পথরেখা অনলাইন : সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে গেলেও টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে এখন বিদায়ের প্রহর গুনছে বাংলাদেশ দল। সর্বশেষ ম্যাচে ’পুচকে’ নেদারল্যান্ডের কাছে ৮৭ রানে হেরে এখন সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। নানা কারণে দলের এই ব্যর্থতার কারণে দলের ভেতরে থাকা বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যা দলকে পেছনে হাঁটা শুরু করেছে। এখন বিশ্বকাপ নয়, সাকিবের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে। দুইদিন আগেও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও জিইয়ে ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের ধরনই বলে দিচ্ছে— তাদের সেই স্বপ্নও এখন কল্পনাতীত। ডাচদের কাছে হারের পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কণ্ঠেও এখন ভিন্ন সুর। তার মতে, বাংলাদেশের চোখ এখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ পাওয়ার দিকে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, ‘সেমিফাইনালের সম্ভাবনা নয়, অন্তত আরেকটু ভালো করতে চাই। আমাদেরকে র্যাঙ্কিংয়ে আটের ভেতর থাকতে হবে, যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে হয়’।
যদিও এখন বাংলাদেশের হাতে তিনটা ম্যাচ আছে। এখান থেকে এরকম পরিস্থিতিতে ঘুড়ে দাড়ানো বেশ কঠিন বলে মানছেন টাইগার অধিনায়ক। তবে সেটিও সম্ভব কিনা— এমন প্রশ্নে সাকিবের উত্তর, ‘আসলে খেলা শেষ হওয়ার আগে কিছু বলা সম্ভব না। তবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আবারও বলছি এটা কঠিন। কিন্তু এর চেষ্টা করা ছাড়া তো আমাদের কিছু করার নাই।’ ফের একই কথার পুনরাবৃত্তি করে এই হার ভুলে যেতে চান সাকিব, ‘সত্যি বলতে এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন। কিন্তু চেষ্টা করতে হবে। আজকের দিনটা আমরা যদি ভুলে যেতে পারি এবং সামনের ম্যাচগুলোর জন্য মনোযোগ দিতে পারি ভালোভাবে, যদিও খুবই কঠিন এই জিনিসটা করা। যে পরিস্থিতির ভেতরে এখন আমরা আছি সেখান থেকে কামব্যাক করা কঠিন।’
সবদিক বিবেচনায় কি এটিই বাংলাদেশের জন্য স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ? এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটা আপনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। আমি দ্বিমত করবো না এটাতে।’ আগামী ২০২৫ সালে পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ওই আসরে খেলতে হলে বাংলাদেশকে র্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকতে হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অবস্থান র্যাঙ্কিংয়ের ৮ নম্বরে। তবে এভাবে হার অব্যাহত থাকলে সেই অবস্থান ধরে রাখাটা হবে খুবই কঠিন! ডাচদের কাছেও অসহায় আত্মসমর্পণ করে এই বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে শনিবার জয়ে ফেরার দুর্দান্ত এক সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় তা আর কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪২ রানে অলআউট হয়েছে তারা। নেদারল্যান্ডসের কাছে ৮৭ রানের হারে বিশ্বকাপ থেকেও ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের এটি টানা পঞ্চম পরাজয়।
বড় দলগুলোর বিপক্ষে হারলেও শক্তি-সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকা নেদারল্যান্ডসের কাছেও পাত্তা পেল না বাংলাদেশ। ডাচদের কাছেও সাকিব আল হাসানের দল অসহায় আত্মসমর্পণ করল। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। শুরুতে দেখে শুনে দুই ওপেনার ব্যাটিং করলেও লিটন দাসের ভুলে বাংলাদেশ বিপদে পড়ে। অযথা আরিয়ান দত্তকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক স্কট এডওয়ার্ডসের তালুবন্দী হন তিনি। ব্যক্তিগত ৩ রানে ড্রেসিংরুমে ফেরেন তিনি। উইকেটরক্ষক ব্যাটারের আউটের সময় বাংলাদেশের রান ছিল ১৯। দলীয় খাতায় কোনো রান যোগ হওয়ার আগে ড্রেসিংরুমে ফেরেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও। লোগান ফন বিকের বলে ১৫ রানে ফেরেন এডওয়ার্ডসকে ক্যাচ দিয়ে। সেখান থেকে দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হাসান শান্ত।
তবে তৃতীয় উইকেটে ২৬ রানের বেশি করতে পারেননি তাঁরা। ৯ রানে শান্ত আউট হওয়ায়। শান্তর দেখানো পথেই ফিরে যান সাকিব আল হাসানও। পল ফন মিকেরেনের শিকার হয়েছেন দুজনই। সতীর্থরা আসা-যাওয়ার মিছিলে থাকলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে রান বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু তাঁর ৩৫ রানের ইনিংসটিও শেষ হয় দ্রুত। বাস ডি লিডের বলকে কাভারে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। দলের ভরসা হয় উঠার আগে মিরাজকে অনুসরণ করেন মুশফিকুর রহিমও। ১ রানে মিকেরেনের বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ৭০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের পরাজয় তখন সময়ের ব্যাপার ছিল। ম্যাচের এমন পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে জিততে হলে অনন্য কিছু করতে হতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শেখ মেহেদী হাসানকে। দলের শেষ স্বীকৃত জুটি ছিলেন তাঁরাই। ৭ম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি গড়লেও দলের পরাজয় এড়াতে পারেননি তাঁরা। ব্যক্তিগত ১৭ রানে মেহেদী রান আউট হলে ৩৮ রানের জুটি ভেঙে যায় তাঁদের। একটু পর ফিরে যান সর্বশেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহও। অভিজ্ঞ ব্যাটার ২০ রানে আউট হওয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের বিন্দুমাত্র আশাও শেষ হয়। তবে নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়দের জয়ের উল্লাসে মাততে কিছুটা অপেক্ষা করান তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। দুজনে মিলে নবম উইকেটে ২৯ রানের জুটি গড়েন।
পথরেখা/আসো