পাকিস্তান : ২৮২/৭, ৫০ ওভার
আফগানিস্তান : ২৮৩/২, ৪৯ ওভার
ফল : আফগানিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী
আরিফ সোহেল
বিষম লজ্জার হার পাকিস্তানের; এর চেয়ে বেশি সত্য আফগানদের গৌরবময় জয়। আগের সবম্যাচ হারা আফগানরা এবার পাকিন্তানকে হারিয়ে দিল বিশ্বকাপে। তাতে সেমিফাইনালের স্বপ্ন বেজায় কঠিন হয়ে গেল বাবরদের। অন্যদিকে আফগানদের সামনে স্বপ্নের হাতছানি। পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেওয়া ১৮৩ রানের চ্যালেঞ্জ এক ওভার হাতে রেখে স্পর্শ করে ৮ উইকেটের ব্যবধানে জয় পেয়েছে আফগানিস্তান।
অথচ ২৩ অক্টোবর ম্যাচটি নিয়ে আগাম ধারণা ছিল ৮০/২০। বিভিন্ন মিডিয়ায় পাকিস্তানের পক্ষে হিসেবটি আফগানিস্তানের ২০ ওভার ব্যাটিং পর্যন্তও ঝুলছিল। কিন্তু তারপর সবটাই আফগানী গল্প। ওপেনারদের গল্প। অথচ যে দেশের ক্রিকেটের চাল-চূলা নেই; সেই সাহসী আফগানরা জানিয়ে দিলেন তারা আসছেন।
বাংলাদেশের কাছে উড়ে যাওয়া আফগানরা প্রথম শো-ডাউন করেছিল চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। আর ২৩ অক্টোবর দুর্দান্ত জয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ইতিহাস গড়েছেন রশিদ খানরা। ইংল্যান্ড পাকিস্তান; বড় দুই দলের বিপক্ষে আফগানদের জয়; তাদের স্বপ্ন দেখতে পারে সেমিফাইনালের।
২৮২ রানের জবাবে পাকিস্তানি বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েছেন আফগানিস্তান ওপেনিং জুটি। রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান দুইজনই পেয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে আউট হওয়ার আগে ৫৩ বলে ৬৫ রান করা গুরবাজ যখন ফিরলেন; ততোক্ষণে ১৩০ রানে পৌঁছে গেছে আফগানিস্তান। আর ইব্রাহিম জাদরান ১১৩ বল খেলে ৮৭ রানে ফিরেছেন দলীয় ১৯০ রানের মাথায়। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তখন শতভাগই। কিন্তু অবিশ্বাস্য পাকিস্তান কিছু একটা করতে পারেন; এমন ভরসায় ছিলেন ভক্তরা। কিন্তু আফগানদের আর ভিত নাড়াতে পারেননি পেসার রাজ্যে গতিবাজরা। বরং ৪৯ ওভারে আফগানিস্তানের যখন ৮ উইকেটের জয় নিশ্চিত হলো রহমত শাহ তখন ৭৭ রানে অপরাজিত। অপরপ্রান্তে ৪৮ রানে হাশমতউল্লাহ শাহিদি।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে হাক-ডাক দেখাতে পারেনি। তবে আজম রানে ফিরেছেন; এই যা। ম্যাচে ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক [৫৮] এবং বাবর আজমের [৭৪] ফিফটির সঙ্গে শেষ দিকে ইফতিখারের [৪০] ক্যামিও ইনিংসে ভর করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮২ রান তোলে পাকিস্তান। বল হাতে বিশ্বকাপে প্রথম নেমেই জাদু দেখিয়েছেন ১৮ বছর বয়সী আফগান স্পিনার নুর আহমেদ। ৪৯ রানে নিয়েছেন তিন উইকেট, এর মাঝে ছিল বাবর-রিজওয়ানের মহামূল্যবান উইকেটও। আহমদ আর দুটি উইকেট নেন নাভিন উল হক।
এই ম্যাচ হেরে পাকিস্তানের সেমিফাইনালে ওঠার রাস্তা কঠিন হল। পর পর তিনটি ম্যাচে হেরে গেল তারা। ভারতের বিরুদ্ধে যে হারের ধাক্কা শুরু হয়েছিল তা চলছেই। সোমবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও হারতে হয়েছে বাবর আজমদের। যদিও চারটি ম্যাচ খেলা বাকি রয়েছে তাদের।
সেমিফাইনালে উঠতে হলে পাকিস্তানকে নিজেদের বাকি চারটি ম্যাচ জিততেই হবে। তাহলে ১২ পয়েন্টে পৌঁছে যাবেন বাবরেরা। তবে শুধু সেই ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনালে ওঠা নিশ্চিত হবে না পাকিস্তানের। এই মুহূর্তে পাকিস্তান লিগ তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে। এমন অবস্থায় যদি শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাবরেরা হেরে যান, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকেই ছিটকে যেতে হবে তাঁদের। পাকিস্তানের ম্যাচ বাকি দক্ষিণ আফ্রিকা (২৭ অক্টোবর), বাংলাদেশ (৩১ অক্টোবর), নিউজিল্যান্ড (৪ নভেম্বর) এবং ইংল্যান্ডের (১১ নভেম্বর) বিরুদ্ধে। কোনও ম্যাচকেই হাল্কা ভাবে নেওয়ার অবস্থায় নেই পাকিস্তান।
মনে করা হচ্ছে সেমিফাইনালে ওঠার জন্য অন্তত ৬টি ম্যাচ জিততেই হবে। এমন অবস্থায় প্রথম পাঁচ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দু’টি জিতে থাকা পাকিস্তানকে যদি শেষ চারটি ম্যাচই জিততে হয় তাহলে কাজটা অবশ্যই কঠিন। ভারত এবং নিউজিল্যান্ড এই মুহূর্তে লিগে এক এবং দু’নম্বরে রয়েছে। ভারত নিজেদের সব ম্যাচ জিতেছে। কিউইরা শুধু ভারতের বিরুদ্ধে হেরেছে। এমন অবস্থায় সব থেকে বেশি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা তিন এবং চার নম্বর জায়গাটির জন্য। তাই লড়াই শুধু পয়েন্টে নয় রান রেটেও হতে পারে। তাই আগামী ম্যাচগুলো শুধু জিতলেই হবে না, নেট রানরেট বৃদ্ধি করার দিকেও নজর দিতে হবে বাবরদের।
পথরেখা/আসো