• সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
    ২৭ কার্তিক ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৬:৪৬

ভারত এখন বিশ্বকাপে তালগোল পাকানো দল

পথরেখা অনলাইন : অনেক আশা নিয়েও বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারেনি ভারত। এক রাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে সমর্থকরা। এবারও চিত্রনাট্য বদল হলোনা। অপরাজিত থেকে ফাইনালে ওঠেও জেতা হয়নি শিরোপা। বিশ্ব ক্রিকেটে পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ নিদর্শন দেখিয়ে ষষ্ট শিরোপা জয় করে অস্ট্রেলিয়া। যে শিরোপা জয়ের মাধ্যমে হেক্সা মিশন পূর্ন করেছে প্যাট কামিন্সের দল। আরেকবার শিরোপা জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে এখন হতাশা ছড়িয়েছে পুরো ভারতে। বিশেষ করে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের এক লাখ চল্লিশ হাজারেরও বেশি দর্শককে একরকম স্তব্ধ করে দিয়ে অজিদের এই জয় যেন পেরেক ঠুকে দিয়েছে কষ্টের কফিনে। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আবারও স্বপ্নভঙ্গ নাকি গল্পটা বদলাবে ভারতের সেই প্রশ্ন ছিল। ফাইনালে ভারতকে কোনরকম সুযোগ না দিয়ে ৬ উইকেটের বড় জয় দিয়ে অনেকটা অসাধ্য সাধন করেছে। সে কারণেই বিশ্ব ক্রিকেটে অতি পরাক্রমশালী দলের তকমা পাওয়া যেন পোক্ত করেছে। ফেবারিট হিসেবে থাকা স্বাগতিকরা এত ভাল ক্রিকেট খেলার পরও ফাইনালে ওঠে যেন খৈ হারিয়ে ফেলে। সাথে সাথে সেমিফাইনাল-ফাইনালে পরাজয়ের পর চোকার্স তকমা জুড়ে গেছে রোহিত শর্মার দলের সাথে। ২৪০ রানের টার্গেটকে একেবারে মামুলি করে দেয়।
 
অথচ এই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হেরেছিল। ৬ উইকেটের পরাজয় ফাইনালে এসে কড়ায় গন্ডায় তুলে নিলেন। একটি দল কতটা পেশাদার হতে পারে সেটাই উজ্জল দৃষ্টান্ত রেখেছে তারা। বিশেষ করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৯২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৯১ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সবাই যখন পরাজয়ের প্রহর গুনছে অস্ট্রেলিয়ার ঠিক তখনই দেবদূতের মতো হাজির হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তখনই অনেকে ধারনা করেছিলেন বিশ্বকাপটা অস্ট্রেলিয়ার ঘরেই যাচ্ছে। বিশ্বকাপ শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার কোদ দল, এমন প্রশ্নে সবার আগে আপনার মাথায় আসত ভারতের নাম। ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগানো ছাড়াও ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দারুণ ছন্দে ছিল স্বাগতিকরা। গ্রুপপর্বে নয় ম্যাচের সবকটিতেই জিতে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল তারা। আর দুই ম্যাচ জিততে পারলেই দীর্ঘদিন পর শিরোপার স্বাদ গেত টিম ইন্ডিয়া। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সর্বশেষ টানা চার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে ক্রিকেট ভালবাসা দেশটি। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোর গ্রুপপর্বে দাপট দেখানোর পরও ভারত প্রতিবারই ছন্দ হারাচ্ছে নকআউট পবে এসে। এরপর প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগেও ফেবারিট ছিল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটি।
 
৭০ রানে জিতে অনেকটা পথ এগিয়ে থেকেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলে তারা। যদিও ২০১৯ বিশ্বকাপে এই কিউইদের কাছেই শেষ চারে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। এবার গল্পটা সেই ম্যাচে বদলালেও শিরোপা জেতার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারেনি। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ রবি শাস্ত্রী বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই বলে আসছিলেন, এবারই বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার বড় সুযোগ ভারতের। নাহলে একটি-দুটি নয়, আরও অন্তত তিন সংস্করণে কাপ ছোঁয়ার কথা ভাবতেও পারবে না। শাস্ত্রী আরও বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ নিয়ে ভারতে এখন উচ্ছ্বাসের পরিবেশ। হবে নাই বা কেন! ১২ বছর হয়ে গেল শেষ বিশ্বকাপ জয়ের। এবার সেই জয়ের পুনরাবৃত্তির সুযোগ ছিল এবার। আর দল যেভাবে খেলছে, তাতে আমি বলব এটাই সেরা সুযোগ। এবার সুযোগ হাতছাড়া করলে অন্তত তিনটা বিশ্বকাপ অপেক্ষা করতে হবে ভারতকে’। অবশেষে হলোও তাই। আরেকটা আসরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে ছিল। সেটাকে কাজে লাগিয়ে ফাইনালে খেললেও হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। তবে সেমিফাইনাল আর ফাইনালে ভারতের হতাশার গল্পটা বেশ পুরনো। সময়ের হিসেবে এক দশক অর্থাৎ ১০ বছরের।
 
২০১৪ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশে আসে, অনেক বিশেষজ্ঞ ধরেই নিয়েছিলেন তার হাতেই উঠবে শিরোপা। গ্রুপপর্বে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেই ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছিল। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও দাপটের সঙ্গে পরাজিত করে। কিন্তু তারপরই ঘটে বিপর্যয়। ফাইনালে লাসিথ মালিঙ্গার শ্রীলঙ্কার হাতে পর্যুদস্তু হতে হয় ভারতকে। শুরুতে মাত্র ১৩০ রানে আটকে দিয়ে সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের শ্রীলঙ্কা অনায়াস জয় পায়। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপে ভারত লড়াইয়ে নেমেছিল আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। হার না মানা দলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে সেমিফাইনালে। সেই আসরেও গ্রুপপর্বে অপ্রতিরোধ্য ছিল ভারত। সবকটি ম্যাচে জয়ের পর সেমিফাইনালে স্টিভ স্মিথের শতরানে ভর করে ৩২৮ রানের বড় টার্গেট পর রোহিত-শিখর ধাওয়ান জুটি ভালো শুরু করলেও ব্যর্থ হন বিরাট কোহলি। আজিঙ্কা রাহানে-ধোনি চেষ্টা করলেও ম্যাচ শেষ করতে পারেননি। কি আশ্চর্য মিল ছিল, সেবারও রান আউট হয়ে ফিরতে হয় ধোনিকে। অজিদের সামনে থমকে যায় পরপর দু’বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। পরের আসরেও ভারতের শিরোপার অপেক্ষায় ছিল সমর্থকরা।
 
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত এশিয়া কাপ জিতে দারুণ কিছুর বার্তাই দিচ্ছিল। শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১২৭ রান টপকাতে পারেনি। যদিও তারপর দাপটের সঙ্গে ফিরওলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ভারত হেরে যায় সেমিফাইনাল ম্যাচে। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হার এখনও দগদগে হয়ে আছে সমর্থকদের মনে। চিরপ্রতিদ্বন্ধী পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে মাত্র মাত্র ১৫৮ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের ব্যাটিং। টানা সেই হারের পর ভারতকে ঠেলে দিচ্ছে ’চোকার্স’ তকমার দিকে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম থেকে দাপটের সঙ্গে খেলে গ্রুপপর্বের নয় ম্যাচে মাত্র এক হার নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ভারত কিউইদের হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করার প্রত্যাশা ছিল বেশিরভাগ ক্রিকেটবোদ্ধাদের। কিন্তু এজবাস্টনের সেই ম্যাচে বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় উল্টো ভারতের। এরপর ২০২১ সালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়। আর সর্বশেষ ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ চারে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে আরেকবার হতাশ হতে হয়।
 
২০১৪ থেকে ভারতের স্বপ্নভঙ্গের চিত্র
# ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হার
# ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার
# ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হার
# ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে পরাজয়
# ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার
# ২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজয়
# ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হার
# ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়।
পথরেখা/আসো
 
 
 

  মন্তব্য করুন
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।