পথরেখা অনলাইন : বিশ্বকাপ খেলার আগে যে আশা নিয়ে গিয়েছিল, তিন ম্যাচ শেষে তার ধারেকাছেও যেতে পারছেনা দল। ১৯ অক্টোবর ভারতের বিপক্ষে কঠিন ম্যাচে মাঠে নামবে দল। এই ম্যাচের আগে দুশ্চিন্তার নাম ব্যাটিং ব্যর্থতা। টপ অর্ডার ব্যাটারদের অধারাবাহিকতার কারণেই এমনটি হচ্ছে। ব্যাটিং অর্ডারে আস্থার সংকট তাই খুববেশি প্রকট হয়েছে! অথচ ক্রিকেট মহাযজ্ঞ মানেই সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই হয়ে থাকে।
বৈশ্বিক আসর মানেই সেরা অস্ত্রের প্রদর্শনী দেখানো হয়। বিশ্বকাপ মানেই অভিজ্ঞতা-তারুণ্যের মিশেলে গড়া সেরা দল নিয়ে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করার সবরকম চেষ্টা চালানোর এক মিশন। সবাই সেই কাজটাই নিয়ম করে করতে পারছেন। আর বাংলাদেশ হাঁটছে অনেকটা উল্টো পথে। দেশের ক্রিকেট নিয়ে বিশ্বসো আসরেও চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিশেষ করে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে হতাশা থাকছেই। এ যেন থামার কোন লক্ষন নেই। যে পরীক্ষা সবাই চালিয়ে থাকে বিশ্বকাপে ওয়ার্মআপ ম্যাচে। আর বহুজাতিক টুর্নামেন্ট শুরুর আগে প্রস্তুতিমূলক সিরিজেও হয়ে থাকে। কিন্তু লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা সেই পরীক্ষা চালাচ্ছে বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়ে আসে ভাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে।
এবারের বিশ্বকাপে থাকার কথা প্রায় অপরিবর্তিত ব্যাটিং লাইনআপ। যে যার পছন্দের জায়গায় ব্যাট করবেন, এটাই প্রত্যাশা ছিল। স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করতে পারলেই তো ব্যাটাররা উপহার দিতে পারবেন সেরা পারফরম্যান্স। নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন প্রত্যাশা মতো। জ্বলে উঠতে পারবেন দলের প্রয়োজনে, আর যেকোনো পরিস্থিতিতে। বিশ্বকাপের আগেই ব্যাটারদের নেওয়া উচিত ছিল বিশেষ এক প্রস্তুতি। কারণ আইসিসির ফ্ল্যাগশিপ টুর্নামেন্টে একজন ব্যাটারকে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন বোলারকে মোকাবিলা করার পরীক্ষায় পড়তে হবে। এটাই তো স্বাভাবিক নিয়মে হয়ে থাকে। নেট সেশন থেকে শুরু করে ওয়ার্মআপ ম্যাচ বা প্রস্তুতিমূলক সিরিজ সর্বত্র বিচিত্র সব বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার অভ্যাসটাও করতে হয়। ম্যাচ সিনারিও মাঠের অনুশীলনে বিশেষ কোনো বোলারকে নিয়ে বাড়তি কাজও করার প্রয়োজন পড়ে। সেখানেই কাটিয়ে ফেলতে হয় ব্যাটারদের পেছনের সময়ের সব দুর্বলতা। বাংলাদেশের ব্যাটাররা তার কতটুকু করতে পেরেছে? এই প্রশ্ন যেমন উঠেছে ঠিক তেমনি ক্রিকেপ্রেমিরাও করছেন। উত্তরটা মিলছে ব্যাটারদের বাজে ব্যাটিংয়েই।
তবুও বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখা থেমে নেই। সেই স্বপ্নের কথা শুনিয়েছিলেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে নিজেই। কিন্তু কাজের কাজ কী খুব বেশি হচ্ছে? সেই প্রশ্ন ক্রিকেট জানা মানুষেরা করতেই পারেন। দেশের অনেকে ব্যাটারেরই নেই কোনো বিশেষ ব্যাটিং পরিকল্পনা। যেখানে যাদের আলাদা রণকৌশলই নেই, সেখানে তাদের ব্যাটিং পজিশন পাল্টে দিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। যার ফল দলের টানা বাজে ব্যাটিং অব্যহত রয়েছে। এ কারণেই ব্যাটিং পজিশন পরিবর্তন নিয়েই প্রশ্ন উঠছেই। সাবেক ক্রিকেটার, ক্রিকেট বিশ্লেষক থেকে শুরু করে ক্রিকেট জানা মানুষরা এ নিয়ে এখন বেশ সরব। ব্যাপারটা ঠিক মানতেই পারছেন না খেলাটিকে ভালবাসা করা মানুষগুলো। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিম ম্যানেজমেন্টকে কাঠগড়ায় তুলছেন নিয়ম করে। প্রশ্ন উঠেছে কোচ হাথুরু আর কাপ্তান সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং পজিশন পাল্টানোর পরিকল্পনা নিয়ে। তরুণ তুর্কি তাওহিদ হৃদয় চার নম্বরে ব্যাটিং করে অভ্যস্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে তাকে খেলানো হয়েছে তার পুরোনো জায়গায়। মানে চার নাম্বারে। পরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ার্মআপ ম্যাচে তরুণ এ ব্যাটারকে খেলানো হয়েছে সাত নম্বরে!
ভারত বিশ্বকাপের মূল আসরে আফগানদের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে অবশ্য ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি তাওহিদ। তবে তার পজিশন ছিল সেই সাত নম্বরেই। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচেও ব্যাট করলেন নিজের অপ্রিয় পজিশনে। আফগানদের বিপক্ষে মেহেদি হাসান মিরাজকে খেলানো হলো ওয়ানডাউনে। ইংল্যান্ড ম্যাচে তার ব্যাটিং পজিশন আবার চলে যায় পাঁচে। কিউইদের বিপক্ষে তারকা এ অলরাউন্ডারকে নিয়ে আসা হয় ফের তিনে। যেন ব্যাটিং পজিশন বদলের ’অপরিপক্ক’ খেলায় মেতে উঠেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিছুতেই থামছে না তাদের ইচ্ছামতো করা রদবদল। সেটা করে যদি সাফল্য আসত, তাহলে কোন কথা উঠত না। কিন্তু যেখানে ব্যর্থতার গল্প লিখে যাচ্ছেন ব্যাটাররা, সেখানে টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাটিং পরিবর্তনকে নিয়ম বানিয়ে পেলেছে। যার ফল তো অশ্বডিম্ব ছাড়া আর কিছুই যে হবেনা সেটা মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে পরিস্কার হচ্ছে। তাই তো সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনটা করাটা ঠিক মানতে পারছেন না। এছাড়া ভালো ব্যাটিংয়ের জন্য দরকার স্থিতিশীল ব্যাটিং লাইনআপ। বিশ্বকাপে যেটা আরও বেশি জরুরি বলেই মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমও ব্যাটিং ব্যর্থতার বিষয়টি নিয়ে নিজের কথা বলেছেন।
পথরেখা/আসো