পথরেখা অনলাইন : চলমান বিশ্বকাপের চমক দেখানো দলগুলোর তালিকায় সবার উপরের নামটি আফগানিস্তানের। তিন ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে খেলার দাবীদার হাসমতউল্লাহ শহীদির দল। শুক্রবার নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে করতে এগিয়ে যাওয়া দলটি। জনাথন ট্রটের শীষ্যরা একটার পর একটা চমক দেখিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এবং সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও শ্রীলংকাকে পরাজিত করেছে। ক্রিকেটবোদ্ধাদের জিজ্ঞাসা, বিশ্বকাপে আফগান চমকের শেষ কোথায়।
স্বপ্নের মতো একটা বিশ্বকাপ কাটাচ্ছে আফগানরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে আসর শুরু করলেও এখন পর্যন্ত হারিয়ে দিয়েছে সাবেক ও বর্তমান তিন চ্যাম্পিয়ন দলকে। নিজেদের খেলা ছয় ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জিতে জোরালোভাবেই রয়েছে সেমিফাইনালের দৌড়ে। গত ১৫ অক্টোবর দিল্লিতে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে হইচই ফেলে দেয় আফগানরা। র্যাংকিং আর অবস্থান বিচারে সেটা বিশ্বকাপের ইতিহাসে বড় অঘটনই। এরপর ২৩ অক্টোবর চেন্নাইয়ে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হারানোর কৃতিত্ব দেখায় দলটি। আফগান রূপকথা সেখানেই শেষ নয়। সর্বশেষ তারা দাপুটে জয় পায় শ্রীলংকার বিপক্ষে। জয়টাও আসে বেশ দাপটের সাথে।
সাবেক এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ৭ উইকেটে হারানোর কৃতিত্ব দেখায় আফগানরা। ৬ ম্যাচে তিন জয়ে ৬ পয়েন্টে টেবিলের ছয়ে আছে আফগানিস্তান। সমান পয়েন্ট নিয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে পাকিস্তান। নেট রান রেটের কারণে বাবরদের চেয়ে পিছিয়ে আছে আফগানরা। -০.৭১৮ রান রেটটাই সেমির পথে তাদের সবচেয়ে বড় বাধা। তবে আশা আছে এখনও। আফগানদের ম্যাচ বাকি আছে তিনটি। শেষ তিন ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন ম্যাচের তিনটি জিততে পারলেই শেষ চারের জায়গা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের। সে ক্ষেত্রে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ পর্ব শেষ করবে রশিদ-মুজিবরা। অন্য দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে ৮ পয়েন্ট পাওয়া নিউজিল্যান্ড যদি তাদের বাকি দুই ম্যাচের মধ্যে একটিতে হারে এবং অস্ট্রেলিয়া যদি বাংলাদেশ বা ইংল্যান্ডের মধ্যে যে কোনো এক ম্যাচে হারে তাহলে ১০ পয়েন্ট নিয়ে লিগের খেলা শেষ করবে তারা। ১২ পয়েন্ট পাওয়া আফগানিস্তান তখন সহজেই চলে যাবে সেমিতে।
তবে বাকি থাকা তিন ম্যাচের দুটিতে জিতলেও সুযোগ থাকবে আফগানদের। সে ক্ষেত্রে ১০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ পর্বের খেলা শেষ করবে তারা। বাকি দলগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যদি আরও ১টি করে ম্যাচ জিতে তাদেরও পয়েন্ট হবে ১০। সে ক্ষেত্রে বড় প্রভাবক হবে নেট রানরেট। তবে আফগানদের সুযোগ আছে আরও। যদি নিউজিল্যান্ড বাকি দুই ম্যাচ এবং অস্ট্রেলিয়া বাকি তিন ম্যাচে হারে এবং নেদারল্যান্ডস, শ্রীলংকা ও পাকিস্তান একটি করে ম্যাচ হারে তাহলে নেট রান রেটের হিসাব ছাড়াই সেমিতে যাবে আফগানিস্তান। মূলত নিউজিল্যান্ডের হ্যাটট্রিক হারে জমে উঠেছে পয়েন্ট টেবিল। সপ্তম রাউন্ডে চলমান বিশ্বকাপ। এখন পর্যন্ত পয়েন্ট টেবিলের অবস্থান অনুযায়ী ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিতে এক পা দিয়ে রেখেছে। রাউন্ড রবিন পর্বের খেলায় দুই দলই সমান ৬টি করে ম্যাচ জিতেছে। তবে টেম্বা বাভুমাদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেছে রোহিদের দল। ভারতের সমান ১২ পয়েন্ট পেলেও, নেট রানরেটে অনেক এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের রানরেট ২.২৯০। বিপরীতে ভারতের নামের পাশে রানরেট ১.৪০৫।
পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখলে রেখেছে নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। দুই দলই পেয়েছে ৮ পয়েন্ট। তাদেরকেই মূলত চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানসহ পয়েন্ট টেবিলের চারের বাইরের দলগুলো। চমকের পর চমক ২০২৩ বিশ্বকাপে দেখিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। ২০১৫ ও ২০১৯-নিজেদের প্রথম দুই বিশ্বকাপে মাত্র ১ ম্যাচ জেতা আফগানরা এরই মধ্যে এবারের বিশ্বকাপে জিতেছে ৩ ম্যাচ। সবশেষ ম্যাচে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আফগানরা ২৪২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল শ্রীলংকা। রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের চতুর্থ বলে ০ রানেই প্রথম উইকেট হারায় আফগানরা। তবু হাশমাতুল্লাহ শাহিদীর দল মোটেও বিচলিত হয়নি। ১০ ওভারে ৫০,২০ ওভারে ১০০; এভাবে ৪৮ ওভারে ম্যাচ জেতার সমীকরণ সাজিয়ে রেখেছিলেন আফগান কোচরা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে থাকে আফগানরা। প্রথম ১০ ওভারে আফগানরা করেছিল ১ উইকেটে ৫০ রান। পরের ১০ ওভারে রানের চাকা কিছুটা ধীর গতির হয়ে আফগানদের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৮৭ রান। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করেছে তারা। দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহ-ইবরাহিম জাদরানের ৯৭ বলে ৯১ রানের জুটি ও তৃতীয় উইকেটে শাহিদী-রহমত শাহের ৬৭ বলে ৫৮ রানের জুটি-এই দুটিতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় আফগানরা। যেভাবে খেলছে রশিদ-নবী-মুজিব-গুরবাজ-শহিদী-রহমতরা, তাতে করে বড় দলগুলোর জন্য বেশ বড়সড় আতংকই তৈরি হয়েছে।
পথরেখা/আসো