বাংলাদেশ : ২০৪/১০, ৪৫.১ ওভার
পাকিস্তান ২০৫/৭, ৩২.২ ওভার
ফল : পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
পথরেখা অনলাইন : বিশ্বকাপ চূড়ান্তপর্বের লড়াই থেকে প্রথম দল হিসাবে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হারার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বকাপে দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছে সাকিবদের। ম্যাচে আবারো মাহমুদ উল্লাহ হাফসেঞ্চুরির ঝলকের বাইরে সাকিব-লিটনের কিছুক্ষণ ব্যাটিংয়ের পর মিরাজ ভেলিকি ছিল, এই যা।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাফ-সেঞ্চুরি সত্বেও নিজেদের সপ্তম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৪৫ দশমিক ১ ওভারে ২০৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। পাঁচ নম্বরে নেমে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। জবাবে আব্দুল্লাহ শফিকের ৬৮ ও ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ফখর জামানের ৮১ রানের কল্যাণে ১০৫ বল বাকী রেখে জয়ের লক্ষে পৌঁছে পাকিস্তান।
কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আগের ম্যাচের একাদশ থেকে একটি পরিবর্তন মাহেদি হাসানের জায়গায় তাওহিদ হৃদয়কে অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই পেসার শাহিন আফ্রিদির বলে লেগ বিফোর আউট হন তানজিদ হাসান। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু পরের ওভারে আফ্রিদির বলে মিড উইকেটে উসামা মীরকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪ রান করা শান্ত। ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিমও সুবিধা করতে পারেননি। পেসার হারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৫ রান করা মুশফিক। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। পতন ঠেকাতে ইনফর্ম মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদকে পাঁচ নম্বরে পাঠায় বাংলাদেশ দল। উইকেটে গিয়ে আরেক ওপেনার লিটন দাসের সাথে জুটি বাঁধেন মাহমুদুল্লাহ। স্বাচ্ছেন্দ্যে খেলতে থাকেন লিটন ও মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ২১তম ওভারে খেই হারান লিটন। স্পিনার ইফতিখারের বলে মিড অনে আাগ সালমানকে ক্যাচ দিলে ৬টি চারে ৬৪ বলে ৪৫ রান করা লিটনের বিদায় ঘটে। মাহমুদুল্লাহ-লিটন জুটি ৮৯ বলে ৭৯ রান করেন।
লিটনের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন সাকিব। মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে আবারও বড় জুটির চেষ্টা করেন সাকিব। ২৬তম ওভারের শেষ বলে ওয়ানডেতে ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ৩১তম ওভারে আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহ। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭০ বলে ৫৬ রান করেন অভিজ্ঞ এ ব্যাটার। ১৪০ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে হৃদয়ের আউটের পর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাকিব। ৩৭তম ওভারে ইফতিখারের তিন বলে টানা তিনটি চার মেরে এবারের আসরে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাকিব। কিন্তু দলীয় ১৮৫ রানে রউফের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে সালমানকে ক্যাচ দেন সাকিব। ৪টি চারে ৬৪ বল খেলে এবারের আসরে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন তিনি। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে ৪০তম ওভারে সাকিবের আউটের পর, মোহাম্মদ ওয়াসিমের তোপে বেশি দূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ৪৫ দশমিক ১ ওভারে ২০৪ রানে অলআউট কর দেন ওয়াসিম। লোয়ার অর্ডারে ১টি করে চার-ছক্কায় ৩০ বলে ২৫ রান করেন মিরাজ। পাকিস্তানের আফ্রিদি ২৩ রানে ও ওয়াসিম ৩১ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
২০৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তাড়াহুড়া না করে ধীরে-সুস্থে খেলে পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ফখর জামান ১০ ওভারে ৫২ রান তোলেন। তবে দলকে ১২৭ বলে ১২৮ রানের সূচনা এনে দেন শফিক ও জামান। বিশ^কাপে এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মত উদ্বোধনী জুটিতে শতরান পেল পাকিস্তান। এরমধ্যে পাঁচবারই রান তাড়ায়। ২২তম ওভারের প্রথম বলে শফিককে লেগ বিফোর আউট করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মিরাজ। ওয়ানডেতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৬৯ বল খেলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৮ রান করেন শফিক।
তিন নম্বরে সুবিধা করতে পারেননি পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে মাহমুদুল্লাহকে ক্যাচ দেন ১৬ বলে ৯ রান করা বাবর। শফিক ও বাবরের পর জামানকে শিকার করে বাংলাদেশের সপ্তম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১শ উইকেট পূর্ণ করেন মিরাজ। নিজেদের প্রথম ম্যাচের পর পাকিস্তান একাদশে জায়গা হারানো জামান ৭৪ বল খেলে ৩টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৮১ রান করেন। জামান যখন ফিরেন জয় থেকে ৩৬ রান দূরে ছিলো পাকিস্তান। চতুর্থ উইকেটে ৩০ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৬ রান তুলে চার ম্যাচ পর পাকিস্তানকে জয়ের স্বাদ দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার। ৪টি চারে রিজওয়ান ২৬ ও ২টি বাউন্ডারিতে ইফতিখার ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের মিরাজ ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন।
৭ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের পয়েন্ট হল ২। আর কোনও অঙ্কেই তাদের পক্ষে প্রথম চারে থাকা সম্ভব নয়। ফলে শেষ দু’টি ম্যাচ এখন বাংলাদেশের কাছে স্রেফ নিয়মরক্ষার ম্যাচ। আগামী ৬ নভেম্বর দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এবং ১১ নভেম্বর পুণেতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। তাদের কাছে এই দু’টি ম্যাচ গুরুত্বহীন। তবে শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কার কাছে এই দু’টি ম্যাচেরই গুরুত্ব থাকতে পারে। এখন পয়েন্ট তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ছয় ম্যাচ খেলে তাদের পয়েন্ট ৮। ফলে ২ পয়েন্টে থাকা বাংলাদেশ তাদের শেষ দু’টি ম্যাচ জিতলেও ৬ পয়েন্টের বেশি পাবে না। সেই কারণেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সাতটি ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র একটি। আফগানিস্তানকে হারিয়ে তারা বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল। কিন্তু তারপর সব হারার গল্পকথা। হারতে হয়েছে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এমনকী নেদারল্যান্ডসের কাছেও। মঙ্গলবার ইডেনে পাকিস্তানের কাছেও হেরে গেল তারা।
পথরেখা/আসো