো